
মৃত বোনের পাশে বসে মুড়ি খাচ্ছেন তিনি!
প্রতিবেশী একজন মুড়ি-চিনি নিয়ে কলিং বেল চাপতেই দরজা খুলে দেন ৪৫ বছর বয়স্ক একজন নারী। এরপর তিনি ফিসফিস করে বলেন, তার বোন সকাল থেকে কথা বলছে না। এমনকি নড়াচড়াও বন্ধ!
এমন কথা শোনার পরে সীমা তিওয়ারি নামে ওই প্রতিবেশী এক রকম বিপাকে পড়ে যান। পরে ওই প্রতিবেশী আবাসিক সমিতিতে খবর দেন তাদের সংবাদের ভিত্তিতেই ওই বাড়িতে আসে পুলিশ।
সীমা তিওয়ারিকে সাথে নিয়েই পুলিশ ৪ তলার ফ্ল্যাটে যায়। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, শোবয়ার ঘরের খাটে পড়ে রয়েছে নিথর দেহ। সেই ঘরের এক পাশে বসেই কয়েক ঘণ্টা আগে দিয়ে যাওয়া মুড়ি খাচ্ছেন মৃতের বড় বোন।
পুলিশ জানান, মৃত ওই নারীর নাম পুতুল বসাক (৩৮)। প্রাথমিক তদন্ত শেষে পুলিশের ধারণা, অপুষ্টিজনিত
কারণে গত শনিবার গভীর রাতে অথবা রবিবার ভোরে পুতুল নামের ওই নারী মারা গেছেন।
এ ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের কলকাতার লালবাজারে।
জানা গেছে, রেখা, পুতুল ও তাদের আরো এক বোন বাবার সঙ্গে ওই বাসায় থাকতেন।
তাদের বাবা একজন সরকারি কর্মচারী ছিলেন। ১৫ বছর আগে তাদের বাবা মারা যান। দীর্ঘ ২২ বছর ধরে ওই বাড়িতে বসবাস করলেও কখনোই প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলতেন না তারা। নিজেদের মতো থাকতেই পছন্দ করতেন তারা।
গত দুই বছর আগে ছোট আরেক বোন মারা যান।
পুলিশ ওই সময় জানিয়েছে, অপুষ্টিজনিত কারণেই এই মৃত্যু। পরে সিদ্ধান্ত হয়, প্রতিবেশীরা দুই বোনকে দেখভালের দায়িত্ব নেবেন। প্রতিদিন ওই ভবনের ৩ তলার দু’টি ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা খাবার পৌঁছে দিতেন তাদের বাসায়।
প্রতিবেশী সীমা জানিয়েছেন, ছোটবোন মারা যাওয়ার পর রেখা ও পুতুলের মধ্যে ঝগড়া, মারামারি পরিমাণ আরো
বেড়ে যায়। এছাড়াও তাদের ঘর আরো বেশি অপরিচ্ছন্ন হয়ে থাকতো। প্রচণ্ড রকমের দুর্গন্ধ এড়াতে অধিকাংশ দিনই বাইরে থেকে খাবার দিয়েই চলে যেতেন তিনি।
সীমা আরো বলেন, বেশ কিছু দিন ধরে তাদের দুই বোনের মধ্যে পুতুল নামের ওই নারীকে খাবার নেওয়ার জন্য বের হতেন না। রেখাই খাবার নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিতেন। তার কথায়, বুঝতে পারতাম দু’জনের মানসিক সমস্যা রয়েছে। খাবার ঠিক মতো ভাগ করতে পারবে না। তাই দু’জনকে আলাদা করে খেতে দিতাম। কিন্তু কয়েক দিন পুতুলকে দেখতে পাইনি। যখন দেখলাম তখন মনে হল খাটের উপর কঙ্কাল শুয়ে আছে।
এদেরকে দেখভালের ব্যবস্থা করার জন্য পুলিশকে বারবার জানানো হয়েছে। তবে গত ১৪ জানুয়ারি লিখিতভাবে আনন্দপুর থানায় জানানো হয়। কিন্তু পুলিশ এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
এ বিষয়ে লালবাজারর সরকারি একজন কর্মকর্তা জানান, বছর দুয়েক আগে ছোট বোন মারা যাওয়ার পর তাদের মানসিক চিকিৎসার জন্য একটি বেসরকারি কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু ওই দুই বোন আপত্তি তোলেন। এমনকি আবাসিকদের একাংশও আপত্তি জানান।
তবে রেখা নামের বেঁচে থাকা বোনটি এখন পুলিশের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। আবাসন সমিতির সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান এই সরকারি কর্মকর্তা।