196872

বাড়িতে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে দম্পতির ইয়াবা ব্যবসা!

ডেস্ক রিপোর্ট : গ্রাম্য পরিবেশে রাস্তার পাশে টিনশেডের সাদামাটা একটি বাড়ি। তিন কক্ষবিশিষ্ট সেই বাড়িটির প্রবেশমুখের গলিতে দরজার এক পাশে লাগানো সিসি ক্যামেরা। আকারে বেশ বড়। এ রকম আরও একটি সিসি ক্যামেরা বাড়ির পেছনের টিনশেডের কার্নিশের সঙ্গে লাগানো। মূলত এই দুটি ক্যামেরার মাধ্যমেই চলত বাড়ির সার্বক্ষণিক নজরদারি। ক্যামেরায় উঠে আসত বাসায় কে প্রবেশ করছে আর কারা বাহির হচ্ছে তার চিত্র।পাশাপাশি সিসি ক্যামেরাকে পরিচালনার জন্য ঘরের ভেতরে বিছানার মাঝে রাখা হতো একটি মনিটর। সে মনিটরের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক লক্ষ রাখা হতো সিসি ক্যামেরাগুলোর সব চিত্র।

এভাবে বাড়িতে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে কঠোর নজরদারির মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের বন্দরথানা এলাকার হরিপুর গ্রামে নিজ ঘরে বসে ইয়াবা তৈরি করতেন হাবিবুর রহমান ও লাকি আক্তার (৪৬) দম্পতি।

১ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার সেই গ্রামে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর হানা দিয়ে হাবিবুরের স্ত্রী লাকিকে গ্রেফতার করে। সেই সঙ্গে বাড়িতে থাকা ইয়াবা তৈরির মেশিনসহ যাবতীয় কাঁচামাল জব্দ করা হয়। তবে অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে আগেই সটকে পড়েন হাবিবুর। ঘটনার পর থেকে পলাতক তিনি।

গ্রেফতারকৃত লাকি তার স্বামীর সঙ্গে ঘরের ভেতরে বসে ইয়াবা তৈরি করার বিষয়টি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। সেই সঙ্গে তারা এ ব্যবসায় দীর্ঘদিন ধরে জড়িত বলেও জানান।

জব্দকৃত ইয়াবা তৈরির বিভিন্ন উপাদানের সাথে সিসি ক্যামেরা ও মনিটর। ছবি: প্রিয়.কম

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় লাকি আরও জানান, বাড়িতে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে নজরদারি ও পরিচালনার কাজটি করতেন মূলত তার স্বামী হাবিবুর রহমান। হাবিবুর ঘরে বসে কম্পিউটারের মনিটরে বাসার রুমে বেডে শুয়ে নজরদারি করতেন। কে কখন বাসায় প্রবেশ করছে তা লক্ষ রাখতেন তিনি।

স্বামী হাবিবুরের সাথে মেঝেতে বসে ইয়াবা তৈরি করতেন বলে জানান লাকি। এই ইয়াবা তৈরির সব কাঁচামাল আনা হতো দেশের বাইরে থেকে। আট গর্তের (ছোট ও বড় সাইজসহ) স্টিলের ডাইস ব্যবহার করে তৈরি করা হতো ইয়াবা। বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল ও ইয়াবার ফ্লেবারে কয়েক মিনিটের মাঝেই তৈরি হয়ে যেত বিষাক্ত এই নেশাদ্রব্য। পরবর্তীতে অতি স্বল্প সময়ের মাঝে তৈরিকৃত ইয়াবাগুলো বিভিন্ন মাধ্যমের সাহায্যে পৌঁছে দেয়া হতো ক্রেতার হাতে।

লাকি জানান, তার স্বামীর কাছে সর্বদা থাকত সেভেন এমএম পিস্তল। যেটির লাইসেন্সও করা হয়েছিল। কিন্তু এটি হাবিবুরের নিরাপত্তার আড়ালে ইয়াবা ব্যবসার ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হতো। সিসি ক্যামেরার পাশাপাশি তার স্বামী হাবিবুর বাড়ির গেটে পাহারাদারের কাজটি নিজেই করতেন। কেউ যাতে কোনো ধরনের ঝামেলা না করতে পারে তার জন্য সঙ্গে রাখতেন গুলিভর্তি পিস্তলটি।

জব্দকৃত সেভেন এমএম পিস্তলের সাথে ইয়াবা তৈরির যাবতীয় কাঁচামাল। ছবি: প্রিয়.কম

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বিপ্লব কুমার মোদক প্রিয়.কমকে বলেন, ‘লাকী দম্পতি খুব চালাক। তারা বাসায় সিসি ক্যামেরা বসিয়ে ইয়াবার ব্যবসা চালাত। তারা দীর্ঘদিন ধরে এ কাজটি করে আসছিল। পুরো বাড়িটি সাদামাটা ও সুরক্ষিত। বাইরে থেকে বাড়িটি দেখলে বোঝা যাবে না সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে তারা এসব কাজ করছে। মূলত তারা বাড়িটিকে ইয়াবার কারখানা হিসেবে ব্যবহার করতেন।’

ইয়াবা তৈরির জন্য দুই কেজি পাউডার, তিনশ’ গ্রাম তরল কেমিক্যাল, তিনশ’ গ্রাম তরল পদার্থ, দুটি সিসি ক্যামেরা ও একটি মনিটর উদ্ধার করা হয়েছে। এসব কাঁচামাল দিয়ে হাবিবুর ও লাকি দম্পতি ইয়াবা তৈরি করতেন বলে জানান বিপ্লব কুমার মোদক।

তিনি আরও জানান, হাবিবুর দম্পতি তাদের বাড়ির গেট বা আশেপাশে কাউকে যেতে দিতেন না এবং বাড়ির গেট বন্ধ করা থাকত সর্বদা। বাড়িতে হাবিবুর তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে থাকতেন। অভিযানের সময় বিষয়টি টের পেয়ে হাবিবুর পালান। এ ঘটনায় লাকি ও তার স্বামীকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। হাবিবুরকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

বিপ্লব কুমার আর জানান, লাকি দম্পতি কীভাবে ইয়াবা তৈরি করতেন, কোথা থেকে আসত সেই কাঁচামাল আর সেগুলো তৈরির পর কাদের কাছে সরবরাহ করা হতো, কে তাদের এসব কাজে সহযোগিতা করতেন, তা জানার জন্য আগামীকাল রোববার রিমান্ডের আবেদন করবেন তারা। লাকিকে রিমান্ডে নিলে আরও অজানা তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন তিনি। উৎস:  প্রিয়

ad

পাঠকের মতামত