199473

এত বড় মাছ!

বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলায় সবার নজর কেড়েছে একটি ‘দৈত্যাকার’ বাঘাইড় মাছ। মাছটির ওজন কমবেশি ১০০ কেজি। বিক্রেতা সেটির দাম হেঁকেছেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।তবে এককভাবে সেটি কিনতে পারেননি কেউ। তাই মাছটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে।

মেলায় ‘দৈত্যাকার’ মাছ শুধু একটিই নয়। সেখানে প্রায় একই ওজনের বেশ কয়েকটি বাঘাইড়সহ রয়েছে বিশাল আকৃতির বোয়াল, রুই, কাতলা ও আরও বেশ কয়েক জাতের মাছ।

আজ বুধবার বগুড়ার গাবতলী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলায় এসব মাছ বিক্রি হচ্ছে। গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের ইছামতির নদীর তীরে পোড়াদহ এলাকায় প্রতি বছর বসে ২০০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী এই মেলা। মাছ ও মিষ্টির জন্য বিখ্যাত হয়ে ওঠা এই মেলায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সমাগমে আজ মুখর হয়ে উঠেছে।

গাবতলীর চকমড়িয়া গ্রামের ভোলা মিয়া, আবুল কাশেম, লাল মিয়া, আবদুল জলিল, মোস্তাক হোসেনসহ পাঁচ-ছয়জন মাছ ব্যবসায়ী জানান, যমুনা নদীর একটি ৮০ কেজি ওজনের বাঘাইড় কেটে বিক্রি করছেন ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে। আর ১০০ কেজি ওজনের বিশাল আকৃতির মাছটি বিক্রি হবে ১ হাজার ২৫০ টাকা কেজিতে। এছাড়াও এই মেলায় ১৭ কেজি ওজনের একটি বোয়াল মাছের দাম হাঁকা হয়েছে প্রতি কেজি ১ হাজার ৬০০ টাকা, ১৫ থেকে ১৮ কেজি ওজনের কাতলা মাছ ২ হাজার ২০০ টাকা কেজি, আট থেকে ১০ কেজি ওজনের কাতলা মাছ ১ হাজার ২০০ টাকা, ১০ কেজির উপরে আইড় মাছ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া রুই, পাঙ্গাস, ব্রিগেড অন্যান্য জাতের মাছ উঠেছে মেলায়।

মেলার উদ্যাক্তাদের একজন আবদুল কাদের বলেন, জায়গাটি দেখার জন্য প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসছে। এবার একদিনের জন্য মেলা আয়োজন করা হচ্ছে। এ বছর সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারলে প্রতি বছরই সেখানে মেলার আয়োজন করা হবে।

জানা যায়, প্রতি বছরের মাঘ মাসের শেষ বুধবার আয়োজিত এই মেলা কালের বিবর্তনে হয়ে ওঠে পূর্ব বগুড়াবাসীর মিলনমেলা। পোড়াদহ নামক স্থানে হয় বলে এ মেলার নাম হয়ে যায় পোড়াদহ মেলা। মেলাকে ঘিরে আশপাশে প্রায় ২০ গ্রামের মানুষ, মেয়ে ও জামাইকে নিমন্ত্রণ দিয়ে আপ্যায়ন করে থাকে। এ কারণে স্থানীয়রা আবার এ মেলাকে ‘জামাই-মেয়ে’ বলে থাকে।

এদিকে মেলার জন্য ১০ কেজি ওজনের মাছ আকৃতির মিষ্টি তৈরি করেছেন ব্যবসায়ী আবদুল লতিফ। মহিষাবান এলাকার ব্যবসায়ী লতিফের দোকানে এ মিষ্টির দাম হাঁকানো হয়েছে ৪ হাজার টাকায়। এছাড়া এক কেজি, দুই কেজি, তিন কেজি, চার কেজি ওজনের মিষ্টিও মেলায় পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন নামে ও দামে। মোটমাট ২০০ মণ মিষ্টি রয়েছে লতিফের দোকানে।

এ মেলা মাছ, মিষ্টি, আসবাবপত্র, বড়ই, পান সুপারি, তৈজসপত্র, খেলনা থাকলেও কালক্রমে মাছের জন্য বিখ্যাত হয়ে আসছে। মেলায় নাগরদোলা, চরকি, সার্কাসসহ শিশুদের জন্য অন্যান্য খেলা চলছে।

মেলায় মাছ ক্রয় করতে আসা বগুড়া শহরের ফুলবাড়ী এলাকার ব্যবসায়ী রাশেদুল আলম শাওন জানান, তিনি সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আট কেজি ওজনের একটি কাতলা মাছ প্রতি কেজি ১ হাজার ২০০ টাকা দরে কিনেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা লুৎফর রহমান সরকার স্বপন জানান, হাজার হাজার মানুষের পদচারণা হয়ে থাকে এ মেলায়। তবে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তির কারণে এবার স্বল্প পরিসরে মেলা বসেছে। তারপরেও উৎসব থেমে নেই। জামাই-মেয়েসহ আত্মীয় স্বজনদের পদচারনায় মুখর হয়ে উঠেছে গোটা এলাকা।

গাবতলী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল বাসার বলেন, পোড়াদহ মেলাটি সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্বারা কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোন প্রকার জুয়া কিংবা অশ্লীল নাচ-গান করার চেষ্টা হলে তা কঠোরভাবে দমন করা হবে।

ad

পাঠকের মতামত