196421

এসএসসি পরীক্ষায় পা দিয়ে উত্তর লিখছেন অদম্য সুমন

বগুড়ার শেরপুরে পা দিয়ে লিখে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে অদম্য এক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী। দুই হাত বিহীন ওমর ফারুক সুমন নামের ওই শিক্ষার্থী বেঞ্চের উপর খাতা রেখে পা দিয়ে লিখে তিনি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। সে শেরপুর ডিজে হাইস্কুলের কর্মাসের ছাত্র। আজ বৃহস্পতিবার সে শেরপুর উপজেলার মজিবর রহমান মজনু বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে পা দিয়ে কলম ধরে পরীক্ষার উত্তর লিখছেন।

জানা যায়, বগুড়ার শেরপুর উপজেলার পৌরশহরের উত্তর সাহা পাড়ায় মজিবর রহমানের ছেলে সুমন জন্মগতভাবে দুই হাতবিহীন। জন্মগতভাবে ছেলেটির দু’টো হাত না থাকলেও লেখাপড়ায় সে বেশ মেধাবী। এ কারণে পরিবার থেকে তাকে সব রকম সহযোগিতা করা হচ্ছে। পা দিয়ে কলম চালিয়ে স্বপ্ন পূরণের যুদ্ধে ছেলেটি এগিয়ে চলছে। সুমনের বাবা পেশায় ডেকোরেটরের একজন শ্রমিক। মা ফাতেমা বেগম একজন গৃহিনী। মা-বাবা, দু’ভাই ও দু’বোন তাদের সংসার। এর মধ্যে ওমর ফারুক সুমন সবার ছোট। দু’বোনের বিয়ে হয়েছে। আরেক ভাই ছোটখাটো ব্যবসা করে। মোটামোটি বাবার সামান্য আয়ে চলে সংসার ও সুমনের লেখাপড়া।

ওমর ফারুক সুমন জানান, ছোট বেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি তার ভীষণ আগ্রহ। অভাবের সংসার হলেও মা-বাবা তাকে কখনও লেখাপড়া করা থেকে বিরত থাকতে বলেননি। সাধ্যের মধ্যে থেকেই যতটুকু পারেন তারা তার পেছনে ব্যয় করেন। ওমর ফারুক শেরপুর পৌরসভা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৪ দশমিক ৩৫ গ্রেড পেয়ে পিইসি পাস করে। এরপর শেরপুর ডিজে হাইস্কুলে ভর্তি হয়। সেখান থেকে ২০১৫ সালে জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৪ দশমিক ১৫ গ্রেড পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। এখন একই প্রতিষ্ঠান থেকে চলতি এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। প্রথমদিনে অনুষ্ঠিত বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষা তার খুব ভাল হয়েছে। সে আরও জানায়, হাইস্কুলে তার কাছ থেকে অর্ধেক বেতন নেয়া হতো। তৃতীয় শ্রেণিতে থাকাকালে তাকে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড দেয়া হয়েছে। কিন্তু সবকিছুর ঊর্ধ্বমুখির বাজারে বাবার পক্ষে তার পড়াশোনার খরচ যোগ দেওয়াটা অনেকটা কঠিন হয়ে পড়েছে। এসএসসি ও এইচএসসিতে ভাল ফলাফল করতে পারলে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে। সেখানে পড়াশোনা করবে। তার পড়াশোনার বিষয় হবে হিসাব বিজ্ঞান। স্বপ্ন পূরণে হিসাব বিজ্ঞান বিষয় নিয়েই বহুদূর এগিয়ে যেতে চায় প্রতিবন্ধী ওমর ফারুক সুমন।

বাবা মজিবর রহমান জানান, ছাত্র হিসেবে সুমন খুবই ভালো। লেখাপড়ায় তার বেশ আগ্রহ। কিন্তু শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় তার পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়াটা অনেক কঠিন কাজ। তবে বাবা হিসেবে তিনি হতাশ নন।

ad

পাঠকের মতামত