মীমাংসিত মানচিত্র এখন বাংলাদেশের
ডেস্ক রিপোর্ট : ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে স্থল সীমান্ত নির্ধারিত হওয়ার মধ্যদিয়ে মীমাংসিত মানচিত্র পেয়েছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর মানচিত্রে পূর্ণতা এসেছে বাংলাদেশের। কূটনৈতিক ও সরকারি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সূত্র মতে, ঘনিষ্ঠ দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে স্থল সীমান্ত নিয়ে এখন আর কোনো বিরোধ নেই। সীমান্তে কোনো অমীমাংসিত ও অপদখলীয় জমিও নেই। তাছাড়া সমুদ্রেও ভারত এবং মিয়ানমারের সঙ্গে সীমানা নির্ধারিত হয়ে গেছে।
আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে সমুদ্র এলাকার বিরোধ নিষ্পত্তি হয়েছে, যা সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো মেনে নিয়েছে। পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমানা নির্ধারিত হওয়ার পর মানচিত্র, সীমান্ত পিলারসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম দ্রুততার সঙ্গে করা হচ্ছে। সীমান্তের যে সব স্থানে এখনও খোদাই করা ‘পাক’ অর্থাৎ পাকিস্তান লেখা পিলার রয়েছে তা পর্যায়ক্রমে অপসারণ করা হচ্ছে। অপদখলীয় বা অমীমাংসিত সীমানা নির্দিষ্টকরণের ফলে সেখানে নতুন পিলার বসানোর কাজ চলছে। সূত্র বলছে, ভারতের সঙ্গে চুয়াত্তরে সই হওয়া স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন অর্থাৎ ছিলমহল বিনিময়, অপদখলীয় এবং অমীমাংসিত এলাকা চিহ্নিত হওয়ায় গেজেট জারির মাধ্যমে সীমান্ত সংক্রান্ত জটিলতার নিরসন হয়েছে। আর সমপ্রতি মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্ত সংক্রান্ত চুক্তির বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে দুই দেশের ১৯৩ কিলোমিটার (১২০ মাইল) সীমান্তও এখন নির্দিষ্ট। প্রতিবেশী মিয়ানমারের সঙ্গে গত মাসেই স্থল সীমান্ত চুক্তির সম্পূরক প্রটোকল সই হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর কার্যালয়ের মন্ত্রী নিজ নিজ দেশের পক্ষে এতে সই করেন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তি সইয়ের দিনই (গত ২৩শে নভেম্বর) নাফ নদীর স্থায়ী সীমান্ত নির্ধারণে সম্পূরক ওই সীমান্ত প্রটোকল সই হয়।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তটি বাংলাদেশ, মিয়াানমার ও ভারত তিন দেশের মিলিত সীমানা বিন্দু থেকে শুরু এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত। যার সর্বশেষ অংশ নাফ নদী বরাবর। ঢাকার কর্মকর্তাদের ভাষ্য মতে, ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান ও বার্মার সই হওয়া মূল চুক্তিটির আলোকে এবারে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে মধ্যে সম্পূরক প্রটোকলটি সই হয়েছে। অবশ্য ঐতিহাসিক ওই চুক্তির চেতনায় ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে প্রথম সীমান্ত প্রটোকল চুক্তিসই হয়। যা ’৯৮ সালে অনুসমর্থন পায়। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগের চুক্তি-প্রটোকলের ধারাবাহিকতায় ২০০৭ সালে বাংলাদেশ সম্পূরক সীমান্ত প্রটোকল সইয়ের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব করে মিয়ানমারকে। দীর্ঘ আলোচনায় এবার সেটি সই হলো। যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার স্থল সীমান্ত সম্পূর্ণভাবে চিহ্নিত হলো। উল্লেখ্য, স্যার রেডক্লিফের চিহ্নিত সীমানা মতে, ভারত ও পাকিস্তানের মানচিত্রে অনেক এলাকা অপদখলীয় অবস্থায় ছিল। যেটি পরবর্তীতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার চার হাজার কিলোমিটারের বেশি স্থলসীমান্তের মধ্যে পড়েছে। এর সাড়ে ছয় কিলোমিটার স্থলসীমান্ত ছিল অচিহ্নিত ছিল। বাংলাদেশ-ভারত ঐতিহাসিক সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের ফলে সেটিও এখন নির্দিষ্ট, নির্ধারিত। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত নিয়ে দু’দেশের যৌথ জরিপ কর্মকর্তারা এগারশ’র চেয়ে বেশি স্ট্রিপ ম্যাপবিনিময় করেছেন।
সীমান্ত নির্দিষ্টকরণ এবং অন্যান্য পরিবর্তন বিষরেয় পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক গতকাল বলেন, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের সীমান্ত এখন নির্দিষ্ট। সেখানে অনেক স্থায়ী সীমান্ত পিলার বসানোর কাজ চলছে। এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, সীমান্ত এলাকায় বৃটিশ ও পাকিস্তান আমলে ‘পাক’ লেখা অনেক পিলার ছিল। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয় সীমান্তেই তা রয়েছে। এগুলো পর্যায়ক্রমে অপসারণ করা হচ্ছে। প্রক্রিয়াটি চলমান রয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সীমান্তের অনেক স্থানে পিলারই নেই, সেব স্থানে স্থায়ী পিলার বসানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দিন বলেন, সীমান্তে যে কোনো জিনিস চাইলেই পরিবর্তন করা যায় না। যে কোনো পরিবর্তন সময় সাপেক্ষ বিষয়। এতে উভয় দেশের সম্মতি প্রয়োজন। অবশ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আগের সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমদ দায়িত্বে থাকাকালে সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করে বলেছিলেন, পরিদর্শনকালে তিনিও বিষয়টি দেখেছেন। যে সব জায়গায় সীমান্ত পিলারই নেই সেখানে জরুরি ভিত্তিতে সংযোজনের কথা জানিয়েছিলেন বিদায়ী সচিব। মানবজমিন