
যে ধাতু এখন স্বর্ণের চেয়েও দামি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আবারো স্বর্ণের চেয়েও দামি হয়ে উঠেছে প্যালাডিয়াম। গত বুধবার ২০০২ সালের পর প্রথমবারের মতো প্যালাডিয়ামের দাম স্বর্ণকে ছাড়িয়ে যায়। চার মাসেরও কম সময়ে প্যালাডিয়ামের দাম প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এর বিপরীতে স্বর্ণ বাজারে তেমন একটা উদ্দীপনা তৈরি করতে পারেনি। খবর রয়টার্স ও ব্লুমবার্গ।মূল্যবান ধাতুর বাজারে স্বর্ণের আধিপত্যের ইতিহাস বেশ পুরনো। দুই বছর আগেও স্বর্ণ প্যালাডিয়ামের দ্বিগুণ দামে বিক্রি হয়েছিল। অলঙ্কার হিসেবে ব্যবহার ছাড়াও স্বর্ণ বিনিয়োগ সুরক্ষার মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হয়। চলতি বছর বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সংরক্ষণবাদের উত্থানে বিনিয়োগকারীরা পণ্যটির দিকে ঝুঁকে পড়বেন বলে আশা করা হচ্ছিল। তবে মুদ্রাবাজারে ডলারের অবস্থান শক্তিশালী হওয়ায় কয়েক মাস ধরে স্বর্ণ আউন্সপ্রতি ১ হাজার ২৩৫ ডলারে লেনদেন হচ্ছে।
গত নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ সুদহার অপরিবর্তিত রাখলেও পণ্যটির বাজারের নিষ্প্রভতা বিনিয়োগকারীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে। এর বিপরীতে প্যালাডিয়ামের দাম তরতর করে বাড়ছে।প্যালাডিয়ামের বাজারকে চাঙ্গা করে তুলতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে উচ্চ চাহিদা ও আগ্রহ বৃদ্ধির বিপরীতে স্থায়ী সরবরাহ সংকট। ধাতুটি প্রধানত যানবাহনের দূষণরোধী যন্ত্রাংশ তৈরিতে ব্যবহার হয়। গত বুধবার পণ্যটি লেনদেন হয়েছে আউন্সপ্রতি ১ হাজার ২৬৩ দশমিক ৫৬ ডলারে। গত আগস্টে পণ্যটি ৮৩২ ডলারে লেনদেন হয়েছিল। এদিন প্যালাডিয়াম স্বর্ণের চেয়ে ২৫ ডলার বেশি দামে লেনদেন হয়েছে।
চলতি বছর প্যালাডিয়াম দরবৃদ্ধিতে প্লাটিনামকেও হার মানিয়েছে। উভয় ধাতুই যানবাহনের দূষণরোধী যন্ত্রাংশ তৈরিতে ব্যবহার হয়। তবে এর মধ্যে প্লাটিনাম ডিজেলচালিত গাড়িতেই বেশি ব্যবহার হয়। ২০১৫ সালে ফক্সওয়াগনের কার্বন নিঃসরণ কেলেঙ্কারির পর থেকে ডিজেলচালিত গাড়ির চাহিদা কমে আসায় ধাতুটি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলেছে। এ সুযোগে গত বছর প্যালাডিয়ামের দাম প্লাটিনামকে ছাড়িয়ে যায়।এক বিবৃতিতে মেটাল ফোকাস জানায়, সরবরাহ-চাহিদার পটভূমি প্রধান মূল্যবান ধাতুগুলোর মধ্যে প্যালাডিয়ামকে আলাদা করে তুলেছে। ২০১৮ সালে অটোমোটিভ খাতে পণ্যটির চাহিদা প্রায় ৮৫ লাখ আউন্সে উন্নীত হতে পারে, যা হবে এ-যাবত্কালের সর্বোচ্চ।
বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকাসহ প্রধান উৎপাদন দেশগুলো থেকে পণ্যটির সরবরাহ বাড়ছে না। এর বিপরীতে পণ্যটির চাহিদা বাড়ছে। মূলত পেট্রল ইঞ্জিনের ব্যবহার বাড়তে থাকায় পণ্যটি আরো মূল্যবান হয়ে উঠেছে। হাইব্রিড বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহার বৃদ্ধির প্রত্যাশাও পণ্যটির চাহিদা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। তবে একসময় বৈদ্যুতিক গাড়িরব্যবহার প্লাটিনাম ও প্যালাডিয়াম উভয় ধাতুরই চাহিদা কমিয়ে দিতে পারে।মেটাল ফোকাস আরো জানায়, ২০১৯ সালে প্যালাডিয়ামের ঘাটতি বেড়ে ১৪ লাখ আউন্সে উন্নীত হতে পারে। প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক জুনলু লিয়াং বলেন, ২০১৯ সালে পণ্যটির সরবরাহ স্থির থাকবে। তবে অটোমোটিভ খাতে পণ্যটির চাহিদা বাড়বে।
ব্লমবার্গ ইন্টেলিজেন্সের এক বিশ্লেষক বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কার্বন নিঃসরণ ১৯৯০ সালের লেভেল থেকে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ এবং চীন ২০০৫ সালের লেভেল থেকে ২৬-২৮ শতাংশ কমিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়েছে। বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার প্রচেষ্টার কারণে বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্যালাডিয়ামের ব্যবহারও বাড়বে।