বাংলাদেশ ব্যাংকের সতর্কতা ‘বিটকয়েন’ প্রসঙ্গে
দুনিয়াজুড়ে আলোচিত ভার্চুয়াল মুদ্রা ‘বিটকয়েন’ বৈধতা না পেলেও অনলাইন মাধ্যমে এর লেনদেন হচ্ছে। বাংলাদেশেও এর ব্যবহার হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে ‘অবৈধ’ এই ডিজিটাল মুদ্রায় লেনদেন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল বিভিন্ন সংবাদপত্রে এসংক্রান্ত বিজ্ঞাপন দিয়ে ব্যবহারকারীদের সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তথ্য-প্রযুক্তি খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, বিটকয়েন লেনদেনে কোনো ব্যাংকিং ব্যবস্থা নেই। ইলেকট্রনিক মাধ্যমে অনলাইনে দুজন ব্যবহারকারীর মধ্যে সরাসরি (পিয়ার-টু-পিয়ার) আদান-প্রদান হয়। লেনদেনের নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করা হয় ক্রিপ্টোগ্রাফি নামের পদ্ধতি। অনলাইনে ডলার-পাউন্ড-ইউরোর পাশাপাশি কেনাকাটা করা যায় ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েনে। তবে অন্যান্য মুদ্রাব্যবস্থায় যেমন সে দেশের সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক জড়িত থাকে, বিটকয়েনের ক্ষেত্রে তা নয়। ২০০৯ সালে সাতোশি নাকামোতো ছদ্মনামের কেউ কিংবা একদল সফটওয়্যার ডেভেলপার নতুন ধরনের ভার্চুয়াল মুদ্রার প্রচলন করে। এ ধরনের মুদ্রা ক্রিপ্টোকারেন্সি নামে পরিচিতি পায়।
নাকামোতোর উদ্ভাবিত সেই ক্রিপ্টোকারেন্সির নাম দেওয়া হয় ‘বিটকয়েন’। তবে এরই মধ্যে বিটকয়েনে হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটে। এতে বিশ্বজুড়ে বিটকয়েনের দাম পড়তে শুরু করে। গত সপ্তাহে এক দিনে ৩০ শতাংশ দার হারিয়েছে বিটকয়েন।
অনিরাপদ এই মুদ্রা সম্পর্কে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অনলাইনভিত্তিক ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা বা ক্রিপ্টো কারেন্সি যথা-বিটকয়েন, ইথেরিয়াম, রিপ্পেল, লিটকয়েন ইত্যাদি বিবিধ বিনিময় প্লাটফর্মে লেনদেন হচ্ছে। এসব ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা কোনো দেশের বৈধ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ইস্যুকৃত বৈধ মুদ্রা নয় বিধায় বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৪৭, সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ সমর্থিত হয় না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সতর্কবার্তায় আরো বলা হয়েছে, অনলাইনে নামবিহীন/ছদ্মনামিক প্রতিসঙ্গীর সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল মুদ্রায় লেনদেনের দ্বারা অনিচ্ছাকৃতভাবে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ সম্পর্কিত আইনের লঙ্ঘন হতে পারে। গ্রাহকরা সম্ভাব্য আর্থিক ও আইনগত ঝুঁকিসহ বিভিন্ন ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারেন। এমতাবস্থায় সম্ভাব্য আর্থিক ও আইনগত ঝুঁকি এড়ানোর লক্ষ্যে বিটকয়েনের মতো ভার্চ্যুয়াল মুদ্রায় লেনদেন বা এসব লেনদেনে সহায়তা প্রদান ও এর প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য সর্বসাধারণকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা ২০১৪ সালেই বিটকয়েন নিয়ে সতর্ক করেছিলাম। গতকাল আবারও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আবারও সতর্ক করলাম। কারণ, কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিংবা কোনো বৈধ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এটি সমর্থিত না। বাংলাদেশের এসংক্রান্ত আইনও এটি সাপোর্ট করে না। কারণ এর মাধ্যমে নানা অপকর্ম হওয়ার সুযোগ আছে। শোনা যাচ্ছে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও কেউ কেউ হয়তো এতে বিনিয়োগ করছে। কিন্তু টাকা কিভাবে ফেরত পাবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এটা যারা ব্যবহার করছে তারা বিরাট ঝুঁকির মধ্যে আছে। বিটকয়েন ব্যবহার থেকে সর্বসাধারণ যাতে বিরত থাকে সে ব্যাপারে আমরা মানুষকে সচেতন করতে চেয়েছি। ’
শুভঙ্কর সাহা বলেন, তার পরও কোনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান যদি এটি ব্যবহার করেন তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইলেকট্রনিক মানি যেমন ক্রেডিট কার্ড কিংবা মোবাইল ব্যাংকিং ইত্যাদির বিপরীতে টাকা থাকে। কিন্তু বিটকয়েনের বিপরীতে কিছু নেই। তাই একে ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন তিনি।