279171

নুরকে নিয়ে ফেসবুকে তোলপাড়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের সর্বোচ্চ পদে (ভিপি) জয়ী হয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা নুরুল হক নুর। যদিও নির্বাচনের দিন দুপুর নাগাদ ডাকসুর ভোট বর্জন করেছিলেন তিনি। বর্জন করেও বিজয়ী হন নুুর। তখনই বড় প্রশ্ন দেখা দেয় নুর কি ভিপি হিসেবে দায়িত্ব নেবেন? প্রশ্নটির সরাসরি জবাব তিনি কখনও দেননি। কখনো বলেছেন, শিক্ষার্থীরা চাইলে দায়িত্ব নেব। আবার কখনো পুননির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন।

সর্বশেষ শনিবার প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে গণভবনে যান তিনি। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন নুর। বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে মায়ের প্রতিকৃতি দেখতে পান তিনি। এমনকি নিজেদের ছাত্রলীগের সাবেক নেতা বলে বেশ কয়েকবার দাবিও করেছেন। বলেছেন তার পরিবারও আওয়ামী ঘরানার। ডাকসু পরিচালনায় চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা। মনে হয়েছিল দায়িত্ব নিতেই যাচ্ছেন নুর।

ডাকসু নির্বাচনের দিন থেকে বারবার ভোল পাল্টাতে থাকায় নুরকে নিয়ে মানুষের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। নুরের এসব কাণ্ডে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় বইছে। বাংলাদেশ জার্নালের ফেসবুক পেজেও অনেক পাঠক এ নিয়ে তাদের মতামত জানিয়েছে। তাদের মধ্য থেকে কয়েকজনের মতামত তুলে ধরা হলো।

শাহিন নামে একজন বলছেন- আসিফ নজরুল (ঢাবির শিক্ষক) নুরুর মাঝে বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি দেখতে পায়। নুরু প্রধানমন্ত্রীর মাঝে তার মায়ের প্রতিচ্ছবি দেখতে পায়। আর জনগন এখন নুরুর মাঝে এরশাদের প্রতিচ্ছবি দেখতে পায়।

কাজি আজিজুল ইসলাম লিখেছেন- নুর, তুমি করেছো ভুল তাইতো খেয়েছো গুল!সামীম আহমেদের মতে- প্রতি মুহূর্তে মত বদলানো মানে মানুষ টা সঠিক নয়।আসিফ শাহা লিখেছেন- ভিপি নুর তার নিজের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে।এরশাদের সাথে তুলনা করে জাকির হোসেন লিখেছেন- সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ বয়সের ভারে উল্টাপাল্টা কথা বলে। নুরুল ইসলাম নুরু কিসের ভারে উল্টাপাল্টা কথা বলে? জাতি জানতে চায়!

এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল তার ফেসবুকে লিখেছেন- ‘নুরুল হক নুর, প্রধানমন্ত্রী ডাকলে আপনি অবশ্যই যেতে পারেন, উনাকে আপনার মাতৃসমও মনে হতে পারে। কিন্তু আপনাকে বলতে হবে কেন আপনি উনার কাছে আপনার ও আপনার সঙ্গীদের উপর চালানো বহু নির্মম নির্যাতনের বিচার চাইতে ভুলে গেলেন? আপনার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সঙ্গী রাশেদকে মাত্র তিনদিন আগে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছিল, কেন ভুলে গেলেন প্রধানমন্ত্রীকে এটি বলতে? কেন ব্যার্থ হলেন ডাকসু নির্বাচনে কারচুপির বিষয়টি ঠিকমতো ব্যাখা করতে?

আপনাকে খুব দ্রুত এসব বিষয়ে অবস্থান পরিস্কার করতে হবে। অতীতে সকল অত্যাচারের মুখে অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়া্য়ে আপনার দৃঢ় ভূমিকা দেখে আপনার মধ্যে তরুণ বয়েসী বঙ্গবন্ধুর ছায়া দেখেছিলাম। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মেরুদন্ড কোন শাসকের সামনে বিন্দুমাত্র নুয়ে পড়তো না।আপনার মেরুদন্ড নুয়ে পড়লে আপনাকে তাই আর তরুন বঙ্গবন্ধুর ছায়া মনে হবে না। বরং মনে হবে আপনি নির্ভীক তারুণ্যে বুড়িয়ে যাওয়া একজন সুলতান মনসুর।’

সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক গোলাম মোর্তোজা লিখেছেন- আপনি অন্য যা কিছু বলেছেন-করেছেন,তা নিয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই,আপত্তিও নেই। ভালো মনে করেছেন,বলেছেন। বলতেই পারেন। কিন্তু কিছু বা মূল বিষয় বাদ দিয়ে কথা বললেন। কয়েকটি কথা সেটা নিয়ে।নির্বাচনের দিন ছাত্রীরা যদি হলে হলে প্রতিরোধ না করতেন, সব সংগঠন যদি সম্মিলিত প্রতিবাদ না করত, কোথায় থাকতেন আপনি? রোকেয়া হলের ছাত্রীরা অনশন করছেন, প্রতিবাদ করছেন, আপনার বক্তৃতায় তাদের কথা বললেন না?

শামসুন নাহার হলের ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি প্রধানমন্ত্রীর সামনে বলতে পারলেন, ‘আমার রোকেয়া হলের বোনদের সংকটের মধ্যে বিবেকের তাড়না থেকে একজন ছাত্রী হলের প্রতিনিধি হিসেবে বলতে চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে আর কেউ যেন কোনো মেয়েকে বোরখা পরলে শিবির কিংবা জিন্স পরলে গাঁজাখোর না বলে।’একথা শুনেও আপনার তাদের কথা মনে পড়ল না? সেদিন মাঝ রাতে ছাত্রীদের এই হেনস্থা করার ঘটনা আপনি জানতেন না? রাজু ভাস্কর্যের সামনে যারা অনশন করলেন,তাদের কথা মনে থাকল না?

রাশেদকে গুলি করে হত্যার হুমকি কারা দিল,আপনি জানেন না? রাশেদের মায়ের কথা মনে পড়লো না? নির্বাচন যদি মোটামুটি সুষ্ঠু হতো,রাতে যদি ভোট না হতো, আপনাদের সংগঠনের অনেকের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। বিজয়ী হতে পারতো রাশেদও। বক্তৃতায় নির্বাচনের এই ভয়াবহ অনিয়ম বিষয়ে কী বললেন? বিজয়ী একা হলেও,সবাই মিলেই তো আপনি ছিলেন, নাকি?

‘একা’ সবার চেয়ে কেউ বড় হতে পারে না। আপনি ‘একা’ হয়ে যাচ্ছেন। এক বছর দেখতে দেখতে কেটে যাবে।এতদিন যারা পিটিয়েছে, প্রয়োজন ফুরালে আবারও পেটাবে। এতদিন সঙ্গে সবাইকে পেয়েছেন,তখন কাউকে পাবেন না। বহু নজীর আছে। গণজাগরণ মঞ্চের কথা সবারই তো মনে থাকার কথা।

ad

পাঠকের মতামত