213389

শাবানার অভিনয় ছেড়ে দেওয়াটা অপেশাদারি আচরণ হয়েছে : আলমগীর

একুশে টিভির জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘বিহাইন্ড দ্য স্টোরি’। এনামুল হকের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেন ‘মুভিবাজার’খ্যাত সৈকত সালাহউদ্দিন। এখানে প্রতি পর্বে একজন তারকা হাজির হন, অতিথি হিসেবে। তিনি কথা বলেন একটি নির্দিষ্ট বিষয়কে সামনে রেখে। উঠে আসে ব্যক্তি ও পেশাজীবনের সাফল্যের পেছনের নানা গল্প। সম্প্রতি শুটিং সম্পন্ন হয়েছে নতুন পর্বের। সেখানে এবার অতিথি ছিলেন ঢাকাই সিনেমার নন্দিত অভিনেতা আলমগীর।




দীর্ঘদিন পর চলচ্চিত্র নির্মাণে ফিরলেন তিনি। তাই এবারের প্রসঙ্গটাও ছিলো ‘ফেরা’। এখানে বিরতির আগে ও পরের চলচ্চিত্রে পরিবর্তন ও উন্নয়ন নিয়ে কথা বলেছেন এই অভিনেতা। জানিয়েছেন তার নতুন ছবি ‘একটি সিনেমার গল্প’ নির্মাণের পেছনের কাহিনি। সেইসঙ্গে কথা বলেছেন সিনিয়র শিল্পীদের চলচ্চিত্রে অনিয়মতি হওয়ার ব্যাপারেও। একুশে টিভিতে শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টায় প্রচার হবে অনুষ্ঠানটি। গতকাল মঙ্গলবার ৩ এপ্রিল ছিলো অভিনেতা আলমগীরের ৬৯তম জন্মদিন। সেই উপলক্ষে ‘বিহাইন্ড দ্য স্টোরি’ অনুষ্ঠানে আলমগীরের সঙ্গে উপস্থাপকের আড্ডার একাংশ তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য…….

একটা সময় দেখা গেল আপনাদের সময়কার শিল্পীরা হঠাৎ তরেই অনিয়মিত হয়ে গেলেন। কেনো?
হঠাৎ করেই নয়। ধীরে ধীরে হতাশা নিয়ে আমরা কাজ ছেড়েছিলাম। আসলে তখন আত্মমর্যাদা নিয়ে কাজ করতে পারছিলাম না। সিনিয়র হলে ইন্ডাস্ট্রির আচরণটা যেমন হওয়া উচিত তেমন ছিলো না।

সেই ডিসিশন কি ঠিক ছিলো?
হয়তো। কারণ চারপাশে তখন যেসব অনিয়ম আর অপশক্তি ছিলো সিনিয়রদের প্রতিপক্ষ হিসেবে হয়তো তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা যেতো। কিন্তু শক্তিতেই তখন পেরে ওঠা যেতো না বলেই মনে হয়েছিল। যদিও আমি সবসময় অভিনয় কন্টিনিউ করে গেছি। আহামরি কোনো চলচ্চিত্র বা চরিত্র আসেনি। অভিনয়টা নেশার মতো। তাই অভিনয়ের সঙ্গে নিয়মিত থাকতে চেয়েছি।

শাবানার অবসর নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক কথা হয়। তুমুল এই জনপ্রিয় অভিনেত্রীর অবসর নিয়ে কি মূল্যায়ন আপনার?
আমি এককথায় বলবো এটি অশিল্পীসুলভ আচরণ হয়েছে। এই কথা আগেও বলেছি এখনো বলি। কারণ শিল্প চর্চা বা অভিনয় করাটা কোনো চাকরি নয় যে একটা সময় এসে আপনি অবসরে যাবেন। বরং এখানে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বাড়ে। সেটা পরবর্তী জেনারেশনের জন্য রেখে যেতে হয়, ছড়িয়ে দিতে হয়। আমরা সঠিভাবে পারিনি বলেই আজ ইন্ডাস্ট্রির এই অবস্থা। যার তার হাতে নিয়ন্ত্রণ গিয়েছে, মানহীন সিনেমা হয়েছে। দর্শক হতাশ হয়ে হলো ছেড়েছে। হল বন্ধের পথে। নানা বিভাজন, বিভক্তি। একটি ভালো পরিচালনা টিম ছিল না মাঝখানে অনেকটা সময়। হুট করে সিনিয়রদের অনিয়মিত হওয়াই এর মূল কারণ মনে করি আমি। সেখানে শাবানার মতো অভিনেত্রীর অবসর তো মানাই যায় না। শিল্পীর অবসর বলে কিছু নেই। উনি বলতেই পারতেন যে বেছে বেছে কাজ করবো। করাও যেত। তার প্রচুর ভক্ত এখনো তাকে দেখতে হলে আসবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

