271749

প্রথম ব্যক্তির সংস্পর্শে মাধ্যমে মারা যায় সবাই

ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন ডা. আবু মোহাম্মদ খয়রুল কবির এক সংবাদ সম্মেলনে তথ্য প্রকাশ করেন। ছবি: যুগান্তর
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যুর জন্য নিপা ভাইরাসকে দায়ী করেছেন গবেষকরা। প্রথমে এক ব্যক্তি নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। এর পর তার সংস্পর্শের মাধ্যমে অন্যদের মধ্যে ছড়ায় এ রোগ।সোমবার দুপুর ১২টায় ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন ডা. আবু মোহাম্মদ খয়রুল কবির এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, মৃত ব্যক্তির খেঁজুরের কাঁচা রস পান করার সুনির্দিষ্ট ইতিহাস না পাওয়া গেলেও অন্যান্য মৃত ব্যক্তি প্রথম মৃত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে আক্রান্ত হয়েছিলেন।তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, উপজেলার ভাণ্ডারদহ নয়াবাড়ি গ্রামের এলাকায় গবেষক দলের সরেজমিন তদন্ত এবং রোগের নমুনা পরীক্ষার পর রোববার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) অজ্ঞাত রোগের প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন।

আইইডিসিআর পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়, রোগের কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, মৃত ব্যক্তিদের সবার জ্বর, মাথাব্যথা, বমি ও মস্তিষ্ক ইনফেকশনের (এনসেফালাইটিস) উপসর্গ ছিল। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে থেকে একজনের নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হয় এবং ওই নমুনায় নিপা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়।সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, উপরোক্ত আউটব্রেক ইনভেস্টিগেশনে প্রথম মৃত ব্যক্তির খেঁজুরের কাঁচারস পান করার সুনির্দিষ্ট ইতিহাস না পাওয়া গেলেও অন্যান্য মৃত ব্যক্তি প্রথম মৃত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে আক্রান্ত হয়েছিল বলে আইইডিসিআর ধারণা করছে।

এ ছাড়া জীবিত সন্দেহভাজন রোগীদের রক্তে নিপা ভাইরাসের উপস্থিতি না পেলেও বিভিন্ন সময়ে মৃত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করে তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।নিপা ভাইরাস রোধে আইইডিসিআর সবাইকে খেঁজুরের কাঁচারস পান না করার পরামর্শ দিয়েছে।পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মী ও পরিবারের সদস্যদের নিপা সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা (মাস্ক পরে) আক্রান্ত ব্যক্তিদের সেবাদানের পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন শিশু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. শাহাজাহান নেওয়াজ, মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা. তোজাম্মেল হক, প্রেসক্লাব সভাপতি মনসুর আলী প্রমুখ।

আইইডিসিআর, আইসিডিডিআর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত একটি দল ২৫ ফেব্রুয়ারি মরিচপাড়া গ্রাম ও হাসপাতালগুলোতে তদন্ত চালিয়েছিল। নয়াবাড়ি মরিচপাড়া গ্রামে মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে বাবা-মা ও দুই সন্তানসহ একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছিল। এদের মধ্যে ৯ ফেব্রুয়ারি ফজর আলীর ছেলে তাহের আলী (৫৫) মারা যান। এ ঘটনার ১১ দিন পর ২০ ফেব্রুয়ারি একইভাবে মারা যান জামাতা হাবিবুর রহমান (৩৫) এবং পরের দিন মারা যান তাহের আলীর স্ত্রী হোসনে আরা (৪৫)। এর দুদিন পর ২৪ ফেব্রুয়ারি তার দুই ছেলে ইউসুফ আলী (৩০) ও মেহেদী হাসানও (২৪) মারা যান।

মৃতদের বাড়ি থেকে আশপাশের এক কিলোমিটারে জনসাধারণের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে উপজেলা প্রশাসন। অজ্ঞাত রোগের আতঙ্কে বন্ধ করে দেয়া হয় এলাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

ad

পাঠকের মতামত