‘আমি একটা সেলিব্রেটি আর তেলাপোকাও একটা পাখি!’
বিনোদন.ডেস্ক।।
শোবিজে এ সময়কার অন্যতম আলোচিত নাম ফারিয়া শাহরিন। ‘কাস্টিং কাউচ’ নিয়ে মুখ খুলে রীতিমতো তিনি সমলোচনায় পড়েছেন। অনেকে বাহবাও দিচ্ছেন। তিনি তাঁর অবস্থান পরিস্কার করতে মুখোমুখি হয়েছেন বাংলা ইনসাইডারের।
বাংলা ইনসাইডার: আপনাকে নিয়ে তো মিডিয়া দুই পক্ষ হয়ে গেল…
ফারিয়া শাহরিন: (হাঁসি) তাহলে আমি আলোচনায়?
কেন, আলোচনায় আসার জন্যই এমন বেঁফাস মন্তব্য?
আমার যতদূর মনে পড়ে গত দু বছর আগে, আপনার সঙ্গে একবার কথা হয়েছিল এ বিষয় নিয়ে। তখনও আমি স্পষ্ট করে কথাগুলো বলেছি। আপনি ছাপাননি! অনেককেই বলেছি। কেউ আমার কথায় সাড়া দেয়নি। এখন তো এটা কোন না কোন মাধ্যমে এসেছে। অনেকেরই তাতে ঘা লেগেছে। আমি আমার জায়গায় তখনও স্ট্রং ছিলাম। এখনও স্ট্রং আছি।
আপনি কিন্তু তখন ঠিক এই কথাগুলো বলেননি। বলেছিলেন পাওনা টাকা নিয়ে সমস্যা। সেটা ছাপা হয়েছিল..
হতে পারে। শোবিজে এসে আমি এত এত সমস্যা দেখেছি। কোনটা রেখে যে কোনটা বলেছি ঠিক খেয়ালও নেই।
এত এত সমস্যা ?
কাস্টিং কাউচ নিয়ে তো এখন তোলপাড় হচ্ছে। তার আগে আমি কথা বলেছি ঠিকমতো পেমেন্ট পাইনি বলে। আমি নাম উল্লেখ করে বলেছি মিডিয়ায়। আমি রাগ করে মিডিয়া ছেড়ে চলে গেলাম। কই? তখন কিন্তু কোন সিনিয়ররা এসে বলেননি এই মেয়ে তুমি কেন মিডিয়া ছেড়ে যাচ্ছো। তুমি না এখানে কাজ করতে এসেছিলে। সমস্যা কী আমাদের বলো। আমি জানি আমি কতবড় স্টার। সেটা শোবিজে কাজ করা আরেকজনকে বলে দিতে হবে না। আমি এখন মুখ খুলাতে সবাই আমার উপর একরকম ঝাঁপিয়ে পড়েছে।
বন্যা মির্জা সহ সহকর্মী অনেকেই আপনার বক্তব্যের সমলোচনা করেছেন…
বন্যা আপু আমার সিনিয়র। সেদিন এক টিভি লাইভেও তাঁর মুখোমুখি হয়েছি আমি। আসলে টোটাল ব্যাপারটা এমন, সয়ে যাবে কিন্ত মুখ খুলতে পারবে না। আমার বাবা যদি অন্যায় করে সেটা নিয়ে আমি মুখ খুলতে পারবো না? জাত যাবে সে ভয়ে মুখ না খুলে আমি সাধু মেয়ে হয়ে থাকতে পারবো না।
সিনিয়রদের সহযোগিতা একদমই পাচ্ছেন না?