তিনি কেন সিনেমা থেকে পিছিয়ে গেলেন বলে মনে হয় আপনার?
একটা সময় এমন কিছু পরিচালক ছবি বানাতে এসেছেন যাদের আসলে পরিচালক হওয়ার সময় হয়নি। ভালো পরিচালকদের হঠাৎ শূন্যতা দেখা দিলো। সিনিয়র শিল্পীরা কাজ করতে গিয়ে ভরসা রাখতে পারতেন না। অনেক বড় বড় নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাও শাবানার মতো অভিনেত্রীর বিশেষ গুণ। সেই শাবানা একজন আনকোরা পরিচালকের ছবিতে কাজ করতে গেলে হতাশ হবেন, বিরক্ত হবেন এটাই স্বাভাবিক। শাবানার মতো শিল্পীদের অনিয়মিত হয়ে যাওয়ার কারণ এটা। যখন দেখলাম পরিচালক বাইরে, প্রযোজক এসে শুটিং করাচ্ছেন তখন বোঝা গেলো আমরা খারাপ দিকে যাচ্ছি।

যৌথ প্রযোজনা নিয়ে কথা বলা যাক। আপনিও যৌথ প্রযোজনার ছবি করেছেন ‘আমি সেই মেয়ে’সহ বেশ কিছু। এখন এত বাঁধা-সমস্যা কেন?
আমরা নিয়ম নীতি মানতাম। এখন মানা হয়না বলেই সমালোচনা। ‘স্বপ্নজাল’ও তো যৌথ প্রযোজনার ছবি কেউ তো কিছু বলছে না। নিয়ম ভাঙলে কেউ না কেউ সেটার প্রতিবাদ করবেই। আর প্রতিবাদ হলে তো বাঁধার মুখে পড়তেই হবে। আর যৌথ প্রযোজনার সিনেমার ক্ষেত্রে দেশপ্রেমটাকে মূল্যায়ণ করা উচিত। এখন সেটির নমুনা খুব একটা দেখা যাচ্ছে না।

হোম প্রোডাকশনে বিদেশি শিল্পী নিয়ে কী বলবেন?
এটা নিয়ে আমার আপত্তি নেই। আসলে রাষ্ট্রে প্রচলিত নিয়ম মেনে সবকিছুই করা সম্ভব। আর তুলনা করলে আমরাই ওখানকার হোম প্রোডাকশনে বেশি কাজ করেছি। আমি, রাজ্জাক ভাই, মিজু আহমেদ, ফেরদৌস, রিয়াজ, রোজিনা। এখন জয়া আহসান করছে। শাকিব-আরেফিন শুভও কাজ করছে। ওদেরটা বেশি চোখে লাগছে। শিল্পী হিসেবে আমি কোনো সীমানায় বিশ্বাস করি না। কারণ আমাদের শেখার জায়গা খুব বেশি নেই। তাই এক্সচেঞ্জ হলেই শিল্পীদের অনেক কিছু শেখার সুযোগ হয়। নিজের দেশকে বাইরে তুলে ধরার সুযোগটাও পাওয়া যায়। কিন্তু রাষ্ট্রের কর ফাঁকি দিয়ে বিদেশি শিল্পী এনে কাজ করানোটা অন্যায়। আজকাল সেটা নিয়েই কথা উঠছে।

আপনি জানেন, নানা ইস্যুতে ইন্ডাস্ট্রিতে বিভাজন, দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। সিনেমা নেই, হল নেই। এসবের মধ্যে এই শিল্পের ভবিষ্যৎ কী?
খারাপ সময় শেষ, ভালো সময় ফিরে এসেছে। তবে এফডিসির যে যন্ত্রপাতি আনছে সেগুলো পরিচালনার জন্য দক্ষ লোকবল জরুরি। যাকে যেখানে দরকার তাকে সেখনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

ওপার না আমরা এগিয়ে?
টেকটিক্যালি ওরা এগিয়ে আছে। এর বাইরে বাকি সবই আমাদের আছে এবং অনেক এগিয়ে।

আপনার নতুন করে পরিচালনায় ফেরা নিয়ে বলুন….?
অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম একটা সিনেমা তৈরি করবো। মনের মতো করে একটি গল্প দাঁড় করালাম। এখানে আমাদের আরেফিন শুভ ও কলকাতার ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত অভিনয় করেছেন জুটি হয়ে। ভালো কাজ করেছেন তারা। ছবিটি পছন্দ হবে দর্শকের।

ad

পাঠকের মতামত