195215

দেশের দরকারে টেস্টে ফিরতে রাজি মাশরাফি

সাদা জার্সিতে শেষবার খেলেছেন ২০০৯ সালে। অধিনায়ক হিসেবেই। সে টেস্টে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। তাই অধিনায়ক হিসেবে শতভাগ সাফল্যই মাশরাফি বিন মুর্তজার। এরপর প্রায় ৯ বছর কেটে গেলেও আর ফেরা হয়নি ক্রিকেটের সবচেয়ে রাজকীয় এই সংস্করণে। ৫ দিনের শৈল্পিক ও স্বপ্নালু লড়াইয়ের মাঠে। ঝুঁকি এড়াতেই তাকে শুধু ওয়ানডে ক্রিকেটের জন্যই বিবেচনা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। তবে দলের প্রয়োজনে বিসিবি চাইলেই ফিরবেন যখন তখন। শনিবার সংবাদ সম্মেলনে এমন ইঙ্গিতই দিলেন দেশের ইতিহাসের সফলতম ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি।

ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ইনজুরিপ্রবণ ফাস্ট বোলার মাশরাফি। একবার নয়, সাতবার যেতে হয়েছে ছুরিকাঁচির নিচে, শুধু বড় ধরনের অস্ত্রোপচারের জন্য। ছোটখাট ইনজুরি তো আরও কতবার, তার হিসেব নেই। বারবারই ফিরেছেন বিপুল বিক্রমে। প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তিই তাকে ফিরিয়ে এনেছে মাঠে। খেলে যাচ্ছেন দলের অপরিহার্য অংশ হিসেবেই। কিন্তু বিসিবি তাকে ভাবছে শুধু ওয়ানডে ক্রিকেটের জন্যই।

তবে শনিবারের পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। মিরপুরে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে হারের বেদনার পাশাপাশি আরও একটি বড় দুঃসংবাদ পেতে হয়েছে টাইগারদের। সদ্যই টেস্ট নেতৃত্ব পাওয়া বিশ্ব সেরা অল রাউন্ডার সাকিব আল হাসান ইনজুরিতে পড়েছেন। ম্যাচের মাখঝ পথে। ব্যাট করতে পারেননি। নতুন করে অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর ৩১ জানুয়ারি চট্টগ্রামে শুরু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে তারই তো টস করতে নামার কথা। কিন্তু ওই ম্যাচ মিস করবেন সাকিব। তাই বুধবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টের টস হাতে চাই যোগ্য একজন নেতা। আর মাশরাফির চেয়ে ভালো বিকল্প আর কে হতে পারে? তাই সংবাদ সম্মেলনে তাকে উঠে আসে প্রশ্নটা। টেস্ট দলে ডাকা হলে তিনি কি করবেন, কি ভাবনা অধিনায়কের মনে?

মাশরাফির মনে আবার সাদা পোষাকে নামার ইচ্ছেটা ছিল। এখনো আছে? শেষ জাতীয় লিগে তো দুটি ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ খেলে অন্তত চারদিনের ফিটনেস পরখ করে নিয়েছেন। তো ওই প্রশ্ন হয়তো আশা করেননি মাশরাফি। কিন্তু জবাবটা বরাবরের মতো গুছিয়ে দিলেন। বিকল্প অধিনায়ক হিসেবে সাকিবের ডেপুটি মাহমুদউল্লাহ তো আছেন। তারপরও বোর্ড চাইলে প্রয়োজনে সাদা জার্সিতে টেস্টে ফিরতেও আপত্তি নেই মাশরাফির, ‘আমাকে যেটা বললেন – যদি দলের দরকার হয় অবশ্যই আমি চেষ্টা করব। কিন্তু এখন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আছে (ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক)। আমার বিশ্বাস যে ও দলকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। আর সব সিনিয়র খেলোয়াড়রা তো সাপোর্ট করবেই।’

সাকিবকে হারিয়ে এদিন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ফাইনালে পেরে ওঠেনি টাইগাররা। ৭৯ রানের বড় ব্যবধানেই হারতে হয় তাদের। প্রথম টেস্টে সাকিব নেই। আবার ওয়ানডের চেয়ে শ্রীলঙ্কা টেস্টে অনেক তুখোড় এখনো। কিছুদিন আগেই পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করেছে। ভারতের মাটিতে ড্র করেছে। তো সাকিবের মত বিশ্বসেরা অল রাউন্ডার ও পরীক্ষিত অধিনায়ককে ছাড়া নির্ঘাৎ টেস্টে সংগ্রাম করতে হবে বাংলাদেশকে। আর এটাকেই বাংলাদেশ দলের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখছেন মাশরাফি, ‘প্রথমত, এটাই চ্যালেঞ্জ দলের জন্য। এখান থেকে কিভাবে উঠে আসা যায়, এখান থেকে কিভাবে ভালো খেলা যায়। অবশ্যই টেস্ট সিরিজটা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এখন টেস্টের দিকেই তাকিয়ে আছি। আর সাকিব না থাকাটা যে কেউ বলবে আমাদের জন্য অসুবিধার। ইনজুরির সঙ্গে আসলে কিছুই করার নাই। সাকিব সুস্থ্য হওয়া পর্যন্ত একটা খেলা আছে, খেলতে হবে।’

সাকিব হয়তো খুব শিগগিরই ফিরবেন। দ্বিতীয় টেস্টেই দেখা যেতে পারে তাকে। কিন্তু আলোচনা মাশরাফিকে নিয়েই। মাশরাফির প্রায় হারিয়ে যেতে বসা টেস্ট খেলার স্বপ্ন নিয়ে কথা। বাংলাদেশের লড়তে থাকা পেস আক্রমণে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্য মানুষটিকে নিয়ে কথা। ক্যারিয়ারে ৩৬টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন মাশরাফি। ৫১ ইনিংসে বল করে উইকেট পেয়েছেন ৭৮টি। ব্যাট হাতেও কম যাননি। ৬৭ ইনিংসে ৭৮৭ রান করেছেন তিনি। সাদা জার্সিতে নিজেকে প্রমাণ করাই আছে তার। ফেরার সুপ্ত ইচ্ছের কথাও বেরিয়ে এল। কিন্তু বিসিবি যে মাশরাফিকে টেস্টে ভাবছে না, সামনে ভাববে কি না তাও প্রশ্নবিদ্ধ সেটা পরিষ্কার শনিবার রাত ১০টার আগেই। সাকিব নেই। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আগে ঘোষিত প্রথম টেস্টের দলের জন্য যে দুটি নাম জানানো হয়েছে তার একটিও ‘মাশরাফি বিন মুর্তজা’ নয়।

ad

পাঠকের মতামত