194858

‘চাকরি নিয়ে বসে আছি, ভালো কর্মী দিন’

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মতে বাংলাদেশে বেকারের হার দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বেশি। কিন্তু এর মধ্যেই আবার দক্ষ কর্মীর অভাবে ভুগছে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।

বেসরকারি সংস্থা- কাজী আইটি সেন্টার লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক মাইক কাজী জানিয়েছেন, তারা চাকরি দিতে কর্মীদের অপেক্ষায়। কিন্তু ভালো কর্মী পাচ্ছেন না সেভাবে। যারা আমাদের কাছে চাকরির জন্য আসেন তাদের যাচাই করতে গেলে এক শতাংশও টেকে না।

একান্ত সাক্ষাৎকারে মাইক কাজী জানান, ২০১৮ সালে এক হাজার কর্মী নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন তারা। আর এই বছরে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ কোটি ডলার।

আপনারা কেমন কর্মী চাচ্ছেন?

আমাদের কাজ হচ্ছে বিদেশি ক্লায়েন্টদের সঙ্গে। সে জন্য আমরা চাই ইংরেজি ভাষায় দক্ষ কর্মী, যারা ভাল ইংরেজি বলতে, লিখতে এবং পড়তে পারবে। ওই কর্মী কোন বিভাগে পড়াশুনা করছে সেটি মুখ্য নয়।

ইংরেজি জানা ছেলে মেয়ে পাচ্ছেন না?

বাংলাদেশিরা অনেক মেধাবী। তবে তারা ইংরেজিতে দুর্বল। আমরা ইংরেজিতে পরীক্ষা নিলে তারা একটু খারাপ করে। ৩০ শতাংশ পাস করে। আর যদি বাংলায় প্রশ্ন করা হয় তাহলে ৯০ শতাংশ পাস করে। তার মানে ইংরেজি প্রশ্ন বুঝতে তাদের সমস্যা হয়।

আপনাদের কর্মী বাছাই প্রক্রিয়ার পদ্ধতি কী?

কাজী আইটি অভিনব উপায়ে নিয়োগ দিয়ে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। যা গণমাধ্যমেও খবর হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ফেসবুক লাইভে সরাসরি ইন্টারভিউ নেয়া। কাজী আইটির সিইও হিসেবে আমি প্রতি শনিবার সকাল ১১ টায় ফেসবুক লাইভে এসে আগ্রহীদের নানা প্রশ্নের জবাব দেই। আর সেখান থেকেই করে ফেলি প্রাথমিক সিলেকশন।

এরপর আমাদের এইচআর টিম তাদের সাথে যোগাযোগ করে চাকুরি পাওয়ার পরের ধাপগুলো সম্মন্ন করে ফেলে।

এই প্রক্রিয়ায় আমরা অকেককেই নিয়োগ দিয়েছি। আপনাদের মাধ্যমে দেশের চাকরিপ্রার্থীদের জানাতে চাই তারা চাইলে সরাসরি এসে আমাদের নিকুঞ্জ অফিসে সিভি দিতে পারে। অথবা কাজী আইটির ফেসবুক ফ্যানপেজ https://www.facebook.com/ilovekaziit/ তে গিয়ে যোগাযোগ করতে পারেন।

আর যারা সরাসরি ইন্টারভিউ দিতে চান তারা প্রতি শনিবার সকাল ১১ টায় কাজী আইটির ফেসবুক পেজে লাইভে আমার সাথে যুক্ত হতে পারেন।

আর হ্যাঁ, কাজী আইটিতে নতুন অবস্থায় বেতন দেয়া হয় ৩৫ হাজার টাকা। সাথে থাকছে সেলস কমিশন ও বাড়তি আয়ের নানা সুযোগ। সবমিলে অনেকেই এখন ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা আয় করছে।

আপনারা কি শুধু গ্রাজুয়েট নেবেন?

আমাদের রিকোয়েরমেন্ট যদি কেউ ফুলফিল করতে পারে তাহলে আমরা গ্রাজুয়েট না হলেও নেব। আমরা আসলে একজন কর্মীকে তৈরি করি। তাকে আমরা প্রশিক্ষণ দেই। আমরা খুব শিগগিরই প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট করব, যেখানে আমরা দক্ষ জনশক্তি তৈরি করব।

আপনাদের কাজের ধরণটা সম্পর্কে যদি বলেন…

আমরা ডে এবং নাইট- ‍দুই শিফটে লোক নিয়োগ করি। আমাদের এখানে কাজ করতে হলেও কাউকে জাভা প্রোগ্রাম বা অন্য কোনো প্রোগ্রাম জানতে হবে সেটা কিন্তু না।

আমরা ইউএসের বিভিন্ন ব্যাংকের কাজ বাংলাদেশে বসে করে দেই। ব্যাংকের বিভিন্ন আইটি সাপোর্ট আছে, মর্টগেজের কাজ, তাদের বাড়িঘরের লোন আছে- এগুলো মেইনটেনেন্স বাংলাদেশে বসে করি। অমরা অনলাইনেই কাজগুলো করে থাকি।

আমাদের প্রতিষ্ঠান ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। সেখানকার ব্যাংকের কাছে মর্ডগেজ করা বাড়িগুলো মেনটেনেন্স করার জন্য আমাদের লোক নিয়োগ দেয়া আছে। বাংলাদেশে বসে তাদের কাজগুলো মনিটরিং করা হয়। কখনো স্কাইপ, কখনো ফোনে ও বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

আমরা ব্যাংক, বিমা, লিগ্যাল সার্ভিসসহ বিভিন্ন সেক্টর নিয়ে কাজ করি। কনসালটিং, টেকনোলজি, আউটসোর্সিং ও পরবর্তী প্রজন্মের সেবা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

আপনাদের কাজের চাহিদা কেমন?

