284932

বনানী ট্র্যাজিডি: আগুনে পুড়ে গেছে ৭ শিক্ষার্থীর স্বপ্ন

নিউজ ডেস্ক।। বনানী ট্র্যাজিডিতে পুড়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী মিলিয়ে ৭ শিক্ষার্থীর স্বপ্ন। এরমধ্যে ৩ জন ছাত্রী ও ৪ জন ছাত্র রয়েছেন যাদের স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়েছে বনানীর আগুনে। তারা চলে গেছেন না ফেরার দেশে, রেখে গেছেন ভালোলাগার কিছু স্মৃতি। ওই স্মৃতি ধরেই সারাজীবনের কান্না হয়ে বেঁচে থাকবেন তারা। বনানীতে নিহতদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আছেন দুই শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে তমাল নামে এক শিক্ষার্থী আগুনে পুড়ে ও ইয়াসমিন নামে সাবেক এক শিক্ষার্থী বিল্ডিং থেকে তার বেয়ে নামতে গিয়ে হাত ফসকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। এছাড়া এশিয়ান ইউনিভার্সিটির ছাত্রী মৌলী, উত্তরা ইউনিভার্সিটির ছাত্রী বৃষ্টি, ইষ্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র তুষার, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র আবির ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মিঠু নিহতের ঘটনায় শোকের ছায়া বিরাজ করছে। তাদের অকালে এভাবে চলে যাওয়া কেউ মেনে নিতে পারছেন না।

সারাজীবনের কান্না হয়েই থাকবেন ঢাবি ছাত্র তমাল : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র আব্দুল্লাহ আল ফারুক তমাল সম্প্রতি পাশ করে সংসারের হাল ধরেছিলেন। এর পাশাপাশি তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইভনিং এমবিএ করছিলেন। দুর্ঘটনায় তার স্বপ্নের অপমৃত্যু হয়েছে। সদা হাস্যেজ্জল এই ছেলেটি আর পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফুটাবে না। সারাজীবনের কান্না হয়েই থাকবেন তিনি।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) বনানীতে আগুনে দগ্ধ হওয়ার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয় তমালকে। সেখানে তিনি চিকিৎসারত অবস্থায় মারা যান। তমাল ঢাবির ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ই ইউ আর বিডি সলিউশন-এ সেলস ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন। শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আরিফুর রহমান সর্দার জানান, আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ওই ছাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইভনিং এমবিএ করছিলেন।

তার বেয়ে নামার সময় হাত ফসকে নিহত ইয়াসমিন ঢাবিয়ান : রাজধানী বনানীতে অগ্নিকাণ্ডের বিভীষিকা থেকে বাঁচতে তার বেয়ে নামতে চেয়েছিলেন সাইয়্যেদা আমেনা ইয়াসমিন রাতুল। মাঝপথে হঠাৎ ফসকে পড়ে গেলেন তিনি। মাটিতে পড়ে তিনি ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রী ইয়াসমিনের এমন মৃত্যুর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

চ্যানেল আই’র বার্তা প্রধান জাহিদ নেওয়াজ খান রাতুলকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘জীবনে মৃত্যুই সবচেয়ে বড় সত্য। কিন্তু, এমন মৃত্যু! রাতুলকে আমরা চোখের সামনে মরে যেতে দেখলাম। টেলিভিশনে লাইভ সম্প্রচারে দেখলাম, বনানীর আগুন থেকে বাঁচতে একটি তার (ক্যাবল) ধরে নেমে আসার চেষ্টার সময় একটি এসিতে ধাক্কা খেয়ে রাতুল পড়ে গেল। এরপর রাতুল আর নেই।’

‘ইউটিউবে-ফেসবুকে এ ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেছে। প্যান্ট-শার্ট পরা ছিল বলে আমরা হয়তো তাকে কোনও ভদ্রলোক ভেবেছিলাম। কিন্তু, সেটা ছিল রাতুল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের ব্যাচেই ছিল সে, অন্য ডিপার্টমেন্টে। ডাকসু ক্যাফেটেরিয়াতে সেন্টুদের টেবিলে আড্ডা দিতো, পাশের টেবিলে আমরা। দুই টেবিলের মধ্যে কমন বন্ধুরা ছিল, রেষারেষিও ছিল কখনও কখনও। একবার তো বন্দুক তাক করার ঘটনাও পর্যন্ত ঘটেছিল। সেন্টুদের টেবিলের সেই সেন্টু কয়েক মাস আগে চলে গেল হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে। আজ রাতুল!’

এশিয়ান ইউনিভার্সিটির মৌলী ভালো বিতার্কিক ছিলেন : ভালো বিতার্কিক ছিলেন তানজিলা মৌলি মিথি। তিনি Asian University Debating Club (AUDC) এর সদস্য ছিলেন। নিয়মিত বিতর্ক করতেন। মেধাবী ওই ছাত্রী বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ক্যাম্পাসে তাকে সব ভালো কাজের সঙ্গেই দেখা যেত। তিনি একাধারে Dhaka Women’s Marathon, Bangladesh Youth Leadership Center (BYLC) ও Doridro Charity Foundation এর ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করেছেন। বনানীতে অগ্নিকাণ্ডে তিনি মারা গেছেন। পুড়ে গেছে একটি মেধাবী স্বপ্ন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্রীকে হারিয়ে শোকে মূহ্যমান তার পরিবারের সদস্য থেকে শুরু করে বন্ধু ও সহপাঠীরা।

