271221

লাইফ সাপোর্টে কাদের, সিঙ্গাপুরে নেওয়ার অবস্থা নেই

হৃদরোগে আক্রান্ত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের অবস্থা ‘সঙ্কটজনক’ বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান সৈয়দ আলী আহসান জানিয়েছেন, তার অবস্থা ‘এই ভালো, এই খারাপ’। এই মুহূর্তে সিঙ্গাপুরে নেওয়ার মতো অবস্থায় নেই ওবায়দুল কাদের।সৈয়দ আলী আহসান বলেন, মন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা ‘এই ভালো, এই খারাপ’। ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা না গেলে তার সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে কিছুই বলা যাচ্ছে না। এই মুহূর্তে তাকে সিঙ্গাপুর নেওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই।

তিনি বলেন, ‘ওনার (ওবায়দুল কাদের) তিনটি ব্লকের মধ্যে যেটা প্রধান অর্থাৎ এলইডিতে যে ৯৯ ভাগ প্রব্লেম ছিল শুধু সেটিকে সারিয়েছি। এরপর একটু উন্নতির দিকে গিয়েছিল। কিন্তু সেটা পর্যাপ্ত নয়। বাকি ব্লকগুলোও সারানো দরকার। কিন্তু উনার শারীরিক অবস্থা যা, তাতে বাকি দুটো এই মুহূর্তে সারানো যাবে না। সারাতে গেলে বিপদ ঘটবে। আমরা সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করছি। সব সোর্স আমরা ইউজ করছি।এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ আলী আহসান বলেন, বর্তমানে যেভাবে চিকিৎসা চলছে সেভাবে চালাতে বলেছে মেডিকেল বোর্ড।

হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে রোববার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ওবায়দুল কাদেরকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে এনে করোনারি কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে আওয়ামী লীগ নেতারাও হাসপাতালে ছুটে আসেন।পরে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এক ব্রিফিংয়ে ওবায়দুল কাদেরর সর্বশেষ পরিস্থিতি সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। হানিফ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডাক্তার ও পরিবারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন, পরিস্থিতি মনিটর করছেন। উনি নির্দেশনা দিয়েছেন যেন হাসপাতালে অহেতুক ভিড় করা না হয়।

দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভোরে ফজরের নামাজের পর হঠাৎ করেই কাদেরের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে থাকলে তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে নিয়ে আসেন তার স্ত্রী ইশরাতুন্নেসা কাদের।এদিকে ওবায়দুল কাদেরকে দেখতে এবং তার চিকিৎসার খোঁজ খবর নিতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার বিকাল তিনটার পর প্রধানমন্ত্রী বিএসএমএমইউ’তে যান। তিনি সেখানে কিছু সময় অতিবাহিত করেন এবং ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থার বিষয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত, শিল্পায়ন ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহম্মেদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য এস এম কামাল হোসেন, ইকবাল হোসেন অপু, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, পানি সম্পদ উপ-মন্ত্রী এনামুল হক শামীম, সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, বিএমএ সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল ততক্ষণে হাসপাতালে এসে ওবায়দুল কাদেরের খোঁজ খবর নিয়ে যান।

৭ বছর বয়সী ওবায়দুল কাদের ২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবরে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তার আগে ছয় বছর তিনি দলের সভাপতি মণ্ডলীতে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আড়াই বছর কারাগারে ছিলেন কাদের। সেখান থেকেই তিনি ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। পর পর দুই মেয়াদে তিনি ওই দায়িত্বে ছিলেন।মুক্তিযুদ্ধ চলাকোলে কোম্পানীগঞ্জ থানা মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) অধিনায়ক কাদের প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে। মোট চারবার তিনি নোয়াখালী-৫ আসনের ভোটারদের প্রতিনিধি হিসেবে সংসদে এসেছেন।

১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন পর সরকার গঠন করলে ওবায়দুল কাদেরকে যুব, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন।পরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হেরে গেলে ২০০২ সালের সম্মেলনে দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান ওবায়দুল কাদের।২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ন সরকারের সময়ে জরুরি অবস্থার মধ্যে দেশের বহু রাজনীতিবিদের মত ওবায়দুল কাদেরও গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যান। প্রায় ১৮ মাস কারাগারে কাটানোর পর ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনের দুই মাস আগে তিনি জামিনে মুক্তি পান।

ওই নির্বাচনে জয়ী হয়ে আবার ক্ষমতায় ফেরে আওয়ামী লীগ। প্রথমে তাকে তথ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। সরকারের মেয়াদের মাঝামাঝি সময়ে তাকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করেন প্রধানমন্ত্রী।তখন থেকেই ওই মন্ত্রণালয়ের দেখভাল করছেন ওবায়দুল কাদের। বর্তমানে এ মন্ত্রণালয়ের নাম সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়।

ad

পাঠকের মতামত