আমাদের যে কাজ আসছে তার ১৫ শতাংশও আমরা শেষ করতে পারছি না। আমাদের ৬০-৭০ শতাংশ বাকি আছে মার্কেট ম্যাচিউরিটি করার জন্য।

আইটি খাতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা কেমন দেখছেন?

বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রপ্তানি আয় আসে পোশাক খাত থেকে। গত অর্থবছরে যা প্রায় ২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। পোশাক খাত থেকে এর চেয়ে প্রায় পাঁচগুণ বেশি আয় করে চীন। তবে এতো আয় করেও চীন পোশাক উৎপাদন থেকে ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে। তারা পোশাকের চেয়ে বহুগুণ বেশি প্রাধান্য ‍দিচ্ছে মেশিনারিজ উৎপাদন ও আইটি খাতকে।

শুধু চীন নয়, সারা বিশ্ব বর্তমানে আইটি খাতকে ধরছে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে। সেই ক্ষেত্রে, বাংলাদেশ সরকারও পিছিয়ে নেই, ২০২১ সালকে সামনে রেখে তারা পাঁচ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তা অত্যন্ত ইতিবাচক। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি আরো অনেক বেশি রপ্তানি আয় করা সম্ভব যদি সঠিক পথে চলা যায়।

সরকার এই খাতে কেমন সহযোগিতা করছে?

বিশ্বখ্যাত গবেষণা প্রতিষ্ঠান বোস্টন কনসালটিং গ্রুপ(বিসিজি) এরই মধ্যে আমাদের সাথে কাজ করা শুরু করেছে। এক্ষেত্রে সরকার আমাদের সহযোগিতা করছে। আমি মনে করি, এটা সরকারের খুবই ভালো উদ্যোগ। দেশের আইটি সেক্টর তাদের কাছ থেকে বহু কিছু পেতে পারে। তবে তাদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ নিতে আমাদেরও চেষ্টা থাকতে হবে।

আইসিটি মন্ত্রণালয়ও খুব ভালো করছে বিশেষ করে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সবসময় দেশের আইটি খাতের উন্নয়নে ভালো ভালো উদ্যোগ নিচ্ছে। নতুন মন্ত্রী হিসেবে আইটি বিশেষজ্ঞ মোস্তফা জাব্বার দক্ষভাবে এই খাতকে এগিয়ে নিবেন সেই আশাই করি।

আইটি খাতে লোকজন কেমন আসছে?

আইটি খাতের চাকরিকে এখনও অনেকেই সিকিউর মনে করে না। তাদের ধারণা পাল্টাতে উদ্যোগ নিতে হবে। তবে আসার বিষয় হচ্ছে তরুণরা এখন এটিকে পেশা হিসেবে নিতে চাচ্ছে। যেটা আগে ছিল না। আমরা জব ফেয়ারে এ নিয়ে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি।

আপনি তো আমেরিকায় ছিলেন। সেখান থেকে দেশে কেন?

আমি খুব ছোটবেলায় আমেরিকায় চলে যাই, সেখানেই বড় হয়েছি। জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে আমি দেশকে মনে করেছি। ধীরে ধীরে দেশের প্রতি ভালোবাসা জমা হয়েছে আমার। আর তাই দেশের জন্য কিছু করার তাগিদ থেকেই এদেশে অফিস নিয়ে কাজ করছি।

আমার মতো বহু এনআরবি (নন রেসিডেন্স বাংলাদেশি) রয়েছে যারা ভালো সুযোগ পেলে এদেশে বিনিয়োগ করবে। এটা সরকারের আরো বেশি করে ভাবা দরকার। বিনিয়োগ পরিবেশ ভালো করতে নতুন উদ্যোগ আশা করছি আমরা।

এদেশে ব্যবসা শুরুর গল্পটা কেমন?

কাজী আইটি অনেক ভালো প্রত্যয় নিয়ে ২০১০ সালে বাংলাদেশে কাজ শুরু করেছে। কোম্পানির শুরুটা যুক্তরাষ্ট্রে হলেও বাংলাদেশ নিয়ে আমরা বড় করে ভাবছি।

বর্তমানে এদেশে আমাদের তিনটি অফিস। নিকুঞ্জ ১২ নম্বর রোডের প্রধান অফিসের পাশাপাশি রাজধানীর ধানমন্ডিতে একটি ও ঢাকার বাইরে রাজশাহীতে আরও একটি অফিস নিয়েছি আমরা। আমরাই প্রথম ঢাকার বাইরে কোন বিভাগীয় শহরে বড় পরিসরে কাজ শুরু করেছি।

আমরা নতুনত্বে বিশ্বাসী তাই অভিনব উপায়ে নিয়োগ দিতেও কার্পণ্য করি না। আমরা মনে করি যে কেউ নিজেকে যোগ্য মনে করে কাজী আইটিতে কাজ করতে চাইলে তার জন্য আমাদের এখানে সুযোগ আছে।

তবে তাকে অবশ্যই ইংরেজিতে দক্ষ হতে হবে। আইটিতে কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই লোক নিচ্ছি আমরা। যাদেরকে আমরাই সব রকমের প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করে নেব। যত ভালো কর্মী পাব আমরা ততই নিয়োগ দিতে পারব। কারণ লোক পেলে আমরা আমেরিকাতে নতুন কোম্পানি কিনে নেব। আগামী ২০ বছরে এক লাখ লোকের কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষমাত্রা রয়েছে আমাদের।

সূত্র: ঢাকাটাইমস

ad

পাঠকের মতামত