277221

ভাসমান বাজারে বাণিজ্য, চলে আসছে বছরের পর বছর

ফ্লোটিং মার্কেট বা ভাসমান বাজার। যা দেখতে অনেকেই হয়তো মালদ্বীপ ও থাইল্যান্ডে যান, বিভিন্ন কারণে অনেকে আবার সেখানে যেতে না পেরে আফসোসও করেন। তবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলা বরিশাল-পিরোজপুর ও ঝালকাঠির কিছু অংশ নিয়ে বিশাল আকারে বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে ভাসমান বাজারে বাণিজ্য। সারাবছর ধরেই ওইসব অঞ্চলের মানুষ হাট-বাজারে যেমন যান নৌকায় চড়ে, তেমনি তাদের উৎপাদিত ফসল ও পণ্য আনা- নেয়া, ক্রয়-বিক্রয়ও করে থাকেন নৌকায় করে। ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব ভাসমান বাজার দেশের অর্থনীতিতে বেশ ভালোই অবদান রাখছে।

পাশাপাশি বর্তমানে ভাসমান এ হাটকে ঘিরে পর্যটকদের আনাগোনাও বিগত সময়ের চেয়ে অনেকটাই বেড়েছে। তবে ভাসমান এসব হাট-বাজারে কর্মচাঞ্চল্যতা কিংবা প্রাকৃতিক প্রকৃত সৌন্দর্য অনেকটাই বেড়ে যায় বর্ষা মৌসুমে। যেখানে এসে খালের জলে ডিঙি নৌকায় ঘুরে নিজেকে মুহূর্তেই হারিয়ে ফেলতে পারেন অপরিসীম স্বর্গীয় সৌন্দর্যে। ভাসমান বাজার।

ঝালকাঠি জেলার ভিমরুলি হাট মূলত খালের একটি মোহনায় বসে। সারাবছর ধরে প্রতিদিন ধরে চলা এ হাট জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বেশি জমজমাট থাকে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলা এ হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই খালের মধ্যে ডিঙি নৌকা নিয়ে চলাচল করে। একইভাবে পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর, কুড়িয়ানা, জিন্দাকাঠি খালে স্বাভাবিক সময়ে সপ্তাহের নির্ধারিত সময়ে (সোম ও শুক্রবার) হাট বসে। তবে এ হাট ভোর হওয়ার আগে শুরু হয়ে সকাল ৯টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। ভিমরুলি আর আটঘর, কুড়িয়ানা ও জিন্দাকাঠি খালে পেয়ারার মৌসুম ছাড়াও বছরের অন্য সময়ে উৎপাদিত ফসল, যেমন : শাকসবজি, লেবু, মরিচ, কচু, ডাব, মিষ্টি কুমড়া, কলা, আমড়া, করল্লাসহ বিভিন্ন ফসল বিক্রি হয়ে থাকে। যে নব পণ্য পাইকাররা কিনে সড়ক নয়তো নৌপথে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান।

এদিকে শনিবার ও মঙ্গলবার বরিশালের বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদী ঘিরে বসে ধান-চালের ভাসমান হাট। যেখানে দেশীয় মোটাচালসহ নানা জাতের চাল ও ধান পাওয়া যায়। তবে সকাল ৮টার পরে জমজমাট হয় এসব হাট। অপরদিকে নাজিরপুরের বৈঠাকাঠা, উজিরপুরের হারতা, মাহমুদকাঠিসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় বসে সবজির ভাসমান বাজার। যেগুলোর বেশিরভাগই নির্ধারিত দিনে বসে। যেমন নাজিরপুরের বৈঠাকাঠায় শনি ও মঙ্গলবার আর উজিরপুরের হারতায় রোব ও বুধবার বাজার বসে। এসব ভাসমান বাজারে স্থানীয় মানুষজন তাদের উৎপাদিত শাকসবজি নৌকায় করে নিয়ে এসে নৌকাতেই বিক্রি করে থাকেন। এসব জায়গায় যেতে হলে ঢাকা থেকে বরিশাল-ঝালকাঠি সদর কিংবা, বানারীপাড়া-স্বরূপকাঠি উপজেলা সদরে সরাসরি লঞ্চে করে আসতে হবে। তবে বাসযোগেও যাওয়া যাবে এসব জায়গায়। বরিশাল কিংবা ঝালকাঠি থেকে সড়কপথে ভিমরুলি, আটঘর-কুড়িয়ানা যেতে পারবেন। ভাড়ায় চালিতে থ্রি-হুইলার (মাহিন্দ্রা-সিএনজি), মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে।

এছাড়া বরিশালের চৌমাথা থেকে আটঘরে নিয়মিত লেগুনার মতো যান চলাচল করে। একইভাবে বানারীপাড়া ও স্বরূপকাঠি থেকে সড়ক ও নৌপথে ভিমরুলি, আটঘর-কুড়িয়ানা যাওয়া যায়। তবে বরিশাল থেকে সড়কপথেই যেতে হবে। এক্ষেত্রে খালে ঘুরে বেড়াতে কিংবা পেয়ারাসহ বিভিন্ন সবজির বাগানে ঘুরতে হলে হাটগুলো থেকে নৌকা কিংবা ইঞ্জিনচালিত ট্রলার নিয়ে নিতে হবে। অল্প ভাড়ার ঘোরার জন্য এসব যানবাহনও সেখানে পাওয়া যায়। আর বানারীপাড়ায় কিংবা উজিরপুরের হারতার ভাসমান হাট দেখতে হলে বরিশাল থেকে সরাসরি সড়কপথে বাসযোগে যাওয়া যাবে। আর মনে রাখতে হবে গ্রুপ বেঁধে এলে ভ্রমণ পথের খরচ অনেকটাই কমে যাবে। ফেসবুক থেকে

ad

পাঠকের মতামত