194522

হোটেলে প্রেমিক-প্রেমিকার লাশ: উদ্ধার ‘সুইসাইড নোট’

বর্তমান সমাজে প্রেম একটি কমন বিষয়। এই ধরাবাহিকতায় দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক করে আসছিলেন মিন্টু দেব ও রুমি পাল যুগল। তারা ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখছিলেন যাতে দু’জনে মিলে বাকী জীবনটা সুখে দুঃখে এক সঙ্গে কাটিয়ে দিতে পারেন।

তবে তারা নিজেদের সম্পর্কের বিষয়ে পরিবার থেকে সমর্থন পাচ্ছিলেন না। সম্প্রতি সময়ে রুমি পালের বিয়ে অন্যত্র দিতে ওঠেপড়ে লাগে তার পরিবার। তাই দু’জনের এই আলাদা হয়ে যাওয়ার শঙ্কা এলোমেলো করে মিন্টু-রুমির কমল ভালোবাসার মনকে। তাই শঙ্কা থেকেই একই সঙ্গে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন তারা দু’জন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, যে হোটেলে তারা দু’জন ওঠেছিলেন, সেখানে তাদের কক্ষে সুইসাইড নোট পাওয়া গেছে। এছাড়া রুমিকে হত্যা করে মিন্টু নিজে আত্মহত্যা করেছিলেন কিনা, তা জানতে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার অপেক্ষা করছে পুলিশ।

মিন্টু দেব সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার জগন্নাথবাড়ি গ্রামের মতিলাল দেবের ছেলে। আর সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট উজানীনগর গ্রামের মিলন পালের মেয়ে রুমি পাল। মিন্টু ও রুমির মধ্যে দূর সম্পর্কের আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে বলে জানা যায়। রুমি ও মিন্টু সম্পর্কে খালাতো ভাই বোন।

সূত্র মতে, জগন্নাথপুরে আত্মীয়দের বাড়িতে যাওয়া-আসা ছিল রুমি পালের। এ থেকেই মিন্টু দেবের সঙ্গে তার ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রবিবার (২১ জানুয়ারি) তারা দু’জনে সিলেট নগরীতে এক সঙ্গে মিলিত হন। নগরীর সোবহানীঘাট পয়েন্টে ‘হোটেল মেহেরপুরে’ মুসলিম ও দম্পতি পরিচয়ে নিজেদের নাম ‘মিন্টু মিয়া’ ও ‘রুমি বেগম’ লিখে ২০৬নং কক্ষে ওঠেন তারা।

এখানে জানিয়ে রাখি, মিন্টু দেব একটি বেসরকারি ভোগপণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। অপরদিকে, রুমি পাল জৈন্তাপুরের একটি স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন।

হোটেল সূত্রে জানা গেছে, রবিবার (২১ জানুয়ারি) সন্ধ্যার পরে রুমি পাল তার দুলাভাইয়ের মোবাইল ফোনে ম্যাসেজ পাঠান। তাতে লেখা ছিল ‘সিলেটে হোটেল মেহেরপুরে ২০৬নং কক্ষে আমরা আছি। আমরা আত্মহত্যা করছি’। হোটেলে এসে রুমির দুলাভাই হোটেল ব্যবস্থাপককে জানান। রাত ১০টার দিকে পুলিশ হোটেলের ওই কক্ষের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে রুমির লাশ বিছানায় দেখতে পায়, পাশেই সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলছিল মিন্টু দেবের নিথর দেহ।

এদিকে, মিন্টু ও রুমির হোটেল কক্ষ থেকে সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছে পুলিশ। জানা গেছে, ওই সুইসাইড নোটে নিজেদের মৃত্যুর বিষয়ে বিস্তারিত লিখে গেছেন তারা। তবে পুলিশ এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ।

পুলিশের ধারণা, মিন্টু দেব প্রথমে রুমি পালকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার পর নিজে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আব্দুল ওয়াহাব বলেন, আলামত দেখে মনে হয়েছে মিন্টু প্রথমে রুমিকে হত্যা করেন। পরে নিজে আত্মহত্যা করেছেন। তবে বিষয়টি আমরা সবদিক থেকে খতিয়ে দেখছি। তবে এ সময় আমরা সুইসাইড নোট পেয়েছি। তবে তাতে কি আছে, তা তদন্তের স্বার্থে এখনই বলা যাচ্ছে না।

মিন্টু ও রুমির মরদেহ ওসমানী হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের অপেক্ষা করছে পুলিশ।

নগরীর কোতোয়ালী থানার ওসি গৌছুল হোসেন জানান, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে জানা যাবে, মিন্টু কি রুমিকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করেছেন, নাকি এখানে অন্য কোনো রহস্য আছে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছে।

ad

পাঠকের মতামত