235493

যেভাবে উদ্ধার হলো সাফায়াত ও সুরায়াত

‘এক সন্তানের মরদেহসহ অন্য সন্তানের গলায় দা ধরে রাজধানীর বাংলামটরে বাসার ভেতরে পাষণ্ড বাবা বসে আছেন। এমন খবরের ভিত্তিতে বাড়ির সামনে অবস্থান নেয় পুলিশ, র‍্যাব ও ফায়ার সার্ভিস। আমরা খবর পেয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘটনাস্থলে আসি। ভেতরে ছোট একটা বাচ্চা ছিল, মসজিদের একজন হুজুর ছিলেন। তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আমরা কোনও ধরনের অ্যাকশনে যাইনি। কারণ এতে ক্যাজুয়ালিটির শঙ্কা ছিল। আমরা ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করছি। বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে জীবিতদের সুস্থভাবে উদ্ধারের চেষ্টা করছি। কাফনে মোড়ানো ছোট ছেলে সাফায়েতের (৩) মরদেহও ও জীবিত সুরাইত (৫) বের করে নিয়ে আসা হয়।’

৬ ঘণ্টাব্যাপী অভিযান শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন (ডিএমপি) পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সাংবাদিকদের ব্রিফ করতে এসে কথাগুলো এভাবেই বলছিলেন।বুধবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর বাংলামোটরে ১৬ লিংক রোডের একটি বাসায় মাদকাসক্ত বাবার হাতে সাফায়েত নামের তিন বছরের এক শিশু খুন হয় বলে অভিযোগ উঠে। খবর পেয়ে প্রায় ৬ ঘণ্টাব্যাপী অভিযান চালিয়ে জিম্মি থাকা আরেক সন্তান সুরায়াতসহ নরুজ্জামান নামের ওই বাবাকে আটক করেছে পুলিশ ও র‌্যাব।ডিসি মারুফ হোসেন বলেন, ‘ভেতরে থাকা সবার নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিই আমরা। ধৈর্য ধরি। হুট করে কিছু করতে যাইনি আমরা। রক্তপাত ছাড়াই কীভাবে কাজ করা যায়, সেভাবে কৌশল করি।

নুরুজ্জামান কাজলকে আমরা শান্তভাবে বলি, বাইরে আপনাদের জন্য মানুষ অপেক্ষা করছে। শিশুটির জানাজার জন্য মসজিদে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। শিশুটির জানাজার কথা বলাতে নুরুজ্জামান কিছুটা শান্ত হন। একপর্যায় দরজা খুলে তিনি বের হন। আগে থেকেই দরজার আশপাশে কিছু পুলিশ সদস্যকে লুকিয়ে রেখেছিলাম। কাজল দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে আটক করে ফেলি। উদ্ধার করি জীবিত শিশু এবং অপর শিশুর লাশ।’শিশুটির স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে নাকি হত্যা করা হয়েছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ডিসি মারুফ হোসেন বলেন, ‘বাসার ভেতরের অবস্থা খুবই খারাপ। বাসার সব আসবাবপত্র ভাঙাচোড়া ও এলোমেলো অবস্থায় দেখা যায়। আর বাচ্চাটা কিভাবে মারা গেল- এটি ময়নাতদন্ত ছাড়া বলা যাবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘যতক্ষণ না এটি নিশ্চিত প্রমাণ পাচ্ছি ততক্ষণ আমরা নরুজ্জামানকে দোষী কিংবা অভিযুক্ত করতে চাই না। আপাতত এটাকে মানবিক দিক হিসেবেই দেখতে চাই। তদন্তের ও আইনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’অভিযানের বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হোসেন ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘ঘরের ভেতরে থাকা মৌলভীকে ম্যানেজ করেন নুরুজ্জামান। মৌলভী নুরুজ্জামানকে জানান, সে তার সন্তানকে নিয়ে বাইরে বের হয়ে আসলে জানাজার সব ব্যবস্থা করা হবে। মৌলভীর সঙ্গে কথা মতো জানাজার ব্যবস্থাও করা হয়। এরপর অপর ছেলে সাফায়াতকে নিয়ে নুরুজ্জামান বের হয়ে আসে। আর ওই মৌলভী মৃত শিশুকে নিয়ে বের হন। এসময় নুরুজ্জামানকে আটক করা হয়।’

অভিযান শুরুর আগে ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক আবদুস সহিদ ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘আমরা বাসার ভেতরে গিয়ে একটা লাশ দেখতে পাই। ওই সময় নুরুজ্জামান আমাদের বলেন, আপনারা সরে যান। তা না হলে এই ছেলেকেও কুপিয়ে মেরে ফেলবো।’নিহত শিশুটির ফুপু রোকেয়া বেগম ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি না আমার ভাই তার ছেলেকে হত্যা করতে পারে। ভাইয়ের ছেলের জন্ডিস হয়েছিল বলে আমরা জানতে পারি। আমার ভাই এমনিতেই নেশাগ্রস্ত ছিল। এ কারণে বাড়িতে তেমন কেউ থাকতে পারত না তার অত্যাচারে। সকালে আমার ভাই ফোন করে বলল সাফায়েত মারা গেছে। তারপর আমরা বাড়িতে এসে দেখি চারপাশে মানুষ আর পুলিশ।’

ad

পাঠকের মতামত