189448

আসাম থেকে ৩০ লাখ হিন্দু-মুসলিমকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে বিজেপি!

উত্তর-পূর্ব ভারতের বিজেপি শাসিত রাজ্য আসামে রোববার মধ্যরাতে জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) তালিকা প্রকাশিত হচ্ছে। ৬৫ বছর পর এই নাগরিক তালিকা প্রকাশ নিয়ে আসামের ৩০ লাখ বাঙালি হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

আশঙ্কা করা হচ্ছে, ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করে এসব বাঙালি হিন্দু ও মুসলিমদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে। এ নিয়ে আসামজুড়ে প্রবল উৎকন্ঠা, আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। একইসঙ্গে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে আসামে ৬০ হাজারের বেশি সেনা মোতায়েন করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। যেকোনও ধরনের সংঘাত ঠেকাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে নেওয়া হয়েছে নানা ব্যবস্থা।

ভারতে একমাত্র আসামেই রয়েছে ন্যাশনাল রেজিস্ট্রার অব সিটিজেনশিপ (এনআরসি)। এআরসির সমন্বয়ক প্রতীক হাজেলা ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে পেশ করেছেন এনআরসির খসড়া তালিকা। তাঁর দেওয়া তালিকামতে, আসামের বাসিন্দাদের মধ্যে প্রায় ৩০ লাখের নাগরিকত্ব অবৈধ।

তবে রোববার সাংবাদিকদের প্রতীক হাজেলা বলেছেন, ‘মধ্যরাতে যে তালিকা প্রকাশ হবে সেটা সুপ্রিম কোর্ট নির্ধারিত সময়ের মধ্যে খসড়া তালিকার প্রথম অংশ। মানুষ যাতে তাদের নাম আছে কিনা জানতে পারে সেজন্য অনেক ব্যবস্থা নিয়েছি। মানুষকে বলেছি, এটা মাত্র প্রথম অংশ। নিবন্ধনের জন্য আবেদনকারী সবার নাম এখানে নেই। কারণ যাচাই প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয়নি।’

নাগরিক নিবন্ধনের দায়িত্বে থাকা আসামের অর্থ ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন, ‘আসামে বসবাসরত ‘অবৈধ বাংলাদেশি’দের চিহ্নিত করতেই এনআরসি করা হয়েছে। এতে যাদের নাম থাকবে না, তাদের ফেরত পাঠানো হবে।’ তবে যেসব হিন্দু বাংলাদেশে নিপীড়নের শিকার হয়ে আসামে আশ্রয় নিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি অনুসারে তাদের আসামে আশ্রয় দেওয়া হবে বলেও জানান বিশ্ব শর্মা।

তার বক্তব্য অনুযায়ী, কেবল বাংলাদেশি মুসলিম অনুপ্রবেশকারীকে বিতাড়িত করার জন্যই নাগরিক তালিকাটি প্রকাশ হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে বিজেপি সরকারের এই ধরনের পদক্ষেপ আসামে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। স্থানীয় মুসলিম নেতাদের অভিযোগ, এনআরসিকে ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের মতো তাদেরও রাষ্ট্রহীন করা হবে।

এদিকে আসামে তিনটি ছাত্র সংগঠন- মুসলিম স্টুডেন্ট ইউনিয়ন অব আসাম, কৃষক শ্রমিক উন্নয়ন পরিষদ ও গয়রা ময়রা ইউরা ছাত্র পরিষদ আসামের জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। রোববার মধ্যরাতে প্রকাশিত তালিকায় নাম না থাকলে প্রতিক্রিয়া না দেখানোরও আহ্বান জানান তারা। সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে পার্লামেন্টের শীতকালীন অধিবেশনে উত্থাপনের জন্য নির্ধারিত নাগরিকত্ব (সংশোধন) বিল বাতিলের দাবি জানানো হয়।

অন্যদিকে ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেসের আশঙ্কা, ৩০ লাখ মানুষের গায়ে বিদেশি তকমা লাগিয়ে দেওয়া হলে ফের অশান্তির আগুন জ্বলবে। আসামের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রবীণ কংগ্রেস নেতা তরুণ গগৈ এক সাংবাদিক সম্মেলনে পাল্টা প্রশ্ন করেন, নাগরিকত্ব প্রমাণে ব্যর্থ রাজ্যবাসী কোথায় যাবেন? নিজেদের দারিদ্র বা অন্যান্য কারণে নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে না পারা মানুষগুলো যে কথিত বাংলাদেশি, সেই প্রমাণও তো কারও কাছে নেই। ফলে বাংলাদেশ তাঁদের কোনো অবস্থাতেই গ্রহণ করবে না।

গগৈয়ের মতে, বহু গরিব মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। বন্যায় ফি বছর অনেকের ঘর-গৃহস্থালির জিনিসপত্র ভেসে যায়। তাই আইনি লড়াই ঠিকমতো লড়তে না পেরে অনেকেই নিজেদের ভারতীয়ত্ব প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এঁদের গায়ে বিদেশি তকমা লাগিয়ে বিতাড়নের উদ্যোগ নেওয়া হলে রাজ্যে অশান্তির আগুন জ্বলবে। আর সেটা হলে রাজ্যের বিজেপি সরকারই দায়ী থাকবে।

পরিস্থিতি যে খুব খারাপ, সেটা মেনে নিয়েছেন ভারতের কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা রাজেন গোঁহাইও। তিনি সাংবাদিকদের সামনে মন্তব্য করেন, রাজ্যের সংখ্যালঘু মানুষ এআরসি নিয়ে আতঙ্কিত।

আসামের মানবাধিকারকর্মী সাধন পুরকায়স্থ এ প্রতিনিধিকে বলেন, ‘আসামে বাঙালিদের অবস্থা রোহিঙ্গাদের চেয়েও খারাপ। রোহিঙ্গারা শরণার্থী হয়ে অন্যত্র যেতে পারছে, আসমের বাঙালিদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। বিজেপির আমলে জেলে বসেই চিতা বা কবরেই মুক্তির প্রার্থনা তাঁদের একমাত্র ভবিতব্য।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বা পাকিস্তানে সংখ্যালঘুরা প্রতিবাদ করতে পারেন। এখানে কান্নাকাটিরও সুযোগ নেই।
উল্লেখ্য, আসামে ৬৮ লাখ পরিবারের ৩ কোটি ৩৫ লাখ মানুষ এনআরসি’তে অন্তর্ভূক্ত হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। তবে কর্তৃপক্ষ ২ কোটির মতো নাম প্রথম তালিকায় প্রকাশের জন্য বাছাই করেছে।

ad

পাঠকের মতামত