চার কারণ এই হারের
ডেস্ক রিপোর্ট : টানা তিন ম্যাচে উড়তে থাকা বাংলাদেশ শেষ দুই ম্যাচে সব গড়বড় করে ফেলল। আগের ম্যাচের জেগে ওঠার তাগিদও কাজে লাগল না। মাত্র ২২২ রানের লক্ষ্য তাড়া করার কাজটা করতে পারল না বাংলাদেশ। অলআউট হলো ১৪২ রানে।
এমন পরাজয়ের পেছনে কী কী কারণ থাকতে পারে? বাংলাদেশ দল নিশ্চয়ই টেস্ট সিরিজের আগে কারণ ব্যবচ্ছেদ করে দেখবে। এর আগে এক দফা সংবাদ সম্মেলনে চলল উত্তর খোঁজা। সাংবাদিকদের প্রশ্ন কিংবা ধারণার সঙ্গে মাশরাফি বিন মুর্তজা কখনো একমত হলেন, কখনো হলেন না।
কারণ ১: সাকিবের চোট : সাকিবের দলে থাকা আর না-থাকার মধ্যে বিস্তর ব্যবধান। তবে কি ম্যাচের প্রথমার্ধে সাকিবেরে অপ্রত্যাশিত চোট মানসিকভাবে দলকে প্রভাবিত করেছে?
মাশরাফির ব্যাখ্যা: স্বাভাবিক দলের সেরা খেলোয়াড় নেই। তারপরও আমার কাছে মনে হয় না এটা কারণ। সাকিব যখন পড়ে যায়, তার হাত দেখে নিশ্চিত হয়েছিলাম তাকে আমরা ব্যাটিংয়ে পাচ্ছি না। প্রত্যেক খেলোয়াড়রই জানত সাকিব খেলতে পারবে না। ড্রেসিংরুমে আমরা আলোচনাও করেছি, সাকিব ব্যাটিং করতে পারবে না এটা মাথার মধ্যে কাউকে না আনতে। আমার হয়তো এটা অজুহাত দেওয়া ঠিক হবে না। ২২০ তাড়া করার মতো ব্যাটসম্যান আমাদের ছিল।
কারণ ২: উইকেট? : মিরপুরের উইকেট নিয়ে অনেক দিন ধরেই প্রশ্ন উঠছে। আজকের ম্যাচেও দুই দল ঠিক হাত খুলে খেলতে পারল না। বল অসমান বাউন্স হচ্ছিল। স্বাগতিক হিসেবে বাংলাদেশ কি পছন্দমতো উইকেট বানাতে পেরেছিল?
মাশরাফির ব্যাখ্যা: আমার কাছে মনে হয় মানসিকতা আরও বেশি কারণ। যতটুকু জানি একজন ব্যাটসম্যানের সঠিক বল বেছে নেওয়া ও সেই বলে কী খেলবে সে সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে হয়তো একটা ঘাটতি থাকতে পারে। আর চাপ অবশ্যই কাজ করে। চাপে পড়লে ওখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে। শুরুতে দু-তিন উইকেট পড়ার পর কীভাবে ব্যাট করতে হবে, তা সামলানো আরও গুরুত্বপূর্ণ। যদিও অনেক সময় এই অবস্থায় পড়ি। রিয়াদ যেভাবে খেলছিল, মুশফিক যদি আরেকটু বড় করত হয়তো-বা সম্ভব ছিল। আর অবশ্যই আমরা ভালো উইকেট চেয়েছিলাম। শুরু থেকেই বলেছি, প্রথম ম্যাচ থেকেই চেয়েছি হাইস্কোরিং উইকেটে ব্যাটিং করতে চাই। বোলিংয়ে আমাদের চারজন পেসার আছে, সাকিব ছিল। আমাদের বোলিং ইউনিট শক্তিশালী ছিল। সব সময় চেয়েছি ভালো উইকেটে খেলতে। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আমরা তিন শ করেছিলাম। অন্তত ২৭০-৮০, তিন শর উইকেটে খেলতে চেয়েছি।
কারণ ৩: কৌশলে ব্যর্থতা: বাংলাদেশ দল কি কৌশলে ব্যর্থ হয়ে গেল? প্রতিপক্ষ বুঝেশুনে শর্ট বল করেছে, তাতে ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ। শুরুতে অতি রক্ষণাত্মক হয়ে পড়া। থিতু হয়েও মুশফিকের শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে না পারা…এসব জায়গায় ব্যর্থ হওয়ার ফল কি পরাজয়? যখন ইতিবাচক শুরুর প্রয়োজন ছিল তখন রক্ষণাত্মক, আর ধরে খেলার সময় আক্রমণাত্মক?
মাশরাফির ব্যাখ্যা: শুরুটা হয়তো বেশি ভালো ছিল না। হয়তো ৫ ওভারে ১১ ছিল। তামিম আউট হলো তখন। ১০ ওভার ব্যাট করে উইকেট না হারিয়ে যদি ৩০ হতো। এমনকি ১ উইকেট পড়লেও ১০ ওভারে ৪০-৪৫ আমরা আশা করি এই উইকেটে। সে সময় যদি ১০ ওভারে ৩০ হতো উইকেট না হারিয়ে তাহলে অবশ্যই লড়াইয়ে থাকতাম। যেখানে ২২ রানে আমাদের তিন উইকেট পড়ে গিয়েছে। ১ উইকেট পড়ার পর আরেকটু ধরে খেলা উচিত ছিল। এতটা অ্যাটাকিং মুডে না গিয়ে একটু ধরে খেললে ভালো হতো।
আর শট বলের ব্যাপারে, দেখেন আমরা ৭-৮ দিন থেকে দেখে আসছি যে তারা নিচে বল করছে। আমরা এ নিয়ে আলাপও করেছি। এমন তো না যে আপনি ৭-৮ দিনে স্কিল ডেভলপ করতে পারবেন। যেটা করা যায় মানসিকভাবে তৈরি হওয়া যায়। হোমওয়ার্ক আমরা করেছিলাম কিন্তু ডেলিভার করতে পারিনি।
কারণ ৪: বড় ম্যাচের চাপ নিতে না পারা: ফাইনাল হলে বাংলাদেশ গড়বড় করে ফেলে। এ নিয়ে চারটি ফাইনাল হারল বাংলাদেশ। এর আগে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল আর গত চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে বাংলাদেশ প্রত্যাশামতো খেলতে পারেনি। তবে কি দক্ষিণ আফ্রিকার ভূত পেল বাংলাদেশকে?
মাশরাফির ব্যাখ্যা: অন্য ফাইনালের চেয়ে আজকে আমরা বেশি প্রস্তুত ছিলাম। বিশেষ করে বোলিং যদি বলেন। ফিল্ডিংয়ে কয়েকটা ক্যাচ ড্রপ হয়েছে। ফাইনালে একটা চাপ থাকে সেটা কালও বলেছিলাম। ব্যাটিংটা আরও একটু চিন্তা করে করলে ভালো হতো। আমি জানি না সাকিবের বিষয়টা কারও মাথায় চাপ তৈরি করেছে কি না। তারপরও আমার মনে হয় ২২০ করার জন্য ড্রেসিংরুমে যথেষ্ট খেলোয়াড় ছিল।
আমি ভাগ্যে কিছুটা বিশ্বাস করি। আমি ওটা (চোকার্স) বলব না। দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দল হওয়ার পর হয়তো বলা যাবে আমরা চোক করছি কি না। উৎস: প্রথম আলো