213175

কথায় বাড়ে কথা…





নিউজ ডেস্ক।। কথায় আছে, বোবার কোনো শত্রু নেই। তা হলে শত্রুতার ভয়ে কি সবাই কথা বলা বন্ধ করে দেবেন? সমালোচকরা বলছেন, বিনোদন অঙ্গনের মানুষরা যে কিছু দিনের মধ্যে মুখে কুলুপ আঁটবেন- এটা নিশ্চিত। আর এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল থাকতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চোখ রাখলেই চলবে। সেখানে একটু ভিন্নধর্মী কথা বলে সহজেই আপনি নায়ক হতে পারেন, হতে পারেন খলনায়কও। নিজেকে নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে স্বাভাবিকভাবেই অন্যকে খলনায়কে পরিণত করতে হয়। আর অন্যকে খলনায়ক বানানোর এ কাজটাই এখন ভাইরাল!

নারীর পোশাক নিয়ে কথা বলে ‘খলনায়ক’ মোশাররফ করিম : সমাজের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ‘জাগো বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করার আহ্বান জানাতে গিয়ে উল্টো নিজেই সমস্যার মুখোমুখি মোশাররফ করিম। প্রথমবারের মতো জনপ্রিয় এই অভিনেতা কোনো টিভি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করছেন। অনুষ্ঠানটিকে শুধু উপস্থাপনা নয়, নিজের সামাজিক দায়িত্ব মনে করছেন তিনি। তা না হলে নাকি অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করতেন না। অথচ ১৮ মার্চ অনুষ্ঠানটির দ্বিতীয় পর্ব প্রচারের পর তোপের মুখে পড়েন তিনি। অনুষ্ঠানে মোশাররফ করিম বলেন, ‘একটা মেয়ে তার পছন্দমতো পোশাক পরবে না? আচ্ছা পোশাক পরলেই যদি প্রবলেম হয়, তা হলে সাত বছরের মেয়েটির ক্ষেত্রে কী যুক্তি দেব, যে বোরকা পরেছিলেন? কোনো যুক্তি আছে?’ এটি প্রচারের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মোশাররফ করিমকে নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। মুহূর্তের মধ্যে জনপ্রিয় এই অভিনেতা পরিণত হন ‘খলনায়ক’-এ।

এ কারণে তিনি দুঃখ প্রকাশও করেছেন। নিজের ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দিয়ে মোশাররফ করিম লিখেছেন, ‘চ্যানেল টুয়েন্টি ফোরে আমার উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানের একটি অংশে আমার কথায় অনেকে আহত হয়েছেন। আমি অত্যন্ত দুঃখিত। আমি যা বলতে চেয়েছি, তা হয়তো পরিষ্কার হয়নি। আমি পোশাকের শালীনতায় বিশ্বাসী এবং তার প্রয়োজন আছে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা আমার অভিপ্রায় না। এ ভুল অনিচ্ছাকৃত। আমি দুঃখিত। দয়া করে সবাই ক্ষমা করবেন।’ দুঃখ প্রকাশ করার বিষয়টি ভক্তদের কাছে পরিষ্কার করে তিনি বলেন, ‘আমি সবাইকে বলব, আগে পুরো অনুষ্ঠান দেখুন। যারা সমালোচনা করছেন, তারা হয়তো পুরো অনুষ্ঠানটি দেখেননি। পুরো বক্তব্য না বুঝেই দোষারোপ করছেন।’




প্রশ্নের মুখে জয়ের ‘সেন্স অব হিউমার’ : রম্য ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘সেন্স অব হিউমার’-এর জন্য একই সঙ্গে আলোচিত এবং সমালোচিত হয়েছেন এর সঞ্চালক শাহরিয়ার নাজিম জয়। অনুষ্ঠানটি যেহেতু রম্য, তাই এখানে অনেক কথাই বলা হয়। চাতুর্যের মাধ্যমে তারকাদের হাঁড়ির খবর বের করা হয়। তবে তার বিরুদ্ধে ‘পাকনামী কথাবার্তা’ বলা অভিযোগ তুলেন মিডিয়ারই আরেক জনপ্রিয় অভিনেতা ওমর সানী। ফেসবুকে দেওয়া একটি স্ট্যাটাসে জয়কে ছোটভাই সম্বোধন করে ওমর সানী বলেন, ‘ওকে মিডিয়াতে গাইড করার জন্য মৌসুমী ও গাজী সাহেবের অবদান অনেক। ইদানীং তাকে বেশি পাকনামী কথাবার্তা বলতে দেখা যাচ্ছে। সে সিনিয়র শিল্পীদের নিয়ে অতি রঞ্জিত পাকনামী কথাবার্তা বলছে, যা দৃষ্টিকটু।’ জয়কে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ারও আহ্বান জানান ওমর সানী। তবে জয় বলেছেন, ‘সানী ভাই দুবার আমার এ অনুষ্ঠানে এসেছেন। তিনি আমার অনুষ্ঠান পরিকল্পনা-সঞ্চালনার ভূয়সী প্রশংসা করেন। এখন হয়তো তিনি কারো মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে আমাকে কথাগুলো বলেছেন। তাই এ নিয়ে আমি খুব একটা ভাবছি না।’ তার পরও ওমর সানীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন তিনি। জয় বলেছেন, ‘আমি সানী (ওমর সানী) ভাইকে শ্রদ্ধা করি। আপনি আমার খুবই প্রিয় আর ভালোবাসার মানুষ। সানী ভাই আপনি যদি আমার কোনো আচরণে কষ্ট পেয়ে থাকেন- তা হলে ক্ষমা করে দেবেন।’