তাঁদের যুক্তি আমি কেন বলেছি শোবিজ খারাপ। তাতে সবাইকে ঢালাওভাবে বলা হয়েছে। দেখুন ভালো খারাপ সব জায়গাতেই আছে। এটা কমন কথা। কিন্তু যখন খারাপটা বেশি হয়ে যায়। তখন এর বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানো উচিত। হলিউড- বলিউডে অভিনেত্রীরা একের পর এক মুখ খুলছে। তারা মুখ খুলছে আর অমনি ইন্ডাস্ট্রি খারাপ হয়ে গেল? সমস্যাটা কেউ আমরা চিরতরে শেষ করতে উদ্যোগী হচ্ছি না। যে সমস্যার কথা বলছে তার পেছনে সবাই লাইন বেধে রাখি। এটাই এখন যুগ হয়ে গেছে। সিনিয়ররা বলুক কয়জন এমন অবস্থায় পড়েননি। যদি কখনো পড়েও থাকে তখন মুখ খুলেনি কেন? আমরা বা আমাদের পরের যারা আসছি তাহলে তাদের হয়তো এ নিয়ে মাথা ব্যাথা করতে হতো না।
তাহলে এটা বুঝাচ্ছেন, তারা মেনে নিয়েছে নয়তো এড়িয়ে গেছেন?
হ্যাঁ এটাই হয়েছে। এটাই হয় সাধারণত। আমি যখন বাংলালিংকের বিজ্ঞাপনটি করলাম। কতশত প্রস্তাব। আপনি খেয়াল করে দেখবেন নতুন কেউ চমক দেখালে তার প্রস্তাবের অভাব নেই। তাদের ব্যস্ততা আমার চেয়ে আপনারাই ভালো জানেন। এই যে এত কাজের অফার, সেটা কিন্তু সবসময় সৎ উদ্দেশ্যে হয় না।
আপনাকে একটা অনুরোধ করি। এই ইন্টারভিউ প্রকাশ না করলে খুশি হবো…
আশ্চর্য্য, কেন?
প্লিজ আমি আর কোন নিউজ চাইনা। আমি আর কোন আলোচনায় আসতে চাই না বা এটেনশন পেতে চাইনা। আর এই নিউজের সুবাধে কাজও পেতে চাই না। সত্যি বলার জন্য আমাকে যদি মিডিয়া ছাড়তে হয় আমি ছেড়ে দিব খুশি মনে। আমি একটা সেলিব্রেটি আর তেলাপোকাও একটা পাখি,‘আমাকে তো কেউ চেনে না’। সুতরাং আমি মিডিয়াতে থাকি বা না থাকি সেটাতে কারো কিছু আসে যায় না। মিডিয়াতে এসে আমি আপনাদের ভালবাসা পেয়েছি। নানা সময়ে আপনারা আমার সঙ্গে ছিলেন। দর্শকরা আমার কাজের মাধ্যমে আমাকে পছন্দ ও প্রশংসা করেছে। সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। একটা কথা সবার জেনে রাখা উচিত, মিডিয়াতে আলোচনায় আসার জন্য মিথ্যে বলে আমার দুই টাকা আয় করতে হবে না। দিনে এখন একশোটা ফোন আসে কাজের জন্য। দরকার নেই আমার কাজ। আমি আবার দেশের বাইরে চলে যাবো। বেড়াতে আসছিলাম দুইদিনের পাখি হয়ে, আবার ফিরে যাচ্ছি। আপনারা দোয়া রাখবেন আমার জন্য। যাওয়ার সময় একটা শিক্ষা নিয়ে যাচ্ছি,‘এ দেশ সত্য বলাকে আলোচনায় আসার ধান্দা মনে করে। সত্য আর বিবেকের কবর না দিলে আপনি কবরেও চলে যেতে পারেন এদেশে’
আসলে এই যে কু- প্রস্তাব, কী ধরনের সেটা?
এটা আসলে মুখে বলা সম্ভব নয়। যেমন, তাদের সঙ্গে চা- কফি খাও। কাজের বাইরে ডিনারে যাও। এইটা করো সেইটা করো। বিদেশ যাও শুটিংয়ে। আপনারা সাংবাদিকরা কী এটা জানেন না? কারা করে? এরা আবার জোট বেধে থাকে। এসব কিন্তু আপনারাও কম জানেন না। ব্যক্তিগত সম্পর্কে আপনারাও মুখ খুলেন না।
এর কোন সমাধান?
নেই। এটা রেওয়াজ হয়ে গেছে। আমি কোন মহামানব না যে এটা রাতারাতি পরিবর্তন করতে পারবো। তবে আমার বিশ্বাস। অনেকেই সৎ সাহসটা দেখাবে। উৎস: বাংলা ইনসাইডার