201082

প্রেম, বিয়ে অতঃপর বন্দী জীবন!

সীমা ও প্রদীপের পরিচয় একটি ট্রেনিং সেন্টারে। সীমা সেলাই মেশিনে নানা কাজ শিখতেন আর প্রদীপ শিখতেন কম্পিউটারের কাজ। বছর খানেক ধরে এক অপরকে চেনা-জানার পর প্রাপ্তবয়স্ক দু’জনে সিদ্ধান্ত নেন বিয়ে করার।

কিন্তু বিয়ে বিষয়টা যতটা আনন্দের হওয়ার কথা ছিল তাদের জন্য ছিল ততটাই শঙ্কার।

সীমা এবং প্রদীপের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের রোহতাক জেলায়। যেখানে ছেলে-মেয়ের বিয়ে হয় জাত-ধর্ম-বর্ণ মিলিয়ে। এর ব্যত্যয় হলেই জীবন দিতে হয় যেকোনো একজনকে।


পুলিশের পাহারায় থাকছে দম্পত্তিরা

বিয়ের ক্ষেত্রে ছেলে-মেয়েদের নিজেদের পছন্দের গুরুত্ব সেখানে একেবারেই নেই।

ভারতের ক্রাইম ন্যাশনাল ব্যুরো বলছে, অনার কিলিং বা পরিবারের সম্মানা রক্ষার নামে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ভারতের সবচেয়ে বেশি যেসব জায়গায় হয়, হরিয়ানা তার মধ্যে অন্যতম।

এ কারণে সুপ্রিম কোর্টের আদেশে এই রাজ্যের ২২টি জেলায় রয়েছে সেফ হোম।

নতুন বিবাহিতরা যখন মনে করেন তাদের জীবনের ওপর হুমকি রয়েছে, তখন আদালতের আদেশে তারা এখানে আশ্রয় নেন।

সম্প্রতি রোহতাক পুলিশের বিশেষ অনুমতি নিয়ে আমি গিয়েছিলাম এমন একটি সেফ হোমে।

সেখানেই আমার দেখা হয় সীমা আর প্রদীপের সঙ্গে।

দেয়ালে ভালোবাসার প্রকাশ

সেফ হোমের দৈর্ঘ্য প্রস্থে ১২ ফুটের একটি ঘরে গিয়ে দেখলাম মোট পাঁচটি দম্পতি বসে আছে। তারা সবাই কোর্টের নির্দেশে একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আশ্রয় নিয়েছেন এখানে- জীবন বাঁচাতে।

সীমা বলছিলেন, ‘নতুন বিয়ে করে মানুষের অনেক স্বপ্ন থাকে, নতুন ঘর, সংসার শ্বশুর-বাড়ি- অনেক স্বপ্ন … কিন্তু আমার এখন প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে শঙ্কায়’। ‘এছাড়া এখানে ব্যক্তিগত কোন গোপনীয়তা নেই,’ বলছিলেন তিনি।

কোন মতে মেঝেতে বিছানা পেতে আস্তানা করেছেন এই দম্পতি। বলতে গেলে এক কাপড়ে বাড়ি ছেড়েছেন তারা।

সীমার অপরাধ তিনি তার জাতের বাইরের এক ছেলেকে ভালোবেসে বিয়ে করেছেন।


ঘরের বাইরে বের হওয়া নিষেধ তাদের

তাই পরিবার বা সমাজের কাছে এখন তিনি অপরাধী- নিজের জীবন বাঁচানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে তার জন্য।

সেফ হোমের ইনচার্জ সুভাষ চন্দ্রের ঘরে গিয়ে দেখলাম প্রদীপের বাবা-মা এসেছেন মিটমাট করতে।

কিন্তু তাতে কতটা আশ্বস্ত হচ্ছেন সীমা আর প্রদীপ?

প্রদীপ বলছিলেন, ‘আমার পরিবার বলছে তারা মেনে নিয়েছে। আমাদের এখন তারা বাড়ি নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু সীমার ভাই গতকাল ফোনে হুমকি দিয়েছে যে বাইরে বেরুলেই সীমাকে হত্যা করা হবে। তাই কোনভাবেই স্বস্তি পাচ্ছি না, কাউকে বিশ্বাসও করতে পারছি না’।

ভারতের ক্রাইম ন্যাশনাল ব্যুরো বলছে, ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ২৮৮টি অনার কিলিং-এর ঘটনা ঘটেছে দেশটিতে।

তবে এই পরিসংখ্যানের বাইরেও অনেক হত্যার ঘটনা খবর হয়ে ওঠে না।

সীমার পরনে নতুন বউয়ের পোশাক। কিন্তু মনে তার নতুন জীবনের স্বপ্ন ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছে।

প্রদীপের বাবা মা নিতে এসেছেন কিন্তু প্রদীপ সীমা একবারেই আস্থা পাচ্ছেন না

সীমা বলছিলেন ‘এখান থেকে বের হওয়ার পর আদৌ আমি আমার ভালোবাসার মানুষের সাথে ঘর বাধতে পারবো, না-কি পরিবারের সম্মান বাঁচাতে জীবন দিতে হবে, আমি জানি না’। সূত্র: বিবিসি বাংলা।

ad

পাঠকের মতামত