৮ বছর পর মায়ের হারানো ছেলের সন্ধান দিলো ফেসবুক
একদিন দুদিন নয়, দীর্ঘ ৮ বছর আগে ছেলেকে হারিয়েছিলেন মা। তাকে খুঁজে পেতে কম চেষ্টা করেননি তিনি। কিন্তু ছেলেকে আর ফিরে পাননি। তাই ছেলেকে ফেরত পাওয়ার সমস্ত আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি ফেসবুকের কল্যাণে ছেলেকে ফিরে পেয়েছেন ওই মা। চলুন তাহলে শুনে নেই সেই ঘটনা। ভারতের হায়দরাবাদ শহর। দিনটি ছিল ২০১১ সালের ২৬ জানুয়ারি। সেদিন কাউকে কিছু না বলে অলক্ষ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলো আট বছরের শিশু দীনেশ জেনা। বড় ভাই দীপকের সঙ্গে ঝগড়ার পর রাগের মাথায় ২ হাজার টাকা নিয়ে বাড়ি ছাড়ে সে।
এরপর তার বাবা এ বিএস সালম ও মা সুসান্না আশেপাশে খোঁজ করে। এমনকি আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতেও ছেলের সন্ধান চালান তারা। পরে না পেয়ে স্থানীয় থানায় একটি নিখোঁজ অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর একে একে কেটে যায় সাড়ে ৭ বছর। ২০১৮ সালের আগস্টে সুসান্না তার বড় ছেলে দীপককে বলেন, ‘ফেসবুকে দীনেশের কোনো ছবি পাস কিনা খুঁজে দেখতো! হয়তো এমনি বলেছিলেন তিনি। ছেলেকে পাবেন এমন কোনো আশা হয়তো ছিলো না তার। কিন্তু মায়ের কথামত খুঁজতে খুঁজতে দীনেশের ছবি পেয়ে যায় তার ভাই। ফেসবুক প্রোফাইলে তার নাম ছিলো ‘দীনেশ জেন লিমা’।
এরপর দীনেশের মা সুসান্না হায়দরাবাদের সাইবার ক্রাইম পুলিশ শরণাপন্ন হন। তদন্তে নেমে পুলিশ দীনেশকে পাঞ্জাব রাজ্যের অমৃতসরের রানকালা গ্রামে সনাক্ত করে। কিন্তু পুলিশ যখন রানকালা এলাকায় গিয়ে দীনেশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, তখন সে ওেই বাড়ি ছাড়তে রাজি হয়নি। সে দাবি করে, আট নয়, সে বাড়ি ছেড়েছিল ১৩ বছর বয়সে। ফলে পুলিশ দ্বন্দ্বে পড়ে যায়। কারণ তার মা বলেছিলেন, দীনেশ আট বছর বয়সে বাড়ি ছেড়েছে।
কিন্তু পরে পুলিশ এ বিষয়ে আরো তদন্ত করে দেখে তার মায়ের কথাই ঠিক। অবশেষে মঙ্গলবার রাতে হায়দরাবাদে নিজের বাড়িতে ফিরে গেছে ১৬ বছরের দীনেশ। এতদিন পর ছেলেকে ফিরে পেয়ে খুব খুশি তার পরিবার। এ সম্পর্কে তার ভাই দীপক বলেন, ‘আমার মা সবসময় দীনেশের জন্য চিন্তা করতেন। অপরাধ বোধে ভুগতাম আমিও। কারণ আমার কারণেই সে বাড়ি ছেড়েছিল। আমরা দু ভাই সেদিন ক্রিকেট খেলছিলাম। দীনেশ খুব জোরে বল করছিল। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে ঝগড়া হয় এবং সে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়।’
বাড়ি ছাড়ার পর সেখানকার এক লজে এক ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ হয় দীনেশের। দু দিন পর ওই লোকের সঙ্গেই অমৃতসর সংলগ্ন রানকালা গ্রামে যায় দীনেশ এবং আশ্রয় নেয় শিখ ধর্মাবলম্বী সুখরাজ সিং’র পরিবারে। সুখরাজের জমিতে দিনমজুর হিসেবেই কাজ করতো দীনেশ। তবে দুই সন্তানের জনক সুখরাজ তাকে নিজের ছেলের মতই আদর করতেন। ২০১৫সালে নিজের আপনজনদের কথা খুব মনে পড়ে দীনেশের। তখন সে তাদের এক নজর দেখতে হায়দরাবাদে গিয়েছিলো। কিন্তু কীভাবে তাদের সঙ্গে দেখা করবে, কী বলবে তাদের, এইসব ভেবে খুব লজ্জা হচ্ছিল তার। তাই দেখা না করেই আবার অমৃতসরে ফেরত আসে দীনেশ।
আর ওদিকে একদিন ছেলে বাড়ি ফিরবে, সে এসে যদি তাদের আর খুঁজে না পায়, এই ভেবে বাসা বদলায়নি দীনেশের বাবা-মা। একই বাড়িতে দীর্ঘ আট বছর ধরে ছেলের অপেক্ষায় বসেছিলেন তারা। আর হারানো ছেলেকে ফেরত পাবার পর খুশি যেন উপচে পড়ছে ওই বাড়িতে। তবে দীনেশের জন্য খুব মন খারাপ সুখরাজের পরিবারের সদস্যদের। তারা একদিনে কমপক্ষে ২০ বার দীনেশকে ফোন করেছে। তাকে একনজর দেখার জন্য হোয়াটস আপেও ভিডিও কল দিয়েছে। তাদের জন্য মন কাঁদে দীনেশেরও। কিন্তু বাবা-মা আর ভাইকে ছেড়ে আর সেখানে ফিরতে চায় না দীনেশ।
‘বাবা-মায়ের কাছে ফিরতে পেরে আমি খুব খুশি। ভাইয়ের সঙ্গে রাগ করে বাড়ি ছেড়েছিলাম। কিন্তু আর কখনো এমন ভুল করতে চাই না। তবে সুখরজের সঙ্গে দেখা করতে আমি একবার পাঞ্জাব যাব। অনেকগুলো বছর তারা আমাকে আশ্রয় দিয়েছে এবং নিজের সন্তানের মত আদর করেছে।’বলছিলেন দীনেশ। সূত্র: এনডিটিভি/ ডেকান ক্রনিকল