প্রসঙ্গ ধর্ষণ : তোপের মুখে মিশা-পূর্ণিমা : বেসরকারি টেলিভিশন আরটিভিতে প্রচারিত ‘এবং পূর্ণিমা’ অনুষ্ঠানে খলনায়ক মিশা সওদাগর ও চিত্রনায়িকা পূর্ণিমার প্রশ্ন-উত্তর পর্ব নিয়ে সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ২৪ মার্চ প্রচারিত অনুষ্ঠানে সঞ্চালক পূর্ণিমা অতিথি মিশা সওদাগরের কাছে জানতে চান, ‘আপনি সিনেমাতে কতবার ধর্ষণ করেছেন? কার সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন ধর্ষণের সিন করতে?’ উত্তরে মিশা জানান, ধর্ষণের অনেক দৃশ্য তাকে করতে হয়েছে। এমনকি এ দৃশ্য করতে যে নায়িকাদের সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, তাদের দু-একজনের নামও উল্লেখ করেন মিশা। এর পরই তাদের কথোপকথনের এ অংশটির ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

শুরু হয় বিতর্ক। ঠিক একই বিষয়ে ২০১৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বলিউডের জাঁদরেল ভিলেন প্রেম চোপড়া কথা বলেছিলেন বাংলাদেশের একটি স্বনামধন্য অনলাইনে। সেখানে এই বর্ষীয়ান অভিনেতা বলেন, ‘ফিল্মে আমাকে দেখে মনে হয়, আমি খুবই নিষ্ঠুর। কিন্তু বাস্তবে আমার সঙ্গে অভিনেত্রীদের খুবই ভালো সম্পর্ক। অনেকেই জানতে চান, ধর্ষণের দৃশ্যের সময় আমার কী অনুভূতি হয়। এ ধরনের দৃশ্যে কাজ করার সময় আমি খুব পেশাদার থাকি। আর আমি শুধু ভাবতাম, এটা অভিনয়, এর প্রভাব যেন আমার ব্যক্তিগত জীবনের ওপর না পড়ে।’ জনপ্রিয় এই খলনায়ক আরও বলেন, ‘আগে ধর্ষণের দৃশ্য নিয়ে ছবির নায়িকারা খুব নাটক করতেন। বড় বড় অভিনেত্রীরা আমার সঙ্গে ধর্ষণের দৃশ্য করেছেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তারাও পেশাদার থাকতেন। আর খুব তাড়াতাড়ি এ ধরনের দৃশ্যের শুট শেষ করতেন।’




বিষয়টা টেনে আনার কারণ, ধর্ষণের দৃশ্য কারো মনোরঞ্জেনের জন্য করা হয় না।
এটা যে একটা অন্যায়, সেটা প্রমাণ করার জন্যই চলচ্চিত্রে এ দৃশ্য থাকে। স্বাভাবিকভাবেই এতে অভিনয় করেন চলচ্চিত্রের খলনায়ক আর নায়িকা। অথচ সিনেমার এ অংশটি নিয়ে কথা বলে বাস্তবে ‘খলনায়ক’ হয়ে গেলেন মিশা ও পূর্ণিমা।
এ বিষয়ে মিশা বলেন, ‘শিল্পীরা চান বিনোদন দিতে। এটা ছিল একটা মজার শো। একটা কথা মনে রাখতে হবে, কোনো স্বার্থসিদ্ধির জন্য শিল্পীরা কাজ করেন না। তারা রাজনীতি বোঝেন না। তারা মিথ্যা বলেন না। তারা আবেগ দিয়ে চলেন। আর এ অনুষ্ঠান তো এডিট হয়ে তার পর প্রচার হয়েছে। আমাদের অনেক কথাই কেটে ফেলা হয় রেকর্ডেড অনুষ্ঠানে। তাদের (অনুষ্ঠান কর্তৃপক্ষ) উচিত ছিল আরও সাবধান হওয়া।’ অন্যদিকে দুঃখ প্রকাশ করে পূর্ণিমা বলেন, ‘সাধারণ মানুষ হয়তো এতকিছু বুঝতে চাইবেন না।

তাদের ভাববারও সময় নেই। সত্যি কথাটা হলো আমরা আসলে অনেক কিছুই সহজভাবে নিতে পারি না। একটু শুনেই ঝাঁপিয়ে পড়ি। বোঝার চেষ্টা করি না, এটা একটা ফান শো। চলচ্চিত্রের দুজন মানুষের আড্ডা। তার পরও এই অনুষ্ঠান দেখে আমার কথায় যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন, সেটার জন্য সত্যি সত্যি আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’
যাক এসব কথা। কারণ কথা বললেই কথা বাড়ে। যেহেতু মোশাররফ করিম, মিশা সওদাগর, পূর্ণিমা ও জয় দুঃখ প্রকাশ করেছেন, তাই এটা নিয়ে আর কথা না বলাই উত্তম বলে মনে করছেন এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। কারণ কথায় কথা বাড়ে। উৎস: দৈনিক আমাদের সময়।

ad

পাঠকের মতামত