196705

রাস্তায় খাবারের নামে আসলে কী খাচ্ছি?

নিউজ ডেস্ক : রাস্তার পাশে তৈরি মুখরোচক খাবারের প্রতি অনেকেরই আগ্রহ আছে। তবে খাবারের মান তদারকি নিয়ে খুব একটা তৎপর নয় সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এগুলোর তৈরির প্রক্রিয়া আর পরিবেশন স্বাস্থ্যসম্মত না হওয়ায় দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন ভোক্তারা।

রাস্তার পাশে তৈরি হচ্ছে খাবার। অথচ খাদ্য উপাদানের চেয়ে এখানে ক্ষতিকর জীবাণুর পরিমাণই বেশি। আর মানের বিষয়টি বরাবরই উপেক্ষিত।

এক গ্রাহক বলেন, ‘যে জিনিসটা ক্ষতিকর, সেটার প্রতিই আমাদের আকর্ষণ বেশি থাকে।’

ছোট্ট এক শিশু বলছে, ‘মজা লাগে তাই খাচ্ছি।’

আরেক গ্রাহক বলেন, ‘আমরা জানি এটা ক্ষতিকর, কিন্তু মুখের স্বাদের জন্য আমরা এটা খেয়ে ফেলি।’

রাস্তার পাশের পেপে, শশা, আমড়াসহ বিভিন্ন ফলকে আকর্ষণীয় আর সুস্বাদু করতে মেশানো হচ্ছে ক্ষতিকর রং এবং স্যাকারিন মেশানো পানি।

বিক্রেতা বলেন, ‘এর ব্যাপারে আমি কী বলবো? আমি তো জানিনা। আমি তো জিজ্ঞেস করে দিচ্ছি। যদি মিষ্টি বেশি দিতে বলে তাহলে ওইটা দেয়া লাগে।’

আরেক বিক্রেতা স্বীকার করলেন ফলে স্যাকারিন দেয়ার কথা।

তিনি বলেন, ‘পানিতে স্যাকারিন দেই। কী করবো? লোকে খেতে চাইলে আমি কী করবো?’

ফুচকা, চটপটি বা ঝালমুড়ির মত মুখরোচক খাবার তৈরির পেছনের গল্পটা আরো ভয়াবহ। রাজধানীর কয়েকটি ফুচকা তৈরির কারখানার শ্রমিকদের ন্যূনতম পরিচ্ছন্নতা জ্ঞান সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। অস্বাস্থ্যকর আর নোংরা পরিবেশেই বানানো হচ্ছে এই খাবার। বিক্রি না হলে দুই দিনের বাসি খাবারও চলে যায় রাজধানীর বিভিন্ন দোকানে।

ফুচকা তৈরির কারখানার এক কর্মী বলেন, ‘আমরা কী করবো? আমরা যেখানে জায়গা পাই, সেখানেই কাজ করি। এখান থেকে দেখা যায় খারাপ। কিন্তু আমরা তো খারাপ করি না।’

সমাধান জানতে চাইলে সিটি করপোরেশন দায় চাপিয়ে দেয় বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের ওপর।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিল্লাল বলেন, ‘এটা সমাধানে আরও সমন্বিত উদ্যোগ থাকা দরকার। সেই উদ্যোগটি সেফ ফুড অথোরিটিই গ্রহণ করতে পারে। কারণ মূল কাজটি কিন্তু তাদেরই।’

এদিকে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ নানা উদ্যোগের কথা বললেও ভিন্ন চিত্র তুলে ধরলেন বিশেষজ্ঞরা। সমস্যা সমাধানে সরকারের তদারকির অভাবকেই দায়ি করেন তারা। পাশাপাশি বলেন এই খাদ্য গ্রহণের ফলে মানবদেহে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘স্ট্রিট ফুড মেইনটেইন করা আমাদের জন্য বিগ চ্যালেঞ্জ। তারা কীভাবে নিরাপদে খাদ্য উৎপাদন করবে এবং বাজারজাত করবে এবং বিক্রয় করবে, সে বিষয়ে আমরা একটা বুকলেট তৈরি করেছি।’

পুষ্টি বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. খুরশীদ জাহান বলেন, ‘রাস্তার পাশে তৈরি খাবার অনেকদিন খেলে অনেক ধরণের ক্রনিক ইনফেকশন আমাদের শরীরে থেকে যায়। খাদ্য নিরাপত্তা আইন ২০১৩ সালে পাস হয়েছে। এটার এভালুয়েশন কিন্তু হচ্ছে না।’

দেড় কোটি মানুষের এই মেগা সিটিতে প্রতিদিন কয়েক লাখ মানুষ না জেনে বা প্রয়োজনের তাগিদে খাচ্ছেন রাস্তার খোলা খাবার।

সূত্র : সময় টিভি

ad

পাঠকের মতামত