236784

যে কারণে শিক্ষিতদের চাকরি পাওয়া এখন কঠিন

দেশের শিক্ষিতদের জন্য চাকরি পাওয়াটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। যারা স্বল্প শিক্ষিত তারা হয়তো অনানুষ্ঠিক কাজে চলে যাচ্ছে , কিন্তু শিক্ষিতদের ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা। গত দশ বছরের দেশে পরিমানগত উন্নয়ন হলেও মানুষের বৈষম্য বেড়ে গেছে। এই সময়কালে ব্যক্তি বা গোষ্ঠি স্বার্থের কারণে নিয়মীতিগুলো ছিনতাই হয়ে গেছে। রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার না থাকার কারণে গত দশ বছরে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতাও কমে গেছে।রোববার রাজধানীর ব্র্যাক ইন-এ আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচন’ বিষয়ে এক মিডিয়া ব্রিফিং এ মতামত দেয়া হয়। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ(সিপিডি) এই ব্রিফিং’র আয়োজন করে।

এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, প্রতিষ্ঠানটির সন্মানিত ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। বিভিন্ন প্রশ্লের উত্তর দেন সিপিডি’র সন্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্রাচার্য। অন্যন্যা’র মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড.ফাহমিদা খাতুন, গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও ড. মোহাম্মদ তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ। প্রশ্নউত্তর পর্বে অংশ নিয়ে দেবপ্রিয় ভট্রাচার্য ঋণ খেলাপি প্রসঙ্গে বলেন, যাদের আমরা শৃংখলায় রাখতে চাই, সেই নিয়ম নীতিগুলোকে তারা দখল করে নিয়েছে। সেহেতু সুবিধাজনকভাবে এই সকল নিয়মনীতি পরিস্থিতিভাবে প্রয়োগ হচ্ছে।তিনি বলেন, কিছু কিছু লোক খেলাপি ঋণকে সমন্বয় করতে পারছে। আবার কিছু কিছু লোক যারা প্রকৃতপক্ষে উদ্যোক্তা সে তার খেলাপি ঋণ নিয়ে অসুবিধার ভিতরে বাজার থেকে ওঠে যাচ্ছে। এই সকল নিয়মনীতি সার্বজনিন প্রয়োগ না থেকে ব্যক্তি স্বার্থে বা গোষ্ঠি স্বার্থে প্রয়োগের কারণে এই নিয়মনীতিগুলো এক অর্থে হাইজ্যাকড হয়ে গেছে। এখানে ফিরিয়ে নিয়ে আসাটি প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে আমরা দেখাতে চাই। সেখানে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা থাকলে তা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হতো।

বিশিষ্ট্য এই অর্থনীতিবীদ বলেন, গত দশ বছরে ধারবাহিকভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সময়কালে অর্খনৈতিক স্থিতিশীলতা মূলত রক্ষিত হয়েছে। এই সময়কালে ভৌত অবকাঠামোতে অনেকগুলো বিনিয়োগের ফলে জ্বালানি সংকট যেটা বিদ্যমান ছিল তা অনেকখানি নিরসন হয়েছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে যে ব্যপকতার প্রয়োজন ছিল তারও কিছু বিস্তৃত হয়েছে। এর সাথে সাথে সাথে আমরা দেখেছি যে. সামাজিক সুরক্ষার জন্য যে রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন তারও কিছু কিছু প্রয়োগ হয়েছে। এই সময়কালে বাংলাদেশে সামগ্রিক উন্নয়নে বড় ধরণের অগ্রগতি হয়েছে-এই বিতর্কে আমরা যাব না।

তিনি বলেন, এই সময়কালে তিনটি বৈশিষ্ঠ্য আমরা দেখেছি। এক.এই সরকারের প্রথমভাগের চেয়ে দ্বিতীয় ভাগে, কাঠামোগত সংষ্কার, নীতি পর্যালোচনা এবং অনেক নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমরা শ্লথ হয়ে যাওয়া লক্ষ করেছি। অর্থনৈতিক ব্যবস্থপনার ক্ষেত্রে গুণগত মানের পতন ঘটেছে। প্রথম অংশ হিসেবে দ্বিতীয় অংশে এর প্রবণতা বেশি ছিল। দুই-দ্বিতীয়ভাগে এসে অর্থনৈতিক বৈষম্য, সামাজিক ও বিভিন্ন ধরণের বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈষম্য ধারা ২০১৪-২০১৫ সালের পর থেকে দ্রুততর হয়েছে। তৃতীয়.এই সময়কালে সরকারের নতুন নীতি নিয়ে সামনে এগিয়ে নেয়ার যে উদ্যোগ তারও কিছুটা ঘাটতি লক্ষ্য করেছি।

