187865

৪ মহিলা ধর্ষণ: অবহেলার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধেই

কর্ণফুলী বড় উঠান এলাকায় ঘরে ঢুকে চার মহিলাকে ধর্ষণ ও ডাকাতির ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগ ওঠেছে। ঘটনার পর মামলা না নেওয়া, জিজ্ঞাসাবাদ, লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার এবং আসামি গ্রেপ্তারের প্রতিটি পর্বে এই অবহেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট এমএ নাসের আমাদের সময়কে বলেন, কোনো নারী ধর্ষিতা হয়েছেন বলে থানায় এসে অভিযোগ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের কাজ হচ্ছে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) লিপিবদ্ধ করা। এরপর মহিলার ডিএনএ পরীক্ষা নিয়ে রাখা। পরের ধাপে পুলিশের ওই ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও আসামি গ্রেপ্তার করা; ঘটনা সত্যি হলে জিডিকে মামলায় রূপান্তর করা। কিন্তু কর্ণফুলীতে ধর্ষণের ঘটনায় প্রতিটি পর্যায়েই পুলিশের অবহেলা স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। তারা কোনো পর্বেই দায়িত্ব পালন করেনি।

গত ১২ ডিসেম্বর এক ঘরে চার নারী ধর্ষিতা হওয়ার পরদিন তারা কর্ণফুলী থানায় মামলা করতে আসেন। তখন পুলিশ ঘটনাটি ওই থানা এলাকায় ঘটেনি বলে তাদের ফিরিয়ে দেয়। এর পর মহিলারা পটিয়া থানায় যান। পটিয়া থানাও একইভাবে ঘটনাস্থল তাদের এলাকায় নয় বলে পুনরায় কর্ণফুলী থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেয়।

একপর্যায়ে হতাশ হয়ে ওই পরিবারের সদস্যরা আর মামলা না করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দিদারুল ইসলাম ধর্ষিতা মহিলাদের স্থানীয় সংসদ সদস্য ও ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর কাছে নিয়ে যান। মন্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে মামলা নেওয়ার জন্য এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব আসামি গ্রেপ্তারের জন্য কর্ণফুলী থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। মামলা হয় ১৭ ডিসেম্বর। ততদিনে পাঁচদিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। ফলে ইতোমধ্যে অনেক আলামত মহিলারা নষ্ট করে ফেলেন। আইনবিদদের মত হলো, শুরুর দিন পুলিশের উচিত ছিল আলামত সংগ্রহ করে ডিএনএ পরীক্ষা করে রাখা। তাহলে মামলাটি প্রাণ পেত। এখন মামলাটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে গেল।

কর্ণফুলী থানা পুলিশের বিরুদ্ধে আরেকটি গুরুতর অভিযোগ ওঠেছে। তা হলো, মামলা নেওয়ার আগে-পরে কোনো পর্বেই চার মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ কিংবা তাদের বাড়ি পরিদর্শনের সময় মহিলা পুলিশ ব্যবহার করা হয়নি। ফলে পুরুষ পুলিশের কাছে মহিলারা শুরু থেকেই পুরো বিষয়টি খোলাসা করে বলতে চাননি। এটা কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দুল মোস্তফার বক্তব্য থেকেও স্পষ্ট বোঝা যায়। পুলিশ এ ঘটনায় এ পর্যন্ত আবু ও মাহামুদ ফারুক নামে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা দুজনই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করেছে। তারা স্থানীয়। অথচ ধর্ষিতারা শুরু থেকে পুলিশকে বলেছে, ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেছে।

ডাকাতির সময় লুট হওয়া তিনটি মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার ও নগদ অর্থ কিছুই উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
সৈয়দুল মোস্তফা আমাদের সময়কে বলেন, মহিলারা তো শুরুতে স্বীকারই করতে চাননি যে তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তারা বলেছেন, ডাকাতরা তাদের লাঠি দিয়ে আঘাত করেছে মাত্র। পরে আমাদের পীড়াপীড়িতেই বিষয়টি স্বীকার করেছে। মহিলা পুলিশ ব্যবহার না করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মহিলা পুলিশ ব্যবহার করতেই হবে এমন কথা নেই। তা ছাড়া থানায় তো সব সময় মহিলা পুলিশ থাকে না। এমনিতেই মহিলা পুলিশের সংখ্যা কম।

এখনো আলামত সংগ্রহ করতে না পারা প্রসঙ্গে ওসি বলেন, ডিএনএ পরীক্ষার মতো আলামত আমাদের হাতে নেই। মহিলারা সব ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে ফেলেছে।
অথচ পুলিশকে মহিলারা ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন এবং বলেছেন, রাত ১টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ওই যুবকরা বাড়িটিতে অবস্থান করেছিল এবং তারা বাড়িতে থাকা আপেল ও মাল্টা কেটে খায়। যাওয়ার সময় অবশিষ্ট ফল সঙ্গে করে নিয়ে যায়। পুলিশ ওইসব ফলের উচ্ছিষ্টাংশও সংগ্রহ করেনি। এসব উচ্ছিষ্ট অংশে লালা থাকার সম্ভাবনা ছিল।
এ প্রসঙ্গে ওসি সৈয়দুল মোস্তফা বলেন, ফলের উচ্ছিষ্ট অংশ আমরা খুঁজিনি। তাও হয়তো তারা ফেলে দিয়েছে। তিনি বলেন, মহিলারা তো মামলাই করতে চাননি। তারা খুব রক্ষণশীল। তা ছাড়া ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত তো মিলেছে।

একাধিক আইনজীবী জানান, এটি একটি গণধর্ষণের ঘটনা। আর পুলিশ সুকৌশলে সেটিকে দেখিয়েছে আলাদা ধর্ষণের ঘটনা হিসেবে। ফলে মামলাটি একজন পরিদর্শকের পরিবর্তে একজন এসআই তদন্ত করবেন। এক্ষেত্রেও দায়িত্ব পালনে অবহেলার নজির স্পষ্ট। উৎস: দৈনিক আমাদের সময়।

ad

পাঠকের মতামত