286149

সিজার নিয়ে কাজী ইব্রাহিমের বেফাঁস মন্তব্য (ভিডিওসহ)

প্রসূতি মায়েদের সিজার ও চিকিৎসকদের নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করেছেন মুফতি কাজী ইব্রাহীম নামের এক আলেম। মায়েদের সিজার নিয়ে করা সেই অসম্মানজনক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ভিডিওটি নিজের ফেসবুক পেজ থেকেই শেয়ার করেছেন মুফতি কাজী ইব্রাহীম। ভিডিওটি দেখে মনে হয়েছে, একজন মানুষ শিক্ষার আলো ধেকে বঞ্চিত হলে আর তাকে যদি মানুষ চেয়ারে বসায় তবে সে মানুষের জন্য কতটা ভয়াবহ ও ক্ষতিকর হতে পারে। তার কথায় খুব ভালো ভাবেই বোঝা যাচ্ছে তিনি ধর্মান্ধ।

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একটি ওয়াজ মাহফিলে কথা বলছেন তিনি। তিনি বলছেন, মানুষের বাচ্চা হইলে সিজার লাগে, ট্যাবলেট লাগে, আলট্রোসোগ্রাম লাগে।তিনটার বাচ্চা সিজার করার পর আবারো সিজার লাগে।কিন্তু কুকুরের তো একসঙ্গে ৭টা বাচ্চা হয় সিজার লাগে না। একটা ট্যাবলেটও খায় না জীবনে। নারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বাঘ, ভাল্লুক, ঘোড়া, গাধা, সবারই বাচ্চা হয় কারো ট্যাবলেট লাগে না। সিজার লাগে না। তোমারা লাগে কেন্? কী পাপ করছো, তোমার লাগে কেন?

আগের যুগের মায়েরদের কথা উল্লেখ্য করে তিনি বলেন,আগের যুগের মায়েদের ১৫টা বাচ্চা তা গো তো একটা ট্যাবলেটেও লাগে না। এখন একটা বাচ্চা একট হলে গোটা পৃথিবী খবর হয়ে যায়। তিনি বলেন, ডাক্তাররা বিভিন্ন ধরনের ওষুধ দিয়া এমন জটিল করে যে ওষুধ ছাড়া উপায় নাই। ডাক্তাররা বিভিন্ন ধরনের ওষুধ দেয় যেন বাচ্চা এমনিতে ডেলিভারি না হয়। সিজার করাই লাগে।

ডাক্তারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ডাক্তারা চিকিৎসার নামে ব্যবসা করে।সিজার না লাগলেও টাকার জন্য সিজার করে। এইডা তাগো ব্যবসা।তারা ভাবে ডজনে ডজনে নারী সিজার না করলে তার শিক্ষার দাম কী রইলো? তারা জোর করে সিজার করে। কাজী ইব্রাহীম মুফতি বলেন, আমেরিকা, ইউরোপে সিজার নাই। সিজার বন্ধ। কারণ সিজার করা বাচ্চা অসুস্থ থাকে।স্বাভাবিকভাবে জন্ম নেয়া শিশুর বেশি অসুস্থ হয়। উন্নত দেশে সিজার বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের মত নীতিহীন দেশে কেউ স্বীকার করবে না সিজার ক্ষতিকর।

তার নিজের পরিবারে কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার ঘরে ১১টা শিশুর জন্ম হয়েছে। আমি তো একটা ট্যাবলেটও খাওয়াই নাই। সিজার তো দূরে থাক কোনো ডাক্তারও আনি নাই ঘরে। কারণ ডাক্তারি আল্লাহ করবেন। নারীরা যদি পর্দা বা হিজাব মেনে চলে তবে আল্লাহ তাদের রক্ষা করবে। একটা গাভীর বাচ্চা হলে কেউ ধরার জন্য থাকে না।’তিনি বলেন, ‘যেসব মায়েদের আল্লাহর ওপরে আস্থা নাই, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস নাই। তারা সিজার করে। তাদের সব আস্থা আর বিশ্বাস এখন ডাক্তারের ওপরে। এজন্য দুর্গতি হয়েছে। একবারে গণহারে।’

সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ফেসবুকে তার ভাইরাল হওয়া ওই বক্তব্যে চিকিৎসকসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে ডা. শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘উনি গ্রামের সাদাসিদে আভোলা আলেম হলে একটা কথা৷ দেশের বাইরে থেকে পড়ে আসছেন, বড় বড় আসরে যান আর এরকম বক্তব্য দেন। আজব। এই লোক বিদগ্ধ আলেম হিসেবে কিভাবে পরিচয় পেয়েছেন বলে জেনেছি। এই লোক কীভাবে বিদগ্ধ আলেম হন, সেটাই একটা বড় রহস্য। উনি একবার টেস্টোটেস্টেরনকে মাথায় তুলেছিলেন, আরেকবার দেখলাম ইয়েমেন যুদ্ধে বাদশাহ আব্দুল্লাহকে হকের পথে ঘোষণা দিয়ে নিজেও তার সঙ্গে থাকার অঙ্গীকার করলেন, এখানে সিজারিয়ান সেকশানকে পাপের ফল হিসেবে ঘোষণা দিলেন। মানুষের বেদনার প্রতি বিন্দুমাত্র সহানুভূতি নাই, সমস্যা নিয়ে কোনো পড়াশোনা নাই, আজব।’

এ ব্যাপারে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাবিদ্যায় উচ্চতর ডিগ্রিতে অধ্যয়নরত ডা. আহমদ হাবিবুর রহিম বলেন, ‘যে ব্যাপারে তার কোন জ্ঞান নাই সে ব্যাপারে মন্তব্য করাটা মূর্খতা নয় কি? কেউ ব্যাপারটা তাকে বলেছেন? আমি যদি ইসলামের জ্ঞান না থাকলেও ফতোয়া দেয়া শুরু করি উনি আমাকে মূর্খ বলবেন না? তাহলে মেডিকেল সাইন্স সম্পর্কে না জেনে কেন উনি মন্তব্যগুলো করছেন?’

ডা. মাহমুদ শাহ আবরার ফেসবুকে তার মন্তব্যে লেখেন, ‘তাও তো ভালো যারা সিজারিয়ান সেকশন করবে তাদের কুফফার হিসেবে তাকফির করেন। এই সব কাঠামোল্লারাই তো ইসলামকে ডুবাচ্ছে’ ডা. হাসান মামুন নামের একজন তার মন্তব্যে বলেন, ‘এক কথায় মাথা মোটা। উনার সমস্যা হলো কোন প্রকার গবেষণা ছাড়াই উনি কথা বলেন। আর নিজের তথ্যকে সঠিক মনে করেন।’ ডা. ওয়াসিম ফিরোজ বায়জিদ বলেন, ‘কোনদিন কোন কুত্তা-বিলায় ভাল্লুকরে চশমা পরতে দেখলাম না, উনি কেন চশমা পরলেন? কী পাপ করেছেন?’

আসিফ সিবগাত ভুঁইয়া নামের একজন লেখেন, ‘মানুষের বেদনার প্রতি বিন্দুমাত্র সহানুভূতি নাই, সমস্যা নিয়ে কোনো পড়াশোনা নাই, আজব।’ আরিফ উদ্দিন নামের একজন লেখেন, ‘কুকুর বিড়াল এর তো শীত নিবারণ এর জন্য মোটা জ্যাকেট লাগেনা? উনি কেন জ্যাকেট পড়লেন? কী পাপ করছেন? মূর্খতার ও একটা লেভেল থাকে।’

বাঁচ্চা একের পর এক সিজারে নেয়া ঝুঁকিপূর্ন, এখন করনীয় কি ?© মুফতি কাজী ইব্রাহীম

Posted by মুফতি কাজী ইব্রাহীম on Wednesday, 27 March 2019

ad

পাঠকের মতামত