228840

কাঁদতে চান? ভাড়া করুন হ্যান্ডসাম পুরুষ!

কষ্ট বা শোকে সব মানুষ কাঁদে। তবে কান্নকাটির কাজটা মেয়েরাই একটু বেশি করে। তাই বলে চোখেন অশ্রু মোছার জন্য হ্যান্ডসাম পুরুষ খুঁজতে হবে? বিশ্বাস করুন আর না-ই করুর, জাপানে এখন এই রেওয়াজ চালু হয়েছে।সে দেশের মেয়েরা নাকি কান্নার সময় হলেই অনলাইন বা টেলিফোনে সুদর্শন পুরুষদের খুঁজে বেড়ান। এরকম হ্যান্ডসাম ছেলে পেলে তবেই শুরু হয় দুঃখ বিলাস। কারণ, মুক্তোর দানার মত দামি অশ্রু ফোঁটা তো আর যার তার সামনে বের করলে চলবে না।

এর জন্য অবশ্য গাটের টাকাও খরচ হয়। সব মিলিয়ে এক বার কাঁদার খরচ ভারতীয় মুদ্রায় দু’-তিন হাজার রুপি।এ নিয়ে রীতিমতো ব্যবসা ফেঁদে বসেছেন জাপানি এক উদ্যোক্তা। জাপানে অবশ্য আগে থেকেই কান্নার জন্য ফরমায়েশি লোক আনার চল আছে। সেখানে অবস্থাপন্ন পরিবারেরর কেউ মারা গেলে মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ করার জন্য ‘কাঁদুনে-মেয়ে’ ভাড়া করা হয়। এসব কাঁদুনে মেয়েরা শোকের বাড়িতে এসে উথাল পাথাল হয়ে কাঁদে। আর এসবই হয় অর্থের বিনিময়ে।

এবার সেই রীতির সঙ্গে নতুনত্ব যোগ হয়েছে। এখন মেয়েরা কাঁদবেন আর তাদের সান্ত্বনা দেবেন ভাড়ায় আনা হ্যান্ডসাম পুরুষ।কারণ জাপানি মেয়েরা মনে করেন, সুদর্শন পুরুষ চোখের জল মোছালে তবেই না কেঁদে সুখ! নইলে চোখের জলে কাজল মুছে কান্নকাটি করে কী লাভ?জাপানি নারীদের একাংশের ধারণা, কোনো সুদর্শন পুরুষের সামনে কাঁদলে মনের কষ্ট দ্রুত লাঘব হয়।তাই কান্নার সময় মেয়েদের চোখ মুছিয়ে দেয়ার জন্য লোক ভাড়ার ব্যাবসা ফেঁদেছেন হিরোকি তেরাই। মেয়েরা কাঁদলে ঝকঝকে চেহারার সুপুরুষ পৌঁছে যাবে তাদের কাছে। তারা ক্রন্দসী নারীদের সান্ত্বনা দেবে, যত্ন করে চোখের জল মোছাবে। এসব কান্না মোছানো পুরুষদের বাহারি নামও দেয়া হয়েছে, ‘হ্যান্ডসাম উইপিং বয়’। বাংলায় যাদের বলা হয়, ‘সুদর্শন কান্না-বালক’। আর জাপানি পরিভাষায় এই পদ্ধতির নাম ‘রুই-কাৎসু’।

কাঁদতে চাইলে অনলাইনে বুক করতে হবে নিজের নাম ও কাঁদার সময়। ব্যস! এটুকুই যথেষ্ট। এ বার সেই ঠিকানায় পৌঁছে যাবেন সুদর্শন যুবক।এ সম্পর্কে ব্যবসায়ী হিরোকি তেরাই জানান, এই ভাবনার কথা প্রথম মাথায় আসে জাপানি দম্পতিদের ডিভোর্সের সময়ের কথা ভেবে। সেখানে পুরুষরা সপ্তাহব্যাপী নানা কাজে ব্যস্ত থাকায় মেয়েরাই ডিভোর্সের আবেদন করে। তখন সংসার ভেঙে যাওয়ার কষ্ট তাদের দুজনকেই পীড়া দেয়। কিন্তু সে দুঃখ ভুলে থাকার কায়দা দু’জনের দু’রকম। স্বভাবজাত কারণে সাধারণত পুরুষরা সারা দিন নানা প্রমোদ, বিলাসিতা ও ঘুমিয়ে বা পরের সপ্তাহে কাজের পরিকল্পনা করে কাটিয়ে দেন। অন্যদিকে সারাক্ষণ কান্নাকাটি করে কাটান নারীরা।

তা দেখেই এই ব্যবসার কথা মাথায় আসে তেরাইয়ের। তিনি ভেবে দেখেন, এসব শোকার্ত নারীদের সান্তনা দেয়ার জন্য যদি কোনও বিপরীত লিঙ্গের মানুষ থাকেন, তাহলে তারা অনেকটা ভরসা পাবেন। পাশাপাশি কান্নায় সমব্যথী হওয়ার জন্য মনের মতো মানুষ পাবেন, আবার মেয়েদের মনের চাপও কমবে।কিন্তু সুদর্শন পুরুষই কেন? তেরাইয়ের মতে, সামনের মানুষ বদলে গেলে একই ঘটনায় মানুষের আচরণও অনেকটা বদলে যায়।সামনে আকর্ষক কেউ থাকলে মানুষ কোথাও জীবনের প্রতি একটু বেশি আশাবাদী হয়। তাই সুন্দর মুখকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

তেরাই এই অভিনব ব্যবসা শুরু করে ফলও পান হাতেনাতে। অল্প দিনের মধ্যেই তার এই ভাবনার কথা ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে ও বিপুল লাভবান হন তিনি। শুধু তা-ই নয়, তার এই ভাবনাকে মূলধন করে ছবিও বানিয়ে ফেলেছেন দ্যারিয়েল থমস। তার স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি ‘ক্রাইং উইথ দ্য হ্যান্ডসাম ম্যান’-এ তিনি এই তত্ত্বের ব্যাখ্যা ও বিশ্বাসকে তুলে ধরেছেন। থমসের এই ছবি জাপান জুড়ে এমন অভিনব ব্যবসাকে আরও প্রচারের আলোয় এনেছে।সুতরাং জাপানি মেয়েদের কান্নাকাটিতে এখন আর কোনো সমস্যা নেই। কেননা তাদের সামনে রুমাল বা টিস্যু হাতে দণ্ডায়মান সুদর্শন পুরুষ! কাঁদো নারী, কাঁদো। সূত্র: আনন্দবাজার

ad

পাঠকের মতামত