জোর করে মানুষকে কাঁদানো যায়, হাসানো যায়না: টেলি সামাদ
‘ফেসবুকে খোলামেলা ছবি দিয়ে আলোচনায় আসা যায়, কিন্তু প্রকৃত শিল্পী হওয়া যায় না। এখন তো শিল্পী হওয়ার আগেই তারকা খ্যাতি, গাড়ি-বাড়ি হাঁকাতে চাচ্ছে অনেকেই। দিন শেষে দেখা যাচ্ছে ওরা হারিয়ে যাচ্ছে। সে কারণেই আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে এত শিল্পী সংকট।’ চ্যানেল আই অনলাইকে এভাবেই খোলাখুলিবাবে কথাগুলো বলছিলেন এক সময়ে ঢাকাই চলচ্চিত্রের দর্শকপ্রিয় অভিনেতা টেলি সামাদ।
জনপ্রিয় এই কৌতুক অভিনেতা বলেন, আমাদের ইন্ডাস্ট্রি এখন নায়ক নির্ভর। শুধু নায়ক নয়, আগে নায়িকাদের নামে ছবি চলতো। অনেক নায়িকা একাই ছবি টেনে নিয়ে যেত। টেলি সামাদ বলেন, আমাদের এখন শিল্পী দরকার। এছাড়া, আমি মনে করি সিনিয়র শিল্পীদের আবার চলচ্চিত্রে নিয়মিত কাজ করা উচিত। তারা ফিরলে চলচ্চিত্রের অনেক সংকট দূর হবে।
তিনি বলেন, আশির দশকে যখন চলচ্চিত্রের রমরমা অবস্থা ছিল, তখন আমি দাপিয়ে কাজ করেছি। তবে আমাদের সময়ে এখনকার মতো এতো দ্রুত ছবির কাজ শেষ হতো না। একটা ছবির কাজ শেষ করতে ৬-৮ মাস সময় লাগতো। ভক্তি করতে কাজ করতে হতো। আমার মনে আছে, প্রয়াত বুলবুল ভাইয়ের সঙ্গে একটি ছবিতে অভিনয়ের জন্য আমাকে ৯০ বার শট দিতে হয়েছিল। আর এখন শুনি এক মাসেই ছবির কাজ শেষ হয়ে যায়।’
প্রবীণ এই অভিনেতার প্রশ্ন, এতো তাড়াতাড়ি কীভাবে ছবির কাজ শেষ হওয়া সম্ভব? কৌতুক অভিনেতা হিসেবেও এক দশক আগেও তিনি ছিলেন তুমুল জনপ্রিয়। শারীরিক অসুস্থতা কাটিয়ে উঠলেও আগের মতো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন না। ছয় শতাধিক ছবির এই অভিনেতা বলেন, এটা সত্যি যে আগের চেয়ে প্রযুক্তির উৎকর্ষতা বেড়েছে। কিন্তু একটা ছবির কাজ করতে গেলে, সেই চরিত্রে ঢুকতে গেলে সেটা নিয়ে স্টাডি করতে হয়। আমাদের সময়ে এটা করতাম। কিন্তু এখন কেউ করে না বললেই চলে! সে কারণে অনেকের অভিনয় হয় না।
ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় চলচ্চিত্রের পিছনে ব্যয় করেছেন টেলি সামাদ। অভিনেতা দিলদারের সঙ্গে টেক্কা দিয়ে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে অভিনয় করেছেন তিনি। কিন্তু এখন চলচ্চিত্রে কৌতুক অভিনয় শিল্পীর সংকট। এই বিষয়টি কীভাবে দেখেন?-প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি মনে করি কৌতুক পরিবেশন সৃষ্টিশীল একটা কাজ এবং সবচেয়ে কঠিন। এই কঠিন কাজটি দর্শকদের কাছে সাবলীলভাবে উপস্থাপন করতে হবে। জোর করে মানুষকে কাঁদানো যায়, হাসানো যায়না। যিনি তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজের ব্যবহার সঠিকভাবে করতে পারবেন তিনি সফল হবেন।
কথায় কথায় টেলি সামাদ তার বর্ণিল ক্যারিয়ারে অপ্রাপ্তির কথাও জানান। বলেন, আমি প্রায় চার দশক ধরে চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত। এতগুলো বছরে আমি পাঁচ শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি। প্রায় প্রত্যেকটি ছবিতে আমার অভিনয় প্রশংসিত ছিল। কিন্তু শেষ জীবনে এসে আমার একটাই আক্ষেপ আমি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেলাম না।
টেলি সামাদ বলেন, আমার পুরো চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে আমি শুধু অভিনয়ের বলয়ে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখিনি। প্রযোজনা করেছি, প্রয়াত অভিনেতা দিলদারের সঙ্গে ছবিতে গানও গেয়েছি। এসবের প্রাপ্তি স্বরূপ বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছি। সেসব পুরস্কারে আমার ঘর ভর্তি হয়ে আছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার আমার কপালে জোটেনি। এটা যেহেতু জাতীয় চলচ্চিত্র পর্যায়ের পুরস্কার সেহেতু আমার মনে হয় এটা অর্জন করতে হলে জাতে ওঠা লাগে। কবে যে জাতে উঠবো আর কবে এই পুরস্কারটা পাবো সেটা বোধহয় ঈশ্বর মালুম!
টেলি সামাদ একসময় তুমুল ব্যস্ত ছিলেন অভিনয়ে। কিন্তু এখন আর কোনো ছবিতে কাজ করছেন না। তার অভিনীত সর্বশেষ ছবি মুক্তি পায় ‘জিরো ডিগ্রী’ ( ২০১৫)। বর্তমানে সারাদিন বাসায় থাকেন। টিভি দেখেন, ছবি আঁকেন।
বরেণ্য এই শিল্পী বলেন, আমি অভিনয়ের মানুষ। জীবনে আমার যা কিছু অর্জন সবকিছু অভিনয়ের বদৌলতে। অনেক দিন যাবত অভিনয় থেকে দূরে থাকলেও আমার মনটা পড়ে থাকে অভিনয়েই। প্রবল ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও শরীরে পেরে ওঠেনা বলে আর ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে পারিনা। সকলের কাছে দোয়া চাই যেন শিগগির সুস্থ হয়ে আবারো অভিনয়ে ফিরতে পারি।’