
আজান শুনলে কী নারীদের মাথায় কাপড় দিতে হয়? ইসলামে এর ব্যাখ্যা!!
প্রশ্ন: আজান শুনলে কী নারীদের মাথায় কাপড় দিতে হয়? ইসলামে এর ব্যাখ্যা কী?
বিশেষজ্ঞের উত্তর: আজান শুনলে নারীদের মাথায় কাপড় দিতে হবে এমন কোনোকিছু ইসলামে বলা নেই। এটি একটি সামাজিক রীতি হিসেবে বহু যুগ থেকে পালন হয়ে আসছে। এ সম্পর্কে স্পষ্ট করে কোথাও দলিল নেই। তবে হ্যাঁ, নারীর পর্দা করা ফরজ। পর পুরুষের সামনে একজন নারীর সমস্ত অঙ্গ-প্রতঙ্গ ঢাকা ফরজ। সে হিসেবে, আজানের সময়ে মাথায় কাপড় দেয়া থাকলে কোনো ক্ষতি নেই। শুকরিয়া।
১. আমাদের দেশের অনেক মা বোনদের দেখা যায়, আযানের ধ্বনি শোনা মাত্র তারা মাথায় কাপড় দেন। কখনও ভেবে দেখেছেন এমনটা কেন করা হয়? এটাই কিইসলামের সঠিক রীতি কিনা?
এইখানে দুইটি বিষয় লক্ষ্যনীয়-
* মাথায় কাপড় কখন দেওয়া উচিৎ?
নারীদের মুখমণ্ডল ও হাতের কব্জি ছাড়া শরীরের সমস্ত কিছুইতাদের লজ্জাস্থান। যা গায়ের মাহরাম বা পরপুরুষের সামনেসর্বাবস্থায় ঢেকে রাখতেই হবে। কাজেই আযান শুনেনয় বরং মাহরাম ছাড়া অন্য যেকোনো পুরুষের সামনে মাথাসহ সমস্ত শরীরভালভাবে ঢেকে রাখা ফরজ। আযানের সাথে মাথা ঢেকে ফেলার কোন সম্পর্কনেই।
* আযান শুনলে কি করা উচিৎ?
আযানের ধ্বনি শুনে নারী পুরুষ সকলের করনীয়হল- আযানে যা বলা হতে থাকে তার জবাব দেওয়া। এবং আযান শেষে এইদোয়া পাঠ করা – ‘আল্লা-হুম্মা রাব্বা হা-যিহিদ দা’অতিত্ তা-ম্মাহ, অসস্বালা-তিলক্বা-ইয়িমাহ, আ-তি মুহাম্মাদানিল অসীলাতা অনফাযীলাহ,অবাষহু মাক্বা-মাম মাহমুদানাল্লাযীঅয়াত্তাহ।’ অর্থঃ ‘হে আল্লাহ এই পূর্ণাংগ আহবান ও প্রতিষ্ঠালাভকারী নামাযের প্রভু!
মুহাম্মাদ(সাঃ) কে তুমি অসীলা(জান্নাতেরএকউচ্চ স্থান) ও মর্যাদা দান কর এবং তাঁকে সেই প্রশংসিত স্থানে পৌঁছাও,যার প্রতিশ্রুতি তুমি তাঁকে দিয়েছ।’
(সহীহ মুসলিম ৩৮৬; তিরমিযী২১০; নাসায়ী ৬৭৯; আবূ দাউদ ৫২৫;ইবনু মাজাহ ৭২১; আহমাদ১৫৬৮)
২.
আজানের ডাকে মেয়েদের মাথায় ঘোমটা টেনে দেয়ার প্রচলন অনেক আগথেকেই। যদিও ইসলামে মেয়েদের ক্ষেত্রে সব সময়ই মাথা আবৃত করে রাখার আদেশদেয়া আছে। তবে আজান শোনা গেলেই কেবল এ আদেশ পালনের হিড়িক পড়ে যায়।
এ প্রসংগে বোন কামরুন্নাহার রুবী তার অভিমত প্রকাশ করেন এভাবে –
” ইসলামে এমন কোন দিকনিদের্শনা দেয়া নেই যে, আজানের ডাক শুনলেই মাথায় ঘোমটা টেনে দিতে হবে। এটা কিছু মানুষের বানানো একটা বিষয়। তা ছাড়া ঘোমটা দেয়া,শরীরকে আবৃত করে রাখা তো নিত্যকার বিষয়। মেয়েদের জন্য ইসলামে এ বিধান সব সময়ের জন্য। অনেকেই সব সময়মাথায় ঘোমটাহীন, অনাবৃত শরীর নিয়ে চলাফেরা করে আর আজান শুনলেইমাথায় ঘোমটা টেনে দেয়। এটা খুবই দুঃখজনক। আমাদের উচিত কেবল আজান দিলে নয়, সর্বক্ষণ মাথায়ঘোমটা দিয়ে রাখা।”
আজানের সময় মাথায় কাপড় দেওয়া প্রসঙ্গে বোন ফাহমিদা বিশ্বাস লিলি তার অভিমত প্রকাশ করেন এভাবে –
“আজানের সময় মাথায় ঘোমটা দেয়ার বিষয়ে ইসলামে কোন নির্দেশনাআছে বলে আমার জানা নেই। এটা একটা সামাজিকপ্রচলন। কেউ কেউ আবার অতিভক্তি থেকে আজানের সময় মাথা ঢেকেরাখেন। তবে অনেক ক্ষেত্রে এটা একেবারেই লোক-দেখানো একটা বিষয় হয়েদাঁড়িয়েছে।তা না হলে অন্য যেসব সময়ে মাথায় ঘোমটা দেয়া অত্যাবশ্যক সে সময়েঘোমটাহীন থেকে কেবল আজানের সময় ঘোমটা দিয়ে মাথা ঢাকার আর কী মানে থাকতে পারে?আজানের সময় খোশগল্প, গান শোনা এবং ইসলামনিষিদ্ধ অনেক কাজে লিপ্ত থেকে কেবল মাথায় ঘোমটা টেনে ধরলে সেটা কোন উপকারেআসবে বলে মনে হচ্ছে না। পর্দা কাউকেদেখানোর জন্য নয়, নিজেকে সংযত রাখার জন্য হওয়া উচিত।”