279090

মালয়েশিয়া কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে ‘সোর্সকান্ট্রি’র তালিকা থেকে বাদ বাংলাদেশ!

মালয়েশিয়া কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে ‘সোর্সকান্ট্রি’র তালিকা থেকে বাংলাদেশকে বাদ দিয়েছে। এ কারণে তাদের বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ করতেই হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। সম্প্রতি দেশটির কর্তৃপক্ষ সোর্সকান্ট্রির তালিকা থেকে বাংলাদেশের নাম বাদ দিয়েছে। ফলে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের বিষয়টি আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ খবর নিশ্চিত করেছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।

তবে বিষয়টি নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদ জানিযেছেন, দুই দেশের মধ্যে আলাপ আলোচনা চলছে। আশা করা যাচ্ছে, আলোচনার মাধ্যমে সব সমাধান হবে। শুধু মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারই না যে সব বাজারে সমস্যা রয়েছে-সব বাজারে যাতে বাংলাদেশের কর্মীরা সহজে নিয়োগ পেতে পারেন তার জন্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে। আমি নিজেই মালয়েশিয়ায় যাব। সেখানে যে সমস্যা আছে তা সমাধান হবে আশা করছি।

সূত্র জানিয়েছে, মালয়েশিয়ায় বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে দেশটির কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে। মাহাথির মোহাম্মদ ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথমেই ঘোষণা করেন, বাংলাদেশ থেকে কোন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ করা হবে না। এখন থেকে বাংলাদেশের সব জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান কর্মী নিয়োগ করতে পারবেন।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের আগস্টে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ করতে মালয়েশিয়ার আগের সরকারের স্বাক্ষরিত সব চুক্তি বাতিল করে দেয়। ফলে আগের সরকার ১০ সদস্যের একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ বন্ধ হয়ে গেছে। এটা কার্যকর হবে আগামী ১ সেপ্টেম্বর। এরপর দুই দেশের মধ্যে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে ঠিক করা হয়েছিল কোন পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ করবে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ। পরে এ বিষয়েও আর কোন অগ্রগতি হয়নি। দুই দেশের ‘ওয়ার্কিং কমিটির’ও বৈঠকও হয়নি। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কয়েক দফা মালয়েশিয়া সরকারের কাছে চিঠি দিয়েও ওয়ার্কিং কমিটির বিষয়ে কোন জবাব দেয়নি মালয়েশিয়া।

কর্মী নিয়োগ বন্ধের ঘোষণার পর বিএমইটির ডিজি সেলিম রেজা জানিয়েছিলেন, মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ বন্ধ করেনি। তারা শুধু ‘অনলাইন সিস্টেমটা সাসপেন্ড’ করেছে। ‘ম্যানুয়াল’ পদ্ধতিতে কর্মী নিয়োগ চালু রেখেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। অনলাইনে কর্মী নিয়োগ পদ্ধতি স্থগিত করেছে। চুক্তি স্থগিতের মধ্য দিয়ে বাজারটি সিন্ডিকেট মুক্ত করেছে তারা। পরবর্তী পর্যায়ে বাংলাদেশের সব জনশক্তি রফতানিকারকরা কর্মী পাঠাতে সুযোগ পাবেন। জিটুজি প্লাসের এসপিপিএ সিস্টেম বাতিল করেছে মালয়েশিয়া সরকার। তবে উভয় দেশের উচ্চপর্যায়ে আলোচনায় আসবে নতুন সিদ্ধান্ত। গত ১৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত ‘স্পেশাল কমিটি অন ম্যানেজমেন্ট অব ফরেন ওয়ার্কার্স ইন মালয়েশিয়া’র সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১ সেপ্টেম্বর থেকে এসপিপিএ সিস্টেম বাতিল করা হয়।

সূত্র জানিয়েছে, মালয়েশিয়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, উভয় দেশের সরকারের মধ্যে আলোচনার পর এ বিষয়ে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এসপিপিএ সিস্টেমে অনলাইন পদ্ধতিতে চলমান কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। এতে করে বাংলাদেশের ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে কর্মী আনা বন্ধ হয়ে গেছে। বাংলাদেশের ১০টি এজেন্সি আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নোটিস জারি করেছে মালয়েশিয়া সরকার। দেশটিতে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর শ্রমবাজারে বাংলাদেশের সিন্ডিকেট নিয়ে আলোচনা হয়। পরে গত ১৪ আগস্ট মালয়েশিয়ার মন্ত্রী পরিষদের এক বৈঠকে ১০ এজেন্সির সব কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে।

মালয়েশিয়ার সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাংলাদেশী এক নাগরিক ব্যাপক দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের ১০ এজেন্সিকে নিয়োগ করার সুযোগ দেয়। কর্মী নিয়োগ করে গত দেড় বছরে তারা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এই ঘটনা তদন্তে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র সচিবকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম কুলাসেগারার কাছে প্রতিবেদনে দিতে বলা হয়েছে।

মালয়েশিয়ায় সরকার বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদনপ্রাপ্ত সব রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী পাঠানোর সুযোগ দেয়ার যে ঘোষণা দিয়েছিল সেখান থেকে এখন তারা সরে গেছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ ক্ষমতা গ্রহণের পর যে ঘোষণা দেয় তা ছিল বাংলাদেশ থেকে যে অনুমোদিত এজেন্টরা বিদেশে কর্মী পাঠান-শীঘ্র তাদের সবাইকে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু কর্মীদের আবেদনপত্র প্রক্রিয়াকরণের অনুমোদন দেয়া হবে। এর আগে মাত্র ১০টি এজেন্সির মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর অনুমোদন ছিল। এখন থেকে সবাইকে এই সুযোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে এজেন্সিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান সৃষ্টি হবে। এটা কর্মীদের জন্য ইতিবাচক হবে।

মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগে জিটুজি (গবর্নমেন্ট টু গবর্নমেন্ট) পদ্ধতি চলমান থাকাকালে ২০১৬ সালে বেসরকারীভাবেও কর্মী নিয়োগের সুযোগ রেখে জিটুজি পাস পদ্ধতিতে কর্মী নিয়োগে দুই দেশের সরকার চুক্তি করে। তখন আবেদনপত্রের (এসপিপিএ) মাধ্যমে মালয়েশিয়ার বিদেশী কর্মী নিয়োগের কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা সংস্থা কেবল বাংলাদেশের অনুমোদিত ১০টি এজেন্সিকে কর্মী পাঠানোর সুযোগ দিত। এতে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এক পর্যায়ে মালয়েশিয়া কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দেয়। বাজারটি এখন পর্যন্ত বন্ধই রয়েছে।সুত্রঃ দৈনিক জনকণ্ঠ।

ad

পাঠকের মতামত