243437

যে জন্য নৌকা জিতুক আমি চাই

১৯৭১ সালে রৌমারী-রাজিবপুর ‘মুক্তাঞ্চল’ ছিলো এখন ঐসব দেখার কেউ নেই আমি কোথায় ভোট দেবো? বা আমি কাকে সমর্থন করি? উল্লেখ্য, আমার ভোট কুড়িগ্রামের-২ এ। কুড়িগ্রাম শহর-ফুলবারী-রাজার হাট উপজেলা নিয়ে।আওয়ামী লীগ সেখানে নেয়নি। বিখ্যাত জলিল বিড়ির মালিক ওখানে জাতীয় পার্টি থেকে নমিনেশন পেয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ থেকে গণফোরামে যোগ দিয়েছে। মেজর জেনারেল (অব) আমসা আমিন। সেখানে তিনি লড়ছেন।
এই দুই জনের মধ্যে লড়াই হবে বলে মনে হয়। কিন্তু দুঃখিত। আমি সেখানে কাউকে ভোট দিতে যাচ্ছি না। ঢাকায় সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে নির্বাচনের মাঠে থাকবো।

কিন্তু আমার জন্মস্থান (নানার বাড়ি) কুড়িগ্রাম-৪ এ। চিলমারী-রৌমারী-রাজিবপুর। সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী গণজাগরন মঞ্চের প্রধান নেতা ইমরান এইচ সরকার নির্বাচন করছেন। আমি তাকে প্রকাশ্যেই সমর্থন করছি। সে জিতুক আমি চাইছি।( উল্লেখ করা যেতে পারে। মাঝখানে ব্রহ্মপুত্র নদ আসাম থেকে নেমে এসেছে। একদিকে রৌমারী-রাজিবপর। অন্যধারে চিলমারী। আমার পুরনো বাপ-দাদার বাড়ি ব্রহ্মপুত্র ভেঙ্গে নিয়ে গেছে ১৯৭২ সালে। এরপর আমার চাচা বাড়ি করেন কুড়িগ্রাম শহরে। আমার বাবা বিমান বাহিনী থেকে অবসর গ্রহন করেন ১৯৭৪ সালে। সেই চাচার বাড়িটাই আমার বাড়ি। আমার ভোট সেখানেই।

১৯৭১ সালে রৌমারী-রাজিবপুর ‘মুক্তাঞ্চল’ নামে বিখ্যাত হয়ে আছে। ওটা ১১ নম্বর সেক্টর। ওখানে রৌমারী হাইস্কুলে প্রায় ৭০ হাজার মুক্তি যোদ্ধা ট্রেনিং দিয়েছে। আব্বার বন্ধু এয়ার ফোর্সের সার্জেন্ট মজিবর রহমান অন্যতম প্রশিক্ষক ছিলেন। আজো হাইস্কুলের কাছে ‘চান্দমারি’ বহাল আছে। (প্রশিক্ষণকালে মুক্তিযোদ্ধারা টার্গেট প্রাক্টিস করতো) সেখানে কি হতো এখনকার অধিকাংশ মানুষই জানে না।ওখানে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য (১৯৭০ এর নির্বাচনে জয়ী) পাপু মিয়া সম্পর্কে আমার বড় ভাই। বর্ডারে ( বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে) আমাদের বাড়ি। মানকার চর (সীমান্তের ওপারে আসামের প্রান্তিক এক শহর। তার কিছু উপরে তুরা পাহাড় এলাকা। এখানেই ভারতীয় বাহিনীর কমান্ডাররা ১৯৭১ সালে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ দেয়। আমার কয়েকজন আপন ফুপাতো-মামাতো ভাই। সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে বিভিন্ন অপারেশনে ভূমিকা নেয়।আমার তখন হাফ প্যান্ট পড়া বয়স। আমাকে মুক্তিযুদ্ধে নেয় না কেউ।

তবে আমার নানার বাড়ি রৌমারী সীমান্তে হওয়ায়। সেখানে বিশ্রাম নিয়ে সাড়ে ৩ মাইল হেটে রৌমারী থানা। সেখানে হাইস্কুল মাঠে ট্রেনিং ক্যাম্পে আসতো সবাই। আসাম পার হয়ে এসে আমাদের বাড়িতেই উঠতেন আগে। কর্নেল ওসমানী। মেজর জিয়াউর রহমান। মেজর তাহের। আরো অনেকেই। মেজর তাহের (পরে কর্নেল )১১ নুং সেক্টর কমান্ডার। যিনি কামালপুরের যুদ্ধে পা হারান।পরে উইং কমান্ডার হামিদুল্লাহ ১১ নম্বর সেক্টরের দায়িত্ব নেন। আমি উল্লেখ করতে চাই। এই মুক্তাঞ্চলে ৩ বার পাক বাহিনী হানা দিয়ে ঢুকতে পারে নাই। সেখানে কমান্ডার আলতাফ সুবেদার তার অধিনস্ত মুক্তিযোদ্ধারা সরাসরি যুদ্ধ করে পাকিস্তানী বাহিনীকে হটিয়ে দিয়েছেন। সেখানেই তারামন বিবি রান্না করতে গিয়ে। রাইফেল হাতে যুদ্ধ করে বিখ্যাত হন। কিন্তু এই বিখ্যাত মুক্তাঞ্চল। রৌমারী-রাজিবপুরের কথা সবাই ভুলে গেছেন। )

ফিরে আসি আবার বর্তমান প্রেক্ষাপটে। আমি একটা কারণে আওয়ামী লীগকে পছন্দ করছি। আওয়ামী লীগ তথা ১৪-দল জিতুক আমি তা চাই।আর তা হলো। যুদ্ধাপরাধের ট্রাইবুনাল। ৬ জনের ফাসি হয়েছে। এখনো অনেকেই আপীলে আছেন। বিচার চলছে। আরো কিছুদিন চলতে হবে। আওয়ামী লীগ ছাড়া কেউ করবেনা। এই বিচার প্রক্রিয়া চালাতে। আমার অনেক বন্ধু বিভিন্ন বিবেচনায় বিএনপি, গণফোরাম এবং বাম গণতান্ত্রিক জোট ভুক্ত। সরকারী দলেও আমার অনেকেই আন্তরিক বড় ভাই, বন্ধু। তারা মন্ত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন লেবেলে আছেন। আমি জানি, বিএনপির পক্ষে যুদ্ধাপধের ট্রাইবুনাল চালানো সম্ভব নয়। তাদের ইশতেহারে নেই।

( যদিও মুক্তিযোদ্ধা অনেকেই আছেন বিএনপিতে। তারা আমার বড় ভাই তুল্য। কিন্তু দুঃখের কথা। রাজাকার বিরোধী এই ট্রাইবুনালের প্রতি সমর্থন দিতে পারেন নাই তারা। আমার ‘পঁচিশ বছর পরে’ একটি বই আছে। সেখানে ট্রাইবুনালের কথা জার্নালিষ্টিক্যালি আমি লিখেছি। নতুন আরো এডিশন করতে হবে, আগামীতে।)তবে ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে আছে যুদ্ধাপধের ট্রাইবুনাল চালানোর কথা। সেটা ড. কামাল। আসম রব। মান্না। কাদের সিদ্দিকীর জন্য।আমি দুঃখিত, বিএনপির কোনো দায় নেই। এই ট্রাইবুনালের।সাংবাদিকতার প্রয়োজনে আমি সবার কাছা-কাছি সমানভাবে আছি বটে।তবে আওয়ামী লীগ ও ১৪-দল জিতুক আমি তা চাইবো। থ্যাংক ইউ।

 

ad

পাঠকের মতামত