সময়কালে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা না থাকার কারণে, অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতাও ছিল না উল্লেখ করে দেবপ্রিয় বলেন, যার উদাহরণ বিভিন্ন উদ্যোক্তা শ্রেণির মধ্যে প্রতিযোগির অভাব। এই সময়মধ্যে বৈষম্য রেড়েছে, নীতি উদ্যোগ শ্লথ হয়ে গেছে এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার গুণগতমানের কিছুটা পতন ঘটেছে। এই সময়ে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা ও প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষা দুর্বল হয়ে গেছে। নির্বাচনে জীবন জীবিকার বিষয়টি প্রাধাণ্য পাচ্ছে না। এটা একটি পরিতাপের বিষয়।তিনি বলেন, মূলধারার দলগুলো যখন নির্বাচনী ইসতেহার দেবেন, তখন তাদের একথা বললে চলবে না উনারা কি চান, উনাদের বলতে তা কীভাবে অর্জন করবেন এ কথাটি উনাদের বলতে হবে। এই অর্জন করার ক্ষেত্রে যে সম্পদ লাগবে তা কোথা থেকে আসবে তাও বলতে হবে। অর্থায়নের পদ্ধতি বলতে হবে এবং সেটা অত্যান্ত দক্ষতার সাথে করতে পারবো কীনা তাও বলতে হবে।

তিনি বলেন, গত দশ বছরে সামগ্রিক কল্যাণের পাশাপাশি বিভাজিত বৈষম্য রেড়ে গেছে। উন্নয়ন হয়েছে সামগ্রিকভাবে, কিন্তু বিভাজিতভাবে বৈষম্যও বেড়েছে। এই বৈষম্য শহরের ক্ষেত্রে, গ্রামের ক্ষেত্রে, নারী পুরষ, ধর্মীয় গোষ্ঠির মধ্যে রয়েছে। আগামী দিনে প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রেখে বৈষম্য কমাতে হবে। এই জন্য কর্মংস্থান বৃদ্ধি, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, আয় বৃদ্ধি করতে হবে। বাংলাদেশে শ্রমঘন শিল্পায়ন লাগবে। এবং শ্রমঘন শিল্পায়ন শুধুমাত্র রফতানির ক্ষেত্রে করলে চলবে না দেশের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে শ্রমঘন শিল্পায়ণ করতে হবে।কৃষি পণ্য’র প্রণোদনা দিতে হবে। মান সম্পূর্ণ শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ালেই চলবে না কারণ শিক্ষাখাতে এখন সবচেয়ে বেশি বৈষম্য রয়েছে।

মূল প্রবন্ধে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের দেশ থেকে যে সম্পদ পাচার হচ্ছে তা জিরো টলারেন্স এর আওতাধীন করা উচিত। ব্যাংকিং খাতে গত কয়েক বছরে অনেক ভালো ভালো নীতিমালা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও কেনো দুর্নীতি হচ্ছে। জনগণের টাকা কিভাবে ব্যক্তিখাতে চলে যাচ্ছে তা খতিয়ে দেখতে হবে। এর সমাধান করতে হবে। যারা ঋণখেলাপি হচ্ছেন তাদের বিচারের আওতাধীন করা উচিত। নির্বাচনী ইশতেহারে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা থাকা উচিত। আমাদের বৈদেশিক ঋণ বাড়ছে এটা যেমন ইতিবাচক ঠিক তেমনি ঋণের দায়ভার বেড়ে যাওয়াটা কিন্তু নেতিবাচক।পোশাক খাত নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের রফতানিখাতে বৈচিত্র আনতে হবে। পোশাক শিল্পে একর্ড, অ্যালায়ান্স ও সরকার কাজ করছিলো দক্ষতার সাথে। এখন একর্ড, অ্যালায়ান্স যদি চলে যায় তাহলে রফতানি বাড়াতে হলে সেসব কাজের ভাড় সক্ষমতার সাথে নিতে হবে। কারণ পোশাক শিল্পের সকল কাজই আসছে ক্রেতাদের কাছ থেকে। তাই এসব বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে হবে।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে শ্রম বাজারে শিক্ষিতদের চেয়ে কম শিক্ষিত মানুষের কর্মসংস্থান বেশি হচ্ছে। কারণ দক্ষতা সেই হারে বাড়ছে না। এখন উদ্যোক্তা তৈরি করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে। অন্যদিকে আর্ন্তজাতিক শ্রম বাজারের জন্য আমাদের দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা উচিত। স্বাস্থ্যখাতে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। নতুন নতুন রোগ আসছে সেসব বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।তিনি বলেন, রাজস্বখাতে সংস্কার করতে হবে। রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য সম্পত্তি ও সম্পদের ওপর কর আরোপ করতে হবে। গত ১০ বছরের বাজেটের আকার ৩গুণ বাড়লেও অর্থ ব্যয়ের সক্ষমতার কোনো গুণগত পরিবর্তন হয়নি।

ad

পাঠকের মতামত