286988

কঠোর হলেন ড. কামাল

নিউজডেস্ক।। নির্বাচনের পর সৃষ্ট নানা গুঞ্জন মিথ্যা প্রমাণ করতেই শেষ পর্যন্ত কঠোর হলেন গণফোরাম সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেন। গত বৃহস্পতিবার নিজ দলের নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানকে তিনি তাঁর অফিস কক্ষ থেকে বের করে দিয়েছেন। আজকালের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে পরে তাঁকে বহিষ্কার করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন গণফোরামের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।

এদিকে বিএনপির নির্বাচিত ছয় সংসদ সদস্যের কারো কারো সংসদে যোগদানের আগ্রহ থাকলেও কামাল হোসেনের সর্বশেষ অবস্থানে তা কিছুটা চাপের মুখে পড়ল বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ গণফোরামের দুজনের সংসদে যাওয়ার পথ ধরেই বিএনপির সংসদ সদস্যরাও যেতে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। তাঁদের সেই আগ্রহের সঙ্গেই তৈরি হয়েছে নানা আলোচনা। বিএনপির সংসদে যোগদানের সঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তি নির্ভর করছে বলেও গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে বিএনপির ভেতরে বাইরে। কেউ কেউ এমন গুঞ্জনের সঙ্গে ড. কামাল হোসেনের যোগসূত্র থাকতে পারে বলেও সংশয় প্রকাশ করে। ঐক্যফ্রন্টের কোনো কোনো নেতা অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় এমনও বলেন যে ড. কামাল হোসেন ‘দ্বৈত’ ভূমিকা পালন করছেন।

ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সরকারের সঙ্গে আঁতাত থাকার অভিযোগ তোলেন ২০ দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক ড. অলি আহমেদ। গত ৩০ মার্চ এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে যাঁরা আছেন তাঁদের অনেকে সরকারের কাছ থেকে পয়সা নিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট দলগুলোর সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি ওই ধরনের আলোচনা আরো জোরালো হয় গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোকাব্বির খানের বক্তব্যে। কারণ প্রতিবারই গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, গণফোরাম তথা ড. কামালের অনুমতি নিয়েই তিনি সংসদে যোগদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ড. কামালের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক থাকায় এমন আলোচনা কিছুটা গ্রহণযোগ্যতাও পায় মিত্রদের কাছে। ফলে গণফোরামের দুই সংসদ সদস্যের শপথ নিয়ে দলের ভেতরে বাইরে বেশ চাপে ছিলেন ড. কামাল। তাই দলীয় নেতারা বিষয়টি তাঁর নজরে আনায় মোকাব্বিরের ওপর তিনি ভীষণ ক্ষুব্ধ হন।

গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ড. কামাল হোসেন বা গণফোরাম কেউ সংসদে যাওয়ার পক্ষে নন। কারণ এই নির্বাচনকে আমরা সবাই মিলে প্রত্যাখ্যান করেছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম যেতে হলে ঐক্যফ্রন্টের সবাই আন্দোলনের অংশ হিসেবে একসঙ্গে যাবে। কিন্তু আমাদের এই দুজন খুব খারাপ কাজ করল।’ এক প্রশ্নের জবাবে মন্টু বলেন, ‘ওই দুজনের (সুলতান ও মোকাব্বির) সংসদে যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আড়ালে স্যারকে কেউ কেউ দোষারোপ করত, যা এখন অনেকটাই ক্লিয়ার হয়ে গেছে।’ তিনি জানান, মোকাব্বির খানকে আজকালের মধ্যে কারণ দর্শাও নোটিশ দেওয়া হবে এবং শিগগিরই দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।

গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবারের ঘটনায় স্যারের (কামাল হোসেন) রাজনৈতিক ভূমিকা অনেকটাই স্পষ্ট হয়েছে। সংসদে না যাওয়ার প্রশ্নে তিনি শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। কারণ এর আগে তাঁকে নিয়ে নানা কথা হয়েছে। সবাই মনে করতেন যে হয়তো তাঁর অনুমতি নিয়েই মোকাব্বির সংসদে গেছেন, কিন্তু এটা তো ভুল।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা মোকাব্বির খানকে বলেছিলাম একটু সময় নিতে। যদি যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয় সবাই একসঙ্গে যাওয়া যাবে, এমনটাই বলা হয়েছিল। কিন্তু সে তো আমাদের জিজ্ঞাসা না করে নিজেই দলীয় প্যাড ব্যবহার করে স্পিকারকে চিঠি দিল। একেবারে ধৈর্যহীন!’

তবে মোকাব্বির খান গতকাল শুক্রবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার যা ঘটেছে এগুলো আমি দুই পয়সার মূল্য দেই না।’ তিনি বলেন, ‘ড. কামাল হোসেন সাহেবকে দলের দু-একজন নেতা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রাগিয়েছে।’ বহিষ্কার করার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, ‘যখন বহিষ্কার করবে তখন দেখব।’ এদিকে সংসদে যাওয়া নিয়ে গতকাল পর্যন্ত বিএনপিতে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। সর্বশেষ গত ১৫ মার্চ কারাগারে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। সূত্র মতে, ওই দিনও সংসদ বিষয়ে কোনো আলোচনা ওঠেনি। মূলত খালেদা জিয়ার চিকিৎসা, কারামুক্তি এবং কী প্রক্রিয়ায় আরেকটি নির্বাচনের দাবি জোরালো করা যায় তা নিয়েই আলোচনা হয়।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সংসদে যাওয়া নিয়ে বিএনপির মধ্যে কোনো আলোচনা নেই। কারণ আমরা ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছি।’ তিনি বলেন, ঐক্যফ্রন্টের সিদ্ধান্তের বাইরে সংসদে যোগদানকারীরা বেঈমান। তারা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে বিএনপির যে অবস্থান তাতে সংসদে যোগদান অত্যন্ত কঠিন। কারণ আমরা তো নির্বাচনই মানি না। তা ছাড়া যাওয়ার বিষয়ে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অনুমতি দিলে এত দিনে তা জানা যেত।’ উৎস: কালের কণ্ঠ।

ad

পাঠকের মতামত