207391

হুইল চেয়ারে ঘুরে স্বামী-সন্তানকে খুঁজছেন প্রিয়কের স্ত্রী

স্বামী আর সন্তানের খোঁজে চিকিৎসকের সহযোগিতায় হুইল চেয়ারে করে হাসপাতালের বারান্দায় ঘুরছেন কাঠমান্ডু ট্রাজেডিতে নিহত আলোকচিত্রী এফএই প্রিয়কের স্ত্রী আলমুন নাহার অ্যানী। এখনও প্রিয়জনের মৃত্যুর কথা জানেন না তিনি।

বুধবার কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, মাত্র তিন-চার সেকেন্ডের ভয়ঙ্কর সেই দৃশ্যের স্মৃতি মনে পড়তেই শিউরে উঠছেন আহত অ্যানী। হাসপাতালের বেডে শুয়ে তিনি ছটফট করছেন আর সন্তানকে বুকে এনে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছেন ডাক্তার নার্সদের।

স্বামী আর একমাত্র কন্যাকে হারিয়ে আহত অ্যানী মানসিকভাবে বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছেন। আনমনে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকছেন আর গাল গড়িয়ে অশ্রু ঝরছে। এক পর্যায়ে অ্যানী ডাক্তার ও নার্সকে অনুরোধ করে তাকে হাসপাতালের বাইরে একটু ঘুরিয়ে আনার জন্য করছেন। স্বামী আর কন্যাকে খোঁজার জন্য তিনি বাইরে বের হতে চান। তার অনুরোধেই বেলা দু’টার দিকে একজন চিকিৎসক ও নার্স হুইল চেয়ারে করে অ্যানীকে হাসপাতালের অষ্টম তলার বারান্দায় কিছু সময় ঘুরিয়ে আনেন। এ সময় অ্যানী বারবার ডাক্তারের কাছে তাকে কিছু সময় একা থাকার সুযোগ করে দেওয়ার অনুরোধ করেন। মাঝে মাঝে আবার বলে উঠেন, ‘আমার বাবুরে এনে দেন। ও একা থাকতে পারবে না। আমার প্রিয়ক কোথায়!’

অ্যানীর বেডের পাশেই অন্য একটি বেডে শুয়ে অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন দুর্ঘটনায় আহত মেহেদী হাসান মাসুম।

সমকালকে তিনি বলেন, তিন বছরের শিশুকন্যাকে নিয়ে বাঁচতে গিয়ে প্রাণ হারালেন এফএইচ প্রিয়ক। ইচ্ছে করলে প্রিয়ক একা বিমান থেকে লাফিয়ে বাইরে বের হয়ে আসতে পারতেন। কিন্তু চোখের সামনে কন্যার এমন মৃত্যু সইতে পারবেন না জেনেই হয়তো তাকে কোলে নিয়ে বের হতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন।

তিনি বলেন, মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধান। তার স্ত্রী স্বর্ণা আর প্রিয়কের স্ত্রী অ্যানীকে নিয়ে দ্রুত তিনি বের হয়ে এসে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান।

প্রিয়কের স্বজন সোহানুর রহমান সোহান বলেন, অ্যানী ভাবীকে এখনও বলতে পারিনি তার স্বামী আর সন্তান নেই! কিন্তু হয়তো বুঝে গেছেন তার আদরের তামাররা ও স্বামী প্রিয়ক বেঁচে নেই। মাঝে মাঝে অ্যানী এলোমেলো কথা বলছেন হাসপাতালের বেডে শুয়ে।

উল্লেখ্য, ক্যামেরায় ছবি বন্দি শখ ছিল প্রিয়কের, স্কুল জীবন থেকেই। একাধিক পুরস্কারও পেয়েছিলেন তিনি এতে। মস্ত বড় ফটোগ্রাফার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়েও যাচ্ছিলেন দুর্বার গতিতে। কিন্তু সেই স্বপ্ন-গতি থেমে গেল, সত্যি হলো না আর। গত সোমবার নেপালের কাঠমান্ডুতে ইউএস বাংলার বিমান বিধ্বস্ত হয়ে মেয়েসহ প্রাণ হারিয়েছেন তিনি। এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও ৪৯ জন।

প্রিয়কের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে প্রিয়ক বিয়ে করেন। গত ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ কন্যা সন্তানের বাবা হন তিনি। নাম রাখা হয় তামারা প্রিয়ন্ময়ী। সন্তান জন্মের পর থেকেই প্রিয়কের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন চলে আসে। সারাক্ষণ যেখানেই থাকুন না কেন দিনে কয়েকবার মেয়ের সাথে ফোনে কথা বলতেনই।

ad

পাঠকের মতামত