188368

বাড়ির উঠোন থেকে বিশ্ব আঙ্গিনায়

ডেস্ক রিপোর্ট : দেশের ফুটবলের ইতিহাসে অনবদ্য গৌরবময় এক অর্জন এনে দিয়েছেন ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার কলসিন্দুরের সাত কিশোরী। তাদের হাত ধরেই সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম আসরে অপরাজিত চ্যাম্পিয়নের গৌরব অর্জন করেছে বাংলাদেশ। সাত কিশোরী তাই এখন পাদপ্রদীপের আলোয়। কিন্তু তাদের এই উঠে আসার পথটি কিন্তু মোটেও মসৃণ ছিল না। অপরাজিতা হওয়ার পথে প্রতিনিয়ত তাদের অতিক্রম করতে হয়েছে নানারকম প্রতিবন্ধকতা; ভাঙতে হয়েছে সীমাবদ্ধতার যত দেয়াল।

ফাইনালে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ভারতকে হারিয়ে শিরোপা উৎসব করে বাংলাদেশের মেয়েরা। ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার শামসুন্নাহার একমাত্র বিজয়সূচক গোল করেন। গামারীতলা ইউনিয়নের দক্ষিণ রানীপুর গ্রামের কৃষক মো. মিরাস উদ্দিনের ৪র্থ মেয়ে শামসুন্নাহার (১৩)। মিরাস উদ্দিনের অনেক জমি থাকলেও সৎ ভাইয়েরা দখল করে রেখেছেন। যতটুকু অবশিষ্ট আছে, সেই জমি চাষাবাদ করে চলে তাদের সংসার। শামসুন্নাহারের একমাত্র ভাই ইসমাইল প্রতিবন্ধী।

যার নেতৃত্বে কিশোরীরা এমন অভূতপূর্ব সাফল্য পেয়েছে, তার নাম মারিয়া মান্ডা। বয়স ১৫ বছর। ধোবাউড়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ মাইজবাড়ি ইউনিয়নের মঞ্চানন্দপুরে তাদের বাড়ি। মারিয়ার মায়ের নাম এনেতা মান্ডা, বাবার নাম বীরেন্দ্র মান্ডা। বীরেন্দ্র প্রায় ৮ বছর আগে মারা গেছেন। তিন বোনের মধ্যে ছোট মারিয়া মান্ডা এসএসসি পাস করে বর্তমানে কলসিন্দুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে লেখাপড়া করছে। তাদের সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম এনেতা মান্ডা বিভিন্ন বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে সংসার চালান, চালান মারিয়ার লেখাপড়ার খরচও। তাদের জমি বলতে শুধু ভিটাবাড়িটুকু। তাও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

মারিয়া ও শামসুন্নাহারকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়ার কথা থাকলেও গত পাঁচ মাস ধরে তারা এ থেকে বঞ্চিত।

প্রান্তিক জনগোষ্ঠী থেকে উঠে আসা মারিয়া ও শামসুন্নাহাররা যেন বিশ্বমানের খেলোয়াড় হতে পারেন এবং আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে দেশের জন্য আরও বড় সাফল্য এনে দিতে পারেন, এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এ দুটি পরিবারের দাবি, তাদের যেন যথোপযুক্ত পরিচর্যা নিশ্চিত করা হয়।

শামসুন্নাহারের বাবা মিরাসউদ্দিন বেদখল হয়ে যাওয়া জমিগুলোর পুনর্দখল পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চান। এ ছাড়া গ্রামের রাস্তাটি পাকা করারও দাবি করেছেন মিরাসউদ্দিন।

শামসুন্নাহার কলসিন্দুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ বছর জেএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। কৃষক মিরাসউদ্দিন পরিবার নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করেন। তবু মেয়ে শামসুন্নাহারকে পড়াশোনা থেকে সরিয়ে নেননি।
এদিকে মারিয়াদের ভিটাবাড়ি রক্ষা এবং সংলগ্ন নদীর ওপর একটি ব্রিজ দাবি করেছে ওদের পরিবার।

সূত্র : আমাদের সময়

ad

পাঠকের মতামত