বনানীতে নিহতদের একজন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র : বনানীতে অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের একজন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। শুক্রবার (২৯ মার্চ) ইফতিয়ার মিঠুর মরদেহ তার নিজ বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চরবানিয়াপাড়া গ্রামে এসে পৌঁছালে শুরু হয় শোকের মাতম। শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েন বাবা মা স্ত্রী পরিবারসহ পুরো গ্রামের মানুষ। স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে এলাকার পরিবেশ।

জানা গেছে, তিন ভাই বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন মিঠু। তিনি কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শেষ করে বনানী এফআর টাওয়ারের ১১তলা ভবনে অবস্থিত একটি গ্লোবাল কোম্পানিতে এ্যাকাউন্টিং অফিসার হিসেবে চাকরি নেন। শুক্রবার বাদ জুমা বাড়ির কাছে বোয়ালদহ ঈদগাহ ময়দানে জানাযা শেষে বোয়ালদহ কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।

সুখের সংসারে কান্না হয়েই থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী বৃষ্টি : জারিন বৃষ্টি। উত্তরা ইউনিভার্সিটির এই ছাত্রীর বিয়ে হয় মাত্র তিন বছর আগে। তিনি ইউনাইডেট ইন্টান্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতেও পড়াশোনা করেছেন। কদিন আগেই স্বামী সাদ নূরের সঙ্গে ম্যারেজ ডে পালন করেছিলেন তিনি। সপ্তাহ না পার হতেই না ফেরার দেশে চলে গেছেন বৃষ্টি। বনানী ট্র্যাজিডির শিকার হয়েছেন বৃষ্টি। স্ত্রীকে হারিয়ে নীরব নিস্তব্ধ স্বামী সাদ নূর। স্ত্রীকে নিয়ে আর তার ঘোরা হবে না। সুখ-দুঃখ শেয়ার করা হবে না। যশোরের ওই ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় উত্তরা ইউনিভার্সিটি ও ইউনাইডেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি পরিবারের পক্ষ থেকে গভীর শোক জাননো হয়েছে। একই সঙ্গে শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়েছে।

এআইইউবির ছাত্র আবিরের মৃত্যুটা অন্যদের চেয়ে হৃদয়বিদারক : আনজির সিদ্দিকী আবির। পাটগ্রাম টিএন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে ভর্তি হন ঢাকার সেন্ট যোশেফ কলেজে। সেখানে থেকে এইচএসসি পাশ করার পর ভর্তি হন আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে (এআইইউবি)। বিবিএ শেষ করে যোগ দেন মিকা সিকিউরিটিজে। তারা এগিয়ে যাওয়ার গল্পটা এপর্যন্তই। মাত্র ২৪ বছর বয়সেই তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। বনানীতে অগ্নিকাণ্ডের সময় ভবনের ভেতরে ছিলেন আবির।

নিহতের চাচা ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তা ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, অগ্নিকাণ্ড শুরুর কিছুক্ষণ আগে আবির ওয়াশরুমে ঢুকেছিল। এসময় অগ্নিকান্ডের সময় সেখানে থাকা ১৯ কর্মীর সকলেই তাড়াহুড়ো করে অফিসের দরজা বন্ধ করে বাইরে বেরিয়ে আসে। ফলে সবার অজান্তেই ওয়াশরুমে থেকে যায় আবির। পরে তিনি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে অফিস ফাঁকা ও দরজাবন্ধ দেখে ফোন করে অফিসের একজনকে। তখন তিনি তাকে দরজা ভেঙ্গে বেরিয়ে উপরের দিকে চলে যেতে বলেন। একা একা দরজা ভাঙতেও সক্ষম হন আবির। এরপর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে, ধোঁয়ার কারণে উপরে যেতে না পেরে নিচের দিকে নামতে থাকেন আবির। শেষ পর্যন্ত ১৩ তলায় এসে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে মারা যান তিনি। শুক্রবার বিকেলে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

বনানীর আগুনে নিহত সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার সাউথইস্টের ছাত্র : রাজধানীর বনানীতে এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে প্রাণ গেল এক ক্রিকেটারের। সম্ভবনাময় ওই ক্রিকেটার রাজধানীর সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিলেন।

জানা গেছে, মাগুরা জেলা দলের হয়ে ক্রিকেট খেলতেন নাম নাহিদুল ইসলাম তুষার। তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স দলের মিডিয়া ম্যানেজার খান নয়ন বৃহস্পতিবার ভবনের অগ্নিকান্ডের ভয়াবহতা ছড়িয়ে পরে মুহূর্তেই। বাঁচার আকুলতায় ২২ তলা ভবনের বিভিন্ন তলা থেকে নিচে লাফিয়েও পড়েন অনেকে। তবে শেষরক্ষা হয়েছে খুব কম লোকেরই। ভেতরে আটকা পড়ে মারা যাওয়ার সংখ্যাই বেশি, নাহিদুলও তাদেরই একজন।

বাবার চাকরি সূত্রে থাকতেন মাগুরায়, স্টেডিয়াম ঘেষেই ছিলো বাসা। মাগুরার হয়ে খেলেছেন জেলা পর্যায়ে, বিভাগীয় পর্যায়ে খেলতেন নিয়মিতই। বাঁহাতি এই পেসার দলে লেফটি তুষার নামে পরিচিত ছিলেন। সতীর্থদের রাখতে হাসি-খুশিতে মাতিয়ে। টাঙ্গাইলে বসবাস তার পরিবারের। ক্রিকেটের পাশাপাশি চাকরি করতেন এফ আর টাওয়ারের এয়ার হেরিটেজ নামক বেসরকারি সংস্থায়। কাল অগ্নিকান্ডের সময় ছিলেন অফিসেই, ফিরেছেন লাশ হয়ে। উৎস: ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম

ad

পাঠকের মতামত