২৫ সুপারিশ আমলে নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিবন্ধিত ৪০ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপে প্রায় ৪০০ সুপারিশ পায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেখান থেকে আমলযোগ্য ২৫টি পৃথক করা হয়েছে। গতকাল নির্বাচন ভবনে ‘আইন-বিধি সংস্কার সংক্রান্ত’ কমিটির বৈঠকে তা বাছাই করা হয়। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এ (আরপিও) এগুলো অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব দেবে কমিটি। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ইসি বৈঠকে।
জানা গেছে, নির্বাচনে প্রার্থীদের জামানত ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার এবং ব্যয় বিবরণী জমা দিতে ব্যর্থ হলে ১০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা জরিমানার সুপারিশ রাখা হয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিদ্যমান সংজ্ঞায় ‘সশস্ত্র বাহিনী’কে যোগ করে কোনো পরিবর্তন আনা হচ্ছে না। আবার ভোটে কর্মকর্তাদের অনিয়ম, পক্ষপাতিত্ব, দল বা প্রার্থীর অনিয়ম, আচরণবিধি লঙ্ঘনে খোঁজ নিয়ে তৃতীয় চোখ নিয়োগের সুপারিশটিও আমলে নিয়েছে ইসি। থাকছে ইভিএম ব্যবহারের বিধানও।
কমিটির সভাপতি নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, সংলাপে আমরা অনেক সুপারিশ পেয়েছি। কিছু আলাদাও করেছি। সেগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি, চূড়ান্ত করে পরবর্তী কমিশন সভায় উপস্থাপন করা হবে। পাশাপাশি নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য এগুলো আরপিওর কোথায় সংযোজন করতে হবে, সে বিষয়েও পর্যালোচনা চলছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমিটির এক সদস্য বলেন রাজনৈতিক দলের দেওয়া সুপারিশগুলো নিয়ে আমরা কয়েক দফা বৈঠক করেছি। আরপিওর অন্তত ২৫টি অনুচ্ছেদে সংযোজন-বিয়োজন-সংশোধন করে প্রাথমিক তালিকা তৈরি করা হয়েছে; তবে সংখ্যা কমতে পারে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে এসব সুপারিশ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রস্তাবগুলোর মধ্যে অন্যতম ব্যক্তিগত ব্যয়ের কোনো সংজ্ঞা বা ধারণা না থাকায় নতুন করে সংযোজন। কোনো কোনো জেলায় দুজন রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করা যেতে পারে। নির্বাচিত দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে প্রত্যাহারের পাশাপাশি বদলি। ২৫ দিনের স্থলে ভোটের ১৫ দিন আগে কেন্দ্রের তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ। তিন দিন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল উন্মুক্ত রাখা। ঋণখেলাপিদের জটিলতা কমাতে মনোনয়ন দাখিলের সাত দিন আগের পরিবর্তে আগের দিন তা পরিশোধের সুযোগ দেওয়া। অনলাইনে মনোনয়ন দাখিলের বিধান যুক্ত করা। স্বতন্ত্র প্রার্থিতার সুবিধার্থে নির্বাচনী এলাকার মোট ভোটারের এক শতাংশের পরিবর্তে ১০০০ ভোটার সমর্থন তালিকা জমার বিধান যোগ। প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে ১২ ডিজিটের কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) সনদ দাখিল বাধ্যতামূলক। সার্টিফিকেটের পাশাপাশি মার্কশিট জমা দেওয়ারও সুযোগ রাখা। মনোনয়নপত্র গ্রহণ ও বাতিলের বিরুদ্ধে আপিলের বিধান থাকায় করণিক ত্রুটি ঠিক করা। বিদ্যমান বিধানকে সহজ করতে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর একক প্রার্থী হলে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাকে নির্বাচিত ঘোষণা করা।
প্রার্থীদের সুবিধার্থে নির্ধারিত ফরমে পোলিং এজেন্ট নিয়োগে সংশোধন। পোলিং এজেন্টকে প্রার্থীর প্রতীক সংবলিত কার্ড না দিয়ে ইসির পরিচয়পত