221235

ফুটবল মাঠে উড়বে লাল-সবুজের পতাকা, ভাবতেই গা শিহরে উঠছে!

এক মজার দেশ ক্রোয়েশিয়া। তারা বিশ্বকাপ ফুটবলে পৃথিবীর দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে এবং এটা তাদের জন্য এক বিশাল ব্যাপার।

ভেবেছিলাম দেখব কান্নার রোল বয়ে যাবে তাদের ঘরে ঘরে। কিন্তু অবাক কাণ্ড। উল্টা হয়েছে। আনন্দে তারা মেতে উঠেছে এবং প্রতিটি মুহূর্ত তারা উপভোগ করছে বিজয়ী হিসেবে।

স্প্লিট ক্রোয়েশিয়ার ছোট একটি শহর। রাজধানী জাগরেব থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে সাগরের পাড়ে গড়ে উঠেছে এই শহর।

আমি আমার পরিবারসহ এখানে আছি। এখানে আজ জনতার ভিড় অন্যদিনের তুলনায় অনেক বেশি। কারণ ৫ জন ফুটবল বিশ্ব তারকা তাদের হোম টাউন স্প্লিটে আসছে বিকাল ৫টায়।

চলছে নতুন এক প্রিপারেশন যা না দেখলেই নয়। আমাদের হোস্ট কারমেন। সে এবং তার বন্ধুর ফ্ল্যাটে উঠেছি আমরা।

কারমেন ক্রোশিয়ার মিডিয়াতে কাজ করে বিধায় টাটকা খবরগুলো পাচ্ছি এবং সে তার সঙ্গে আমাদেরকে নিয়ে দেখাচ্ছে এবং বর্ণনা করছে দৈনন্দিনের খবর।

ক্রোয়েশিয়ার ফুটবল ফেডারশনের ওপর এরা বিশেষ করে স্প্লিটের লোকজন খুবই অখুশি। কারণ তাদের কথা হলো ফেডারেশন করাপশনে জড়িত থাকার কারণে আরও কয়েকজন ভাল খেলোয়াড় টিমে আসতে পারেনি।

বিধায় ফাইনাল তাদের মনঃপূত হয়নি। একই সঙ্গে তাদের জাতি বিশ্বের শীর্ষস্থানে বিষয়টি ভাবতে অবাক লাগছে। কীভাবে সম্ভব হতে পারে যখন ম্যানেজমেন্ট করাপটেড?

কিন্তু এটা তাদের ঘরোয়া রাজনীতিও হতে পারে। স্প্লিটের লোকসংখ্যা ২ লাখ ১০ হাজার মাত্র। অথচ ৫ জন ফুটবল তারকা তাদের ন্যাশানাল টিমে জড়িত।

তবুও তারা খুশি নয়। কারণ তাদের দেশের অন্য তারকারা যারা দেশের হয়ে খেলেছে তাদের থেকে ভালো খেলোয়াড় থাকা সত্বেও রাজনৈতিক কারণে তাদের যোগদান করার সুযোগ দেয়া হয়নি।

এদিকে এটাও বলছে এরা যে আগামী ৫০ বছরের মধ্যে তারা কি ফিরে পাবে এ বছরের এই দ্বিতীয় বা স্বপ্নের প্রথম স্থানটি! সব মিলে জাতির মনে বিশাল আনন্দ।

মজার ব্যাপার যা আমাকে বেশি আনন্দ এবং অণুপ্রেরণা দিয়েছে তা হলো তারা যখন বলছে, আমরা ফুটবল ৪ বছর পরপর এক মাস খেলি না বা ঘুমের ঘরে গোল করে পা ভাঙি না বা মারামারি করি না।

তখন ফুটবল আমাদের ধ্যানে, জ্ঞানে, মনে, প্রাণে, স্বপ্নে, জাগরণে প্রতিদিন খেলি এবং খেলব। আজ পরাজিত হয়েছি ফ্রান্সের কাছে ঠিকই কিন্তু “হোম ওয়ার্ক” পেয়েছি তা হলো ফ্রান্স একটি মাল্টিপ্লেক্স নেসান।

কারণ তারা দল গঠন করেছে বিশ্বের অনেক দেশ থেকে অভিবাসন গ্রহণ করা খেলোয়াড় নিয়ে। যেখানে তাদের সংগঠন খুবই পাওয়ারফুল।

ভবিষ্যতে বেশির ভাগ দেশ তাদের কপি করবে। হায়ার করবে বা কিনবে পৃথিবীর সেরা খেলোয়াড়দের বিশ্বের সেরা হওয়ার জন্য, যা আমাদের এখন থেকে ভাবতে হবে কীভাবে আমরা নতুন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করব!

দেশের মধ্যে ইউনিটি থাকতে হবে, দুর্নীতি চলবে না, ভ্রাতৃত্ববোধ গড়তে হবে। ফাইনালে যখন এসেছি তখন চ্যাম্পিয়ান হওয়ার স্বপ্নটা দেখতেই পারি এমন মনোভাব তাদের মাঝে আছে।

ক্রোয়েশিয়ার কথা শুনতে শুনতে মনের অজান্তে আমার ভাবনায় দোলা দিয়েছে লাল-সবুজের পতাকার কথা।

তাই তো ভাবছি মনে মনে যেন চেয়ে আছি পথ চেয়ে সাল সবুজের পতাকা হাতে নিয়ে নতুন প্রজন্মদের নিয়ে সম্ভব কি হবে না- এমন একটি প্রতিযাগিতায় নেমে লড়াই করতে?

খেলাধুলা মন মানসিকতা ভালো রাখে। পরস্পরের ওপর ভক্তি শ্রদ্ধা বাডায়। অসৎ এবং অসুন্দর কাজ থেকে দূরে রাখে। এসব জেনেও কি সম্ভব নয় খেলাধুলার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়া?

আমার এক সপ্তাহের ঘোরাঘুরিতে যা আমি দেখে গেলাম এদের চিন্তাধারা, এদের চেহারা, মার্জিত ব্যবহার সব কিছুই মমতায় ভরা। এদের মডেস্টি ব্যবহার মুগ্ধ করেছে আমাকে।

শ্রীকান্তের কথা মনে পড়ে গেল “মরতে তো একদিন হবেই”! টাকা-পয়সা ঘরদুয়ার এসব তো সবারই আছে।

কম আর বেশি কিন্তু এরকম কতজন আছে পৃথিবীতে যারা কেড়ে নিল মুহূর্তের মধ্যে সারা বিশ্বের ভালোবাসা ক্ষণিকের তরে!

কি জাদু বা ভালোবাসা রয়েছে এই ফুটবল, টেনিস বা ক্রিকেট খেলার মধ্যে? টেনিস যদি এক্সপেনসিভ না হতো তাহলে বলতাম এসো টেনিস খেলি কিন্তু তার সমন্বয় গড়ে তোলা যতটা কঠিন ফুটবল ততটা কঠিন হবে না।

ফুটবলের একটি মাঠে ২২ জন খেলার সুযোগ পায়, টেনিসের জগতে দুজন খেলে। তাই সম্ভাবনাটা ফুটবলের মতো তেমন সহজ নয়। বিধায় বলি “এসো ফুটবল খেলি”।

আমার শিক্ষা হয়েছে “হেয়ার অ্যান্ড নাও কনসেপ্টের মুহূর্তকে” এনজয় বা উপভোগ করা। এরা বলছে, আগামী ৫০ বছরের মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত হবে কি না জানি না।

তাই এ খুশির সময় শুধু উপভোগ করার সময়। মনে পড়ে গেলো “যা নেই তার পিছে দৌড়াতে যা আছে তাও উপভোগ করতে পারলাম না”।

যাই হোক আমার নতুন অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের প্রতি আরো গভীর ভালোবাসা ও স্বপ্নকে শক্ত করে দিল। পুরো চেকোস্লোভাকিয়া ও সোভিয়েত ইউনিয়ন এমন কি চীন, ইন্ডিয়া বা আমেরিকা পারেনি দিতে একটি ফুটবল টিম।

এতে একটি জিনিস পরিষ্কার তা হলো ধনী বা রাজপরিবারে জন্মগ্রহণ করলে বা বেশি লোকের দেশ হলেই সেরা খেলোয়াড় হওয়া যায় না।

কারণ খেলাধুলায় শুধু অর্থ নয়, মোটিভেশন ও ডেডিকেশন থাকা দরকার। সঙ্গে পরাজিত হতে শিখতে হবে নইলে জয়ের মজা বোঝা কঠিন। বাংলাদেশের মানুষ জানে ক্ষুধার কষ্ট কত কঠিন।

তাই যখন তা নিবারণ করে তখন তারা খাবারের তৃপ্তি পায়। আমি বিশ্বাস করি অনেকেই প্রস্তুত যে কোন মূল্যে উৎসর্গ করতে তাদের জীবন খেলাধুলার ওপর।

দেশ ও জাতির কাছে অনুরোধ আসুন একবার চেষ্টা করি লাল-সবুজের পতাকাকে তুলে ধরতে বিশ্বের দরবারে।

স্মরণ করি সেই হাজারো শহীদ ভাইদের কথা যারা দিয়েছিল তাদের জীবন এ বাংলাদেশের জন্য। তাদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছি আমরা।

সেই রক্তের ওপর দুর্নীতি অরাজকতা বা অন্যায় না করে বরং খেলাধুলা করে ভালোবাসার ওপর বেস্ট প্রাকটিস করি।

ফুটবল মাঠে উড়বে লাল-সবুজের পতাকা। সঙ্গে গাইব গান “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি”, ভাবতেই গা শিহরে উঠছে!

রহমান মৃধা, ক্রোয়েশিয়া থেকে সুইডেনে ফেরার পথে। [email protected]

ad

পাঠকের মতামত