একুশে বইমেলা উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে গ্রন্থমেলা উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বিকাল তিনটায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত বইমেলার উদ্বোধন করেন তিনি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান এবং সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি।
শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে, ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতিচারণের পাশাপাশি ওই সময়ের দিনলিপি উপস্থিত অতিথিদের সামনে তুলে ধরেন। ভাষা আন্দোলনে ছাত্র সমাজের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন: একুশে ফেব্রুয়ারী শুধু আমাদের শহীদ দিবসই নয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। দু’জন প্রবাসী বাংলাদেশি এবং তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রচেষ্টায় ১৯৯৯ সালে ‘বাংলা’ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার সম্মান লাভ করে। ৭৫’এ বঙ্গবন্ধু হত্যার মাধ্যমে বাঙালি জাতি বিশ্বদরবারে খুনি জাতির পরিচিতি লাভ করেছিলো। আজ আবারও আমরা আমাদের ভাবমূর্তি বিশ্বদরবারে তুলে ধরতে পেরেছি। বিশ্বে বাংলাদেশ আজ অসাম্প্রদায়িক একটি দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বই এবং বই মেলার প্রতি ভালোবাসা ফুটে ওঠে। রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল পদে থাকায় ইচ্ছে থাকলেও মেলায় আসতে পারেন না বলে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। এর পাশাপাশি, শিশুদের মাঝেও বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, সাহিত্য চর্চা পারে যুব-সমাজকে সঠিক পড়ে ধরে রাখতে। বই পারে আমাদের চিন্তা চেতনা বিকশিত করতে। আজ আমরা অসাম্প্রদায়িক জাতি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছি। আর কখনও বাংলাদেশে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের কোনো স্থান হবে না।
ভাষার এ মাসে, লেখক-পাঠক-প্রকাশকদের পদচারণায় জাতির অহঙ্কারের এ মেলা ঘিরে মাসব্যাপী মুখর থাকবে একাডেমি প্রাঙ্গণ। নতুন গ্রন্থ আর গ্রন্থপ্রেমীদের মুখর রাখতে ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ। সন্ধ্যা ৬টার পর দর্শনার্থীরা মেলা প্রঙ্গণ ঘুরে দেখার সুযোগ পাচ্ছেন।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সম্মানিত বিদেশি অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চীনের প্রখ্যাত গবেষক ও রবীন্দ্র-অনুবাদক ডং ইউ চেন, অস্ট্রিয়ার মেনফ্রেড কোবো, পুয়ের্তোরিকোর লুস মারিয়া লোপেজ, ভারতের চিন্ময় গুহ প্রমুখ।
গ্রন্থমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাতটি বিভাগে নির্বাচিত বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০১৬ প্রদান করা হয়। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর হাতে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত দুটি গ্রন্থ মীর মশাররফ হোসেনের অমর সৃষ্টি বিষাদ সিন্ধুর ফকরুল আলমকৃত অনুবাদ ‘ওশান অব সরো’, হারুন-অর-রশিদ রচিত মূলধারার রাজনীতি : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কাউন্সিল ১৯৪৯-২০১৬’, জার্মানি থেকে প্রকাশিত হান্ড্রেড পোয়েমস ফ্রম বাংলাদেশ’ এবং ক্রিশ্চিয়ান কার্লসন অনূদিত সুইডিশ ভাষায় বাংলাদেশের কবিদের কবিতা সংকলন বেঙ্গল ইসকা মোঁ’ (বাংলার মেঘ) তুলে দেওয়া হয়।
প্রতিদিন মেলা শুরু হবে বিকাল তিনটায়। চলবে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত। প্রতি সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার মেলা বেলা ১১টা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত চলবে। শুক্র ও শনিবার ‘শিশুপ্রহর’ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। শিশুপ্রহর বেলা ১১টা থেকে একটা পর্যন্ত।