274846

শরীরের জন্য ভিটামিন ই কেন এত প্রয়োজনীয়? জেনে নিন কোন-কোন রোগের জন্য বেশি কার্যকরী…

স্বাস্থ্য ডেস্ক।। ভিটামিন ই এমন একটি উপাদান যা আমাদের শরীরের প্রায় সবরকম রোগ বা দুর্বলতা উপশম করতে পারে। হৃদয় জনিত যে কোনো সমস্যা যেমন,ধমনীতে রক্ত চলাচলে বাধা পরা বা উচ্ছ রক্তচাপ। এছাড়া ডায়াবেটিস, এমন কি স্নায়ু জনিত সমস্যা যেমন আলজাইমা ও ডিমেনশিয়া ইত্যাদি উপশমে সাহায্য করে। গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে ভিটামিন ই জরুরি। এতে গর্ভে পালিত শিশুর শারীরিক বিকাশ ত্বরান্বিত হয়। এছাড়া আমাদের ত্বক এবং চুলের ভালো স্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন ই প্রয়োজন।

সাধারণত যেকোনো স্কিন কেয়ার সামগ্ৰিতে ভিটামিন ই থাকে। সাধারণত আমাদের শরীর যখন রোজকার খাবারের পুষ্টি গ্রহন করতে পারেনা তখন এর পরিবর্তে আমাদের ভিটামিন-ই খেতে হয়।ভিটামিন ই তে আলফা, টোকোফেরোল থাকে যা আমাদের শরীরের জন্য উপযোগী।

ভিটামিন ই উৎস : সাধারণত শাকসবজি ,বাদাম,সি-ফুড ,ফল ইত্যাদিতে ভিটামিন ই থাকে। আসুন দেখে নেই এগুলি ঠিক কত পরিমানে ভিটামিন-ই থাকে।

শুকনো ভাজা সূর্য্যমুখী ফুলের বীজ ১ আউন্স আমাদের শরীরে ৭.৪মিলিগ্রাম ভিটামিন ই যোগান দিতে পারে। শুকনো ভাজা হ্যাজেলনাট ১(oz )আমাদের শরীরে ৪.৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই যোগান দিতে পারে। শুকনো বাদাম ১(oz )২.২মিলিগ্রাম ভিটামিন ই যোগান দিতে পারে। সমান ওজনের আলমন্ড বাদাম ৬.৮মিলিগ্রাম ভিটামিন ই যোগান দিতে পারে। সেদ্ধ করা আধ কাপ পালং শাগ ১.৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই যোগান দিতে পারে। আধ কাপ সেদ্ধ করা ব্রকোলি ১.২মিলিগ্রাম ভিটামিন ই যোগান দিতে পারে।
একটি মাঝারি মাপের কিউই ফল ১.১মিলিগ্রাম ভিটামিন ই যোগান দিতে পারে। আধ কাপ আম আমাদের শরীরে ০.৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই যোগান দিতে পারে। একটি মাঝারি মাপের কাঁচা টমেটো আমাদের শরীরে ০.৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই যোগান দিতে পারে। একটি আভোকাডো কাঁচা অবস্থায় আমাদের শরীরে ২.৬৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই যোগান দিতে পারে। আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক আমাদের শরীরে ভিটামিন ই কি কি রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

কোলেস্টেরোলের সমতা বজায় রাখা : আমাদের শরীরে কোলেস্টটেরোল এর সমতা বজায় থাকার ওপর শরীরে হরমোনের সমতা বজায় থাকে। ফলত আমাদের শরীরের বিভিন্ন কোষ এমন কি স্নায়ুগুলি ঠিক মতো কাজ করে। যার ফলে আমাদের শরীর সুস্থ্য থাকে। কিন্তু কোলেস্টেরল এর সমতা বজায় থাকলে অর্থাৎ গুড কোলেস্টেরল কমে গেলে বা ব্যাড কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে শরীরের নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। ভিটামিন ই আমাদের শরীরে এই গুড এবং ব্যাড কোলেস্টেরলের সমতাকে বজায় রাখতে সাহায্য করে।

ত্বকের যত্ন নেওয়া : আমাদের ত্বককে ভালো রাখতে ভিটামিন এ দরকার। এটি আমাদের ত্বকের ক্যাপিলারি ওয়াল এর ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। ফলত তা ত্বকের সতেজতা রক্ষা করে। ভিটামিন ই তে প্রচুর পরিমানে এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে আমাদের ত্বকের জন্য ভালো। অনেক সময় সূর্য্যের ক্ষতিকারক ইউ-ভি রশ্মি আমাদের ত্বকের ক্ষতি করে এর ফলে আমাদের মুখে নানা রকমের ইনফেকশন হতে দেখা যায়। এছাড়া অনিদ্রা, বা অতিরিক্ত পরিশ্রম বা বেশি ধুলো বালির সংস্পর্শে আসার ফলে অনেক সময় আমাদের মুখে বলিরেখা দেখা যায়, ভিটামিন ই এই সমস্ত রকম সমস্যা থেকে আমাদের ত্বককে রক্ষা করে। এছাড়া ভিটামিন ই স্কিন ক্যান্সার এর প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।

চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখা : ভিটামিন ই তে প্রচুর পরিমানে অংশক্সসিডেন্ট থাকায় তা আমাদের চুলের যে কোনো রকম সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম। ধুলো বালি লেগে আমাদের চুল রুক্ষ হয়ে যায়, যার ফলে আমাদের চুল ঝরতে শুরু করে, ভিটামিন ই আমাদের চুলের রুক্ষতা দূর করে আমাদের চুলকে সুন্দর ও নরম রাখতে সাহায্য করে।

দৃষ্টি শক্তিকে ভালো রাখে : বয়স বাড়ার সাথে সাথেই সাধারণত ম্যাকুলার ডিজেনেরেশনের সমস্যা দেখা যায়। যা অন্ধত্বের একটি অন্যতম কারণ। ভিটামিন ই এই রোগের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। ভিটামিন ই আমাদের দৃষ্টি শক্তিকে বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।

আলজাইমা প্রতিরোধ : ভিটামিন ই স্নায়ুকে সতেজ রাখে ফলত স্নায়ু জনিত নানা রোগ যেমন আলজাইমা হওয়ার সমস্যা কমে যায়। এছাড়া ভিটামিন ই ও ভিটামিন সি র সঠিক মাত্রা নানা রোগ হওয়ার সম্ভাবনাকে অনেক মাত্রায় কমিয়ে দেয়।

হরমনের সমতা রক্ষা করা : হরমোনের ক্ষরণের অসমতা আমাদের দেহে নানা রকম সমস্যার সৃষ্টি করে, যেমন দেহের ওজন কমে যাওয়া, ত্বক রুক্ষ হয়ে যাওয়া, ইউরিন ইনফেকশন, চুল পরে যাওয়া। এছাড়া স্নায়ু জনিত নানা সমস্যা ও হরমোনের অসম ক্ষরণের ফলে দেখা দিতে পারে। ভিটামিন ই শরীরে হরমোনের ক্ষরণকে ঠিক মতো চালনা করতে সাহায্য করে শরীরের স্বাভাবিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে।

গর্ভে পালিত শিশুর স্বাস্থ্য বজায় : গর্ভে পালিত শিশুর মস্তিস্ক বিকাশের ক্ষেত্রে ভিটামিন ই প্রয়োজন। এইসময় ভিটামিন ই সরবরাহ কম হলে গর্ভে পালিত শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ঠিক মতো হয় না, জন্মের পর নান রকম স্নায়ু জনিত সমস্যার ভয় দেখা দেয়।

ভ্রূণ : ভিটামিন ই অভাব আমাদের শরীরের পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক, এর এভাবে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কমে যায়। ফলে খুব সহজেই যেকোনো রকম রোগের সংক্রমণ ঘটে। তাই যে সমস্ত খাবারে ভিটামিন ই থাকে সেগুলি বেশি করে খাওয়া উচিত, প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া বাঞ্ছনীয় ।

ad

পাঠকের মতামত