বিদেশ থেকে সোনার অলংকার বা সোনার বার দেশে নেওয়ার নিয়মকানুন
স্বর্ণবার : স্বর্ণবার আমদানী নিষিদ্ধ পণ্য নয়। বিদেশ থেকে ফেরার পথে আপনি চাইলে সোনার অলংকারের পাশাপাশি সোনার বার নিয়ে আসতে পারেন। স্বর্ণবার সাধারণত ১০০ গ্রাম, ২০০ গ্রাম বা ১ কেজি হতে পারে। কখনও কখনও ১১৭ গ্রাম বা তার গুণিতক হয়ে থাকে । শুল্ক পরিশোধ সাপেক্ষে একজন যাত্রী ২০০ গ্রাম পর্যন্ত স্বর্ণবার সাথে আনতে পারেন। অলংকারের মত স্বর্ণবার আমদানীর কোন পরিমান শুল্কমুক্ত বা ফ্রি নাই। ১০০ গ্রাম সোনার বারের শুল্ক প্রায় ২৭,০০০ টাকা । ২০০ গ্রাম হলে ৫৫,০০০ টাকা । এই পরিমান গ্রাম এ ওজন হিসেবে সংখ্যা হিসেবে নয়। যাত্রী ২ জন হলে মোট ৪০০ গ্রাম এর ২টি বা ৪টি বার আনতেই পারেন ।
তবে বিপত্তি বাধবে আইনের এই লক্ষণরেখা অতিক্রম করলে। যেমন ১১৭ গ্রাম ওজনের ২টি বার হলে এর মোট পরিমান ২৩৪ গ্রাম যা আমদানী নিষিদ্ধ।সেটি চোরাচালান পর্যায়ে পড়ে এবং সেক্ষেত্রে আপনি অপরাধী। অতিরিক্ত পরিমান স্বর্ণবার ডিএম (ডিটেনশন মেমো ) করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আটক করবে। পরবর্তিতে শুনানী করে ব্যাবস্থা নেয়া হয়।এখানে বলে রাখা ভাল আটককৃত স্বর্ণ কাস্টমস কর্তৃপক্ষ হেফাজত করে এবং আইনানুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে ।প্রযোজ্যক্ষেত্রে মামলাটি বিমানবন্দর থানার মাধ্যমে নিয়মিত আদালতে দায়ের করা হয় এবং আদালতের আদেশমতে ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হয়। কাস্টমস আইনটি মোবাইলকোর্ট আইনের আওতাভুক্ত না হওয়ায় স্বর্ণ আটক বা চোরাচালান সংক্রান্ত কোন মামলা বিমানবন্দর ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে দায়ের করা হয় না বা সেখান থেকে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়না।
অতিরিক্ত সোনার বার ডিএম করে আটক রাখা হলেও সেগুলো বহনকারীর ভাগ্যে কিন্তু জেল/জরিমানা জুটতে পারে। বোনাস হিসেবে আপনার চেহারা পত্রপত্রিকা বা টেলিভিশন চ্যানেলে দেখানো হতে পারে চোরাকারবারি বা পাচারকারী হিসেবে। এটি কারো জন্য আর যাই হোক সম্মানজনক নয়।আটক হলে হয়ত হাতকড়া পর অবস্থায় পুলিশের গাড়ীতে যেতে যেতে পরিচিতিজন বা সহযোগী কেউ কানে কানে বলবে “কইছিলাম না বাধ ভাইঙ্গা যাইব ” ।সামান্য অর্থের লোভে বা অন্য কারো প্ররোচনায় এই অন্যায় কাজটি থেকে বিরত থাকুন।আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকুন। নির্ধারিত পরিমান ট্যাক্স পরিশোধ করুন। সন্দেহ এবং হয়রানী এড়াতে স্বর্ণক্রয়ের মুল রসিদ সাথে রাখুন।
আপনার সাথে শুল্ক পরিশোধযোগ্য অর্থাৎ ১০০ গ্রাম এর বেশি স্বর্ণালংকার বা ২০০ গ্রাম পর্যন্ত সোনার বার থাকলে বিমানবন্দরে পৌছে ব্যাগেজ ঘোষণা ফরমে (ব্যাগেজ ডিকলিয়ারেশন ফরম ) তা উল্লেখপূর্বক কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে অবহিত করুন । ব্যাগেজ ঘোষণা ফরম সহ রেড চ্যানেলে কর্মরত কাস্টমস কর্মকর্তাকে জানান যে “ আমার কাছে এই পরিমান স্বর্ণ আছে। আমি তার জন্য নির্ধারিত ট্যাক্স দিতে চাই”। ঘোষণা ফরমে উল্লেখ না করলে বা রেড চ্যানেলে কাস্টমস কর্মকর্তাকে অবহিত না করলে যদি সার্চ করে বিভিন্ন লুক্কায়িত স্থান থেকে স্বর্ণ উদ্ধার করা হয় তবে বৈধ পরিমান স্বর্ণও অবৈধ হতে পারে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে বা বিনা ঘোষণায় ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার উদ্দেশ্যে নানা অবৈধ পদ্ধতি অনুসরণ করে স্বর্ণ আমদানী বা সাথে রেখে আইন ভঙ্গ করবেন না । ট্যাক্স পরিশোধ করা হলে কাস্টমস কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত চালান কপি সাথে রাখুন। পরবর্তিতে চেক করা হলে চালান কপি বৈধতা প্রমান করবে।চোরাচালান একটি অপরাধ। এটি বিমানবন্দর তথা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্থ করে ।এ সংক্রান্ত কোন তথ্য আমাদেরকে জানাতে পারেন । আপনার পরিচয় গোপন রাখা হবে। আসুন সকলে মিলে চোরাচালান প্রতিরোধে সোচ্চার হই ।
অলংকার ও বার একসাথে আনতে হলে কী করব ? আপনাদের এ রকম অনেক প্রশ্নের উত্তর ও পরামর্শসহ ৩য় পর্ব সাজানোর পরিকল্পনা আছে।
সোনালী পর্ব ০৩ : সোনা আমদানির সাতকাহন
সোনার অলংকার ও সোনার বার আমদানি বিষয়ে ইতঃপূর্বে ২ টি পর্বে কিছু বিষয় অবতারণা করা হয়েছে । কিন্তু যদি কেউ সোনার গয়না এবং সোনার বার একত্রে আনতে চান , তার বেলা ? এ রকম আরো অনেক প্রশ্ন অনেকে এই পেজে বা ফোনে জানতে চেয়েছেন। সে রকম কিছু জিজ্ঞাসা সহ ব্যবহারিক কিছু বিষয় থাকছে এ পর্বে ।
সোনা আমদানির জন্য মনে রাখতে হবে সোনার অলংকার/গয়না এবং সোনার বার/পিন্ড দুটি আলাদা পণ্য । একটির সাথে অপরটির কোন সম্পর্ক বা শুল্ক নির্ধারণের ক্ষেত্রে কোন প্রভাব নেই। আপনি চাইলে দুটি পণ্যই আনতে পারেন। প্রথম পণ্য সোনার গয়না আনার ক্ষেত্রে কোন সীমা ব্যাগেজ রুলে নেই । তবে শুল্কছাড় আছে । ১০০ গ্রাম পর্যন্ত বিনাশুল্কে আনতে পারবেন। এর অতিরিক্ত ১ গ্রাম এর জন্য ১,৫০০ টাকা ট্যাক্স দিতে হবে। কিন্তু দ্বিতীয় পণ্য সোনার বার/পিন্ড আমদানির কোন শুল্ক ছাড় নেই কিন্তু সীমা আছে। ১০০ গ্রাম সোনার বার প্রায় ২৭,০০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২০০ গ্রাম সোনার বার বিদেশ হতে আগত একজন যাত্রী প্রায় ৫৫,০০০ টাকা ট্যাক্স দিয়ে আনতে পারবেন।
ট্যাক্স আপনার পণ্যর বৈধতা দেয়। ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করবেন না । বিমানবন্দরে কারো সাথে অবৈধ লেনদেন করবেন না। কারো মিথ্যা প্রতিশ্রুতিতে কান দেবেন না। হয়রানি এড়াতে স্বর্ণক্রয়ের রসিদ সাথে রাখুন। আপনার আনা পণ্য শুল্কযুক্ত বা ট্যাক্সেবল হলে ব্যাগেজ ঘোষণা ফরমে ক্রমিক ১০ এ “ হ্যাঁ ” অংশ টিক দিন এবং রেড চ্যানেলে শুল্ক কর্মকর্তকে অবহিত করুন। ট্যাক্সেবল না হলে ঘোষণা ফরমে ক্রমিক ১০ এ “ না ” অংশে টিক দিন এবং গ্রীন চ্যানেলে কোন শুল্ক কর্মকর্তা জানতে চাইলে বলুন “ আমার কাছে … পরিমান সোনার গয়না আছে যা ট্যাক্সেবল না”। মামলা শেষ । ঘোষণা ফরমের হালনাগাদ একটি কপি আপনাদের সুবিধার জন্য পোস্টটির সাথে সংযুক্ত করা হল।
কেউ কেউ সামান্য কিছু টাকার লোভে অন্যের দেয়া পণ্য বহন করেন। তাদেরকে বহনকারী/ক্যরিয়ার বলা হয়। সামান্য অর্থের লোভে অন্যের ক্যারিয়ার হয়ে আইন অমান্য করবেন না । এতে আপনার নিজের ক্যারিয়ার ধংশ হতে পারে। এতে আপনি পরিবার বা সমাজের চোখে অপরাধী হিসেবে গণ্য হবেন। অন্যের দেয়া কোন প্যাকেট বা ব্যাগ সাথে আনার পূর্বে নিশ্চিত হয়ে নিন। চেক ব্যাগেজ বা বুকিং দেয়া ব্যাগেজে স্বর্ণ আনবেন না । আনলে বুকিং এর সময় রশিদ সহ বিমান কর্তৃপক্ষকে অবহিত করুন। অন্যথায় হারিয়ে গেলে ক্ষতিপূরণ পাবেন না। আনচেক ব্যাগেজ/ হাত ব্যাগ/ হ্যান্ড ক্যারি তে স্বর্ণ বা মূল্যবান পণ্য বহন করুন। যদি কখনও কোন প্রেক্ষিতে হাত ব্যাগেজও বুকিংয়ে দিতে হয় সেক্ষেত্রে হাত ব্যাগ থেকে স্বর্ণ বের করে পার্স বা পকেটে রাখুন। নিরাপদ থাকুন।
আনন্দের সংবাদ হচ্ছে চোরাচালান রোধকল্পে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ঢাকায় ইতঃপূর্বে শুধু আন্তর্জাতিক আগমন চ্যানেলে ব্যাগেজ স্ক্যানিং করা হলেও সম্প্রতি ভিআইপি চ্যানেল এবং অভ্যন্তরীণ( ডোমেস্টিক) চ্যানেলেও স্ক্যানিং মেশিন সহ কাস্টমস কর্মকর্তাবৃন্দ তৎপর রয়েছেন। এছাড়া বিমানবন্দরের ভিতর এবং বাহিরে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, পুলিশ, এপিবিএন ও গোয়েন্দা সংস্থা সদা তৎপর রয়েছে।
অনেকেই পেজে এবং ফোনে অনেক প্রশ্ন করেছেন। তার কিছু প্রশ্নোত্তর নীচে দেয়া হল। বিস্তারিত জানার জন্য বিমানবন্দর কাস্টমস কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করুন।
১. শরীরে পরা গয়না কি শুল্ক হিসাবের আওতায় আসবে ?
উ: হ্যাঁ । আপনার শরীরে পরা, শরীরে লুকানো, চেক ব্যাগেজ ও হাত ব্যাগেজে রক্ষিত, নতুন, পুরাতন, উপহার, অনুদান, কাঁচা , পাঁকা , অলংকার/গয়না , বার/পিন্ড এবং মোডিফাইড বার সহ সকল প্রকার সোনা শুল্ক হিসাবের আওতায় আসবে।
২. ব্যাগেজ নীতমালা কি ২০১৫ সালে সংশোধন হতে পারে ?
উ: সময়ের প্রয়োজনে সরকার ব্যাগেজ নীতিমালা পরিবর্তন করে থাকে । বর্তমান ব্যগেজ নীতিমালা অর্থাৎ যাত্রী (অপর্যটক) ব্যাগেজ (আমদানি) বিধিমালা-২০১২ সালে প্রণীত। তবে এটি ২০১৩ এবং ২০১৪ সালে সংশোধন করা হয়েছে। যদি ২০১৫ -১৬ সালের বাজেট উপলক্ষে ব্যাগেজ নীতিমালায় কোন পরিবর্তন হয় তা এই পেজে আপনাদের জানিয়ে দেয়ার ইচ্ছা রইল। যাত্রী (অপর্যটক) ব্যাগেজ (আমদানি) বিধিমালা ২০১২ যা সর্বশেষ ৫ জুন ২০১৪ তারিখে সংশোধীত এখানে সংযুক্ত করা হল। আশাকরি সম্মানিত যাত্রীবৃন্দে ব্যাগেজ, আমদানি এবং শুল্ক সংক্রান্ত অনেক প্রশ্নের উত্তর পাবেন। http://www.nbr-bd.org/baggage_rules/baggage_rules.pdf
৩. অন্যের দেয়া স্বর্ণ আনলে কি ট্যাক্স দিতে হবে ?
উ: স্বর্ণ নিজের হোক বা অন্যের হোক ট্যাক্স প্রদানযোগ্য বা ট্যাক্সেবল হলে ট্যাক্স দিতে হবে।
৪. ব্যাগেজ রুল এর অতিরিক্ত বা বাণিজ্যিক পরিমান স্বর্ণ আনা যায় কিনা ?
উ : ব্যাগেজ রুল এর অতিরিক্ত বা ব্যাবসায়িক প্রয়োজনে বাণিজ্যিক পরিমানে স্বর্ণ আনা যায়। কনসাইনমেন্ট করে বাণিজ্য মন্ত্রনালয়,বাংলাদেশ ব্যাংক এবং এনবিআর এর অনুমতি সাপেক্ষে বাণিজ্যিক প্রয়োজনে সোনা আমদানি করা যায়। পথ খোলা আছে।
৫. রূপা বা অন্য অলংকার আমদানি বিষয়ে কি নীতি ?
উ: রূপা আমদানীর নীতিমালা ব্যাগেজরুল এ উল্লেখ আছে । তবে অন্য কোন অলংকার ব্যাক্তিগত প্রয়োজনে সীমিত পরিমানে ট্যাক্স ছাড়া আনা যাবে। কিন্তু বাণিজ্যিক পরিমানে হলে মোট মূল্যের উপর শুল্ক পরিশোধ করতে হবে।
৬. যে কোন যাত্রীই কি সোনা আনতে পারবেন ?
উ: হ্যাঁ । যে কোন যাত্রীই সোনা আনতে পারবেন। তবে ১২ বছরের কম বয়সী যাত্রীবৃন্দ পারবেন না।
৭. যারা ঘন ঘন বিদেশ ভ্রমন করেন তাদের জন্য কি আলাদা নিয়ম আছে ?
উ: না । যারা ঘন ঘন বিদেশ ভ্রমন করেন বা ফ্রিকুয়েন্ট ফ্লাইয়ার তাদের জন্য পৃথক কোন নিয়ম নেই। একজন ফ্রিকুয়েন্ট ফ্লাইয়ার অন্য সকল যাত্রীর মত বিমান টিকেট মূল্য , ট্যাক্স ও অন্যান্য বিল পরিশোধ করেন। আমদানি নীতিতে তাদেরকে সরকার প্রদত্ত কোন আমদানি সুবিধা হতে বঞ্চিত করা হয়নি।
৮. ট্যাক্স প্রদানের মত পর্যাপ্ত টাকা সাথে না থাকলে কি করব ?
উ. কোন সমস্যা নেই । আপনি কাস্টমস কর্মকর্তাকে জানান “আমার এই পন্যটি ডিটেনশন মেমো ( ডিএম ) করে রেখে দিন । আমি পরে এসে ট্যাক্স দিয়ে নিয়ে যাব” । এভাবে রেখে কিন্তু হাওয়া হয়ে যাবেন না। নির্ধারিত সময় এর মধ্যে ট্যাক্স দিয়ে নিয়ে যান। যথাসময়ে না নিলে পন্যটি নিলাম হয়ে যেতে পারে।
৯. যেসব সোনা বিমানবন্দরে আটক হয় সেগুলো যায় কৈ ?
উ. আটককৃত সোনা বিষয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বিধিমোতাবেক ব্যাবস্থা নিয়ে থাকেন। ডি.এম বা ডিটেনশন মেমোর মাধ্যমে কখনও পরিত্যাক্ত অবস্থায় সোনা আটক করা হয়। বৈধ পরিমান সোনা ডিএম করা হলে যাত্রী পরবর্তিতে ট্যাক্স দিয়ে খালাস করতে পারেন। মামলায় আটক সোনা আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে নিলাম বা আদেশমত ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে সমন্বয় পূর্বক কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ব্যাবস্থা গ্রহণ করে থাকেন।
সূত্র: ইন্টারনেট