235887

ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে যা থাকছে

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবার নজর ইশতেহারের দিকে। ভোটারদের কাছে টানতে নানা চমক নিয়ে ১৭ ডিসেম্বর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ইশতেহার ঘোষণা করতে যাচ্ছে। ঐক্যফ্রন্টের চমকের মধ্যে রয়েছে বেকার ভাতা চালু, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বসয় বাড়িয়ে ৩৫, অবসরের সময় বাড়িয়ে ৬৫, ডিজিটাল নিরাপত্তা ও জননিরাপত্তা আইন বাতিলের প্রতিশ্রুতিসহ থাকছে অনেক কিছু।ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নির্বাচনকালীন সরকারের বিধান তৈরিসহ এ সংক্রান্ত একটি ধারণা দেয়া হবে ইশতেহারে। তরুণ ও নারী ভোটারদের আকৃষ্ট করতে থাকবে প্রতিশ্রুতি।প্রতিবন্ধী, মুক্তিযোদ্ধাসহ সব কোটা যৌক্তিক হারে সংস্কার, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয়সহ নতুন ধারার রাজনীতি ও সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, কৃষি, পররাষ্ট্রনীতিসহ প্রত্যেক খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষা বাতিল, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চালু, ৩ বছরের মধ্যে সব সরকারি শূন্য পদে নিয়োগ, মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষা দিয়ে বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার পদক্ষেপও থাকবে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ঘোষিত ভিশন-২০৩০ ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা ও ১১ লক্ষ্যের আলোকেই তৈরি হচ্ছে এ ইশতেহার।সূত্র জানায়, ইশতেহারে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও স্বঅবস্থান- এ তিন অঙ্গীকারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে দিয়ে নবধারার রাজনীতি ও সরকার গঠনের অঙ্গীকার থাকবে। গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপরও।ক্ষমতায় গেলে কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে না দেয়া, সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে শত্র“তা নয়- এ নীতির আলোকে জনস্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তাকে সমুন্নত রেখে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি পালন করার প্রতিশ্রুতি থাকবে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আগামীতে জনগণের জন্য আমরা কী কী করতে চাই তা ইশতেহারে তুলে ধরা হবে। এ ব্যাপারে আমাদের নেত্রী ভিশন ২০৩০-এ কিছুটা ইঙ্গিত দিয়েছেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ৭ দফা ও ১১টি লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। সব সমন্বয় করে ইশতেহার তৈরি করা হবে।জানা গেছে, খালেদা জিয়ার ঘোষিত ভিশন-২০৩০-এ ৩৭টি বিষয়ে ২৫৬টি দফা রয়েছে। সেখানে বিষয় ও দফাগুলো সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হয়। ইশতেহারে তা বিস্তারিত তুলে ধরা হবে। কিভাবে এসব বিষয় বাস্তবায়ন করা হবে তার সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা থাকছে এতে।সুশাসন, সুনীতি ও সু-সরকারের (থ্রি-জি) সমন্বয় ও বৃহত্তর জনগণের সম্মিলনের মাধ্যমে ‘ইনক্লুসিভ সোসাইটি’ গড়ার অঙ্গীকার থাকবে ইশতেহারে।

প্রতিহিংসামূলক রাজনীতির বাইরে গিয়ে ক্ষমতার ভারসাম্য ও প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার প্রতিশ্রুতি থাকবে। প্রজাতন্ত্রের সব ক্ষমতার মালিক জনগণ- এ নীতির ভিত্তিতে সরকার পরিচালনায় পদক্ষেপ নেয়া হবে। এ মালিকানা নির্বাচনে পরাজিত দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের জন্যও থাকার বিষয়টি আশ্বস্ত করা হবে।ইশতেহারে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের অঙ্গীকার থাকবে। সমাজের বিশিষ্টজনদের সমন্বয়ে সংসদে উচ্চকক্ষ সৃষ্টি করা হবে। ইশতেহারে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে আইনের শাসনের ওপর।বিচার বিভাগকে পুরোপুরি স্বাধীন করতে নিম্ন আদালতকে সুপ্রিমকোর্টের অধীন করা হবে। বিভাগীয় সদরে হাইকোর্টের বেঞ্চ, মামলা জট কমানোর নানা পদক্ষেপের সঙ্গে উচ্চ আদালতের বার্ষিক ছুটি ৬ সপ্তাহে সীমিত করা, প্রশাসন ও বিচার বিভাগে দলীয়করণের অবসান ঘটিয়ে মেধা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা থাকবে।

অহেতুক মামলা জট কমানোর লক্ষ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ মানহানির মামলা করতে পারবেন না। মতপ্রকাশের অবারিত স্বাধীনতা, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল করা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, রিমান্ডে নির্যাতন পুরোপুরি বন্ধ করার মতো বিষয়গুলো থাকবে। বিশেষ ট্রাইব্যুনালে দুর্নীতির বিচার করা, ন্যায়পাল নিয়োগ, দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তাদের গ্রেফতারে সরকারের অনুমতির বিধান বাতিল করা, শেয়ারবাজারে লুটপাটে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার করার কথাও থাকবে ইশতেহারে।শিক্ষা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি, স্বাস্থ্য খাতে আলাদা পরিকল্পনা থাকবে ইশতেহারে। এর মধ্যে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যা, সব জেলায় একটি করে মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও ৫০০ শয্যার হাসপাতাল, সিসিইউ, আইসিইউ, এনআইসিইউ, কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার, ক্যান্সারের কেমোথেরাপি সেন্টার গড়ে তোলার আশ্বাস থাকবে। ওষুধ ও ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার খরচ কমানোর কথাও রয়েছে।

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার বিচার, পরিবহন নীতি প্রণয়ন, ইন্টারনেট খরচ অর্ধেকে নামিয়ে আনা, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, রোহিঙ্গা সমস্যাসহ অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমাধান করার কথাও থাকবে ইশতেহারে।গার্মেন্ট এলাকায় শ্রমিকদের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ, সংরক্ষিত নারী আসনের প্রথার পরিবর্তে সরাসরি নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক ২০ শতাংশ মনোনয়ন বিধান করে দুই মেয়াদের পর আর সংরক্ষিত আসন না রাখার মতো বিষয়গুলো রয়েছে।কৃষকরা যাতে পণ্যের ন্যায্যমূল্য পান সেজন্য উৎপাদক সমবায় সমিতির মাধ্যমে মূল্য নির্ধারণ করা হবে। প্রয়োজনে কৃষিপণ্য উৎপাদনের জন্য ভর্তুকি দেয়া হবে। যাতে কৃষিতে কর্মসংস্থান বাড়ে এবং পাশের দেশগুলো থেকে কৃষিজাত পণ্যের আমদানি কমে।তরুণ ও নারী ভোটারদের আকৃষ্ট করতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রতিশ্রুতি থাকবে। শুধু ভোটার নয়, দেশের আপামর জনসাধারণের চিন্তাচেতনা ও প্রত্যাশাই তুলে ধরা হবে ইশতেহারে।

ad

পাঠকের মতামত