195752

‘যোগ্যতার বলে কাজটি করছি , বাবার নামে বা কারো করুণায় নয় ‘

‘মা যখন আমাকে ছেড়ে চলে যান তখন আমার বয়স ছিল পাঁচ। মায়ের মুখ আমার কাছে এখন অনেকটাই ফটোগ্রাফ নির্ভর। শুধু এটুকু মনে আছে আমি মাকে খুব জ্বালাতাম। বাবা এবং আপুও বলে আমি মাকে খুব জ্বালিয়েছি। কিন্তু কখনও মা আমাকে বকেননি। পরে বাবা আবার বিয়ে করেছিলেন। দিতি আন্টির সঙ্গেও আমাদের দুই ভাইবোনের সম্পর্ক ভালো ছিল। দিতি আন্টিকে সবসময়ই আন্টি ডেকেছি, সত্যি ভালো মানুষ ছিলেন। তবে খুব আদর করতেন আমাদের। বিশেষ করে তার দুই সন্তান লামিয়া ও দীপ্তর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক দারুণ ছিল। এখনও আছে। তবে যোগাযোগটা কম হয়।’

বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দাড়িয়ে চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে কথা বলছিলেন মিরাজুল মইন জয়। বিষয় ছিল বাংলা একাডেমির আসন্ন একুশে বইমেলার স্টলসজ্জা এবং তার প্রতিষ্ঠানের কাজ কর্ম নিয়ে। গতবার প্রথম একুশে বইমেলার স্টলসজ্জার কাজ করেছিল তার প্রতিষ্ঠান নিরাপদ ইভেন্টস। এবারও টেন্ডারে অংশ নিয়ে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে টেক্কা দিয়ে কাজ করছে তার প্রতিষ্ঠান।

কিন্তু যার বাবা ইলিয়াস কাঞ্চন। মা জাহানারা কাঞ্চন, যার সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দুই যুগ পার করে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ নামে একটি সামাজিক আন্দোলনের জন্ম ও প্রতিষ্ঠা। তার বা তাদের সন্তানের সঙ্গে কথা বললেতো পরিবার প্রসঙ্গ অবধারিত চলে আসবে। এসেছেও। তাতে মোটেও বিচলিত না হয়ে ইলিয়াস কাঞ্চন তনয় বুঝিয়ে দিয়েছেন জীবন স্বাভাবিক পথপরিক্রমা। তারকা সন্তানের তকমা বয়ে বেড়ানোটা সুবিধার চাইতে ঝক্কিই তৈরী করবে। বরং নিজেকে স্বাভাবিকতার আশ্রয়ে রাখলে ভালো হবে।

দুই ভাই বোনের মধ্যে জয়ের অবস্থান দ্বিতীয়। বোন ইমা থাকেন দেশের বাইরে। স্বামী সন্তানসহ। লন্ডনে। বাবার নামের অংশ শেষে রাখলেননা কেন? সটান উত্তর জয়ের, ‘আমি নিজের আলোতে উদ্ভাসিত হতে চেয়েছি। বাবা আমার সব কিছুর আশ্রয়স্থল। তিনি আমার জীবনের সূর্য। এখনও প্রতি দুপুরে বাবার সঙ্গে খাই। বাবা নিজে মেখে খাইয়ে দেন। মা যখন চলে যান তখন এত ছোট ছিলাম, সব সামলেছেন বাবা। কিন্তু নামের শেষে তার পদবী রেখে নিজের যোগ্যতাকে ফ্রেমবন্দী করতে চাইনি।’

মা জাহানারা কাঞ্চনের সঙ্গে ছোট জয় এবং তার বড় বোন ইমা
যুক্তরাজ্য থেকে অর্থনীতিতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে এসে ২০১৪ তে ‘নিরাপদ ইভেন্টস এন্ড কমিউনিকেশন্স’ এর সূচনা করেন জয়। উদ্বোধন করেছিলেন অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ। বিয়ে করেছেন ৫ বছর হল। স্ত্রী ফারিয়া ফাতেহ। চলচ্চিত্র ব্যবসায় না এসে ইভেন্ট এ কেন প্রশ্নে তরুণ জয়ের উত্তর, ‘আমি কর্পোরেট টাচটা পছন্দ করি।’

গত বছরের বইমেলার স্টলসজ্জাও করেছিল নিরাপদ ইভেন্টস। যা ছিল তাদের প্রথম এ সংক্রান্ত কাজ। এবারও টেন্ডারে জিতে কাজ নিয়েছেন। প্রায় দেড় কোটি টাকার কাজ। গতবারের অভিজ্ঞতা ভীষণ কাজে লাগছে। গতবারের ভুলভ্রান্তি এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করছেন। যেমন গতবার মিডিয়া কর্ণার নিয়ে বেশ অভিযোগ ছিল। এবার সে জায়গাটায় মনোযোগ বেশি রয়েছে। এছাড়া নতুন গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন মঞ্চ, মেলায় প্রবেশপথের তোরণ ও তার পাশে এলইডি স্ক্রিন নিয়ে গতবারে কিছুটা ঝামেলা থাকলেও এবার এদিকে কোন ঝামেলা থাকছেনা বলে জানান জয়।

স্ত্রী ফারিয়া ফাতেহর সঙ্গে মিরাজুল মঈন জয়
‘আপনাদের স্টলসজ্জা নিয়ে প্রকাশক মহলবিশেষ অসন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন। আপনাদের অভিমত কি?’ সতেজ হাসিতে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে জয় বলেন, ‘কোন অভিযোগ থাকলে তারা বাংলা একাডেমিকে বলতে পারেন। আমরা আসলে তাদের কাছে দায়বদ্ধ। যোগ্যতার বলে আমরা কাজটি করছি। বাবার নামে বা কারো করুণায় নয়। টেন্ডারে সব শর্ত পূরণ করে সেরা হয়ে কাজটি করছি। অনেকে একদম শেষ মুহূর্তে নকশা পরিবর্তন করছেন, আরো নানা বায়না সয়েও আমরা কাজটি করছি। নিজেদের সুনাম ধরে রাখার চেষ্টাা না করার মত বোকামী নিশ্চয় করবোনা!

এবার ইলেকট্রিকের কাজটি করছেন সাজসজ্জাকারী ও মেলা প্রাঙ্গণের নিরাপত্তাদানকারী প্রতিষ্ঠান। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দি উদ্যাণের অংশ মিলে হওয়া বইমেলায় এবার থাকছে ৪৫০ প্রতিষ্ঠানের ৬৬২টি স্টল।

নিজের প্রতিষ্ঠান থেকে চলচ্চিত্র প্রযোজনা করবেন কিনা প্রশ্নে জয় বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানের কাজের যে ধরণ তাতে চলচ্চিত্রকে সময় দেওয়ার মত সময় বা সুযোগ নেই। যদিও আমাদের নিরাপদ ইভেন্টস এবং কমিউনিকেশন দুটোই আছে। কিন্তু আমরা কর্পোরেট ক্লায়েন্ট নির্ভর। আমাদের ক্লায়েন্ট এর মধ্যে এডিবি, জাইকা বা ডিএফপিও আছে। তবে নিরাপদ কমিউনিকেশন্স থেকে চলচ্চিত্র করাটা কষ্টসাধ্য। কিন্তু চলচ্চিত্রের প্রতি আমার প্রবল অনুরাগ আছে। আমার নামে বাবা যে প্রতিষ্ঠান করেছিলেন জয় চলচ্চিত্র, সেটি সচল করার ইচ্ছা আছে। রাজ্জাক আংকেল এর মত বছরে অন্তত একটি ছবি করতে চাই। বাবাকে বলছি অনেকদিন ধরে। বাবা যে পরিমাণ ব্যস্ত নিরাপদ সড়ক চাই নিয়ে তাতেই তার সময় কেঁটে যায় বেশি। তবে ২০২০ এর মধ্যে নতুন করে জয় চলচ্চিত্রকে ফিরিয়ে আনতে পারব আশা করি।

ad

পাঠকের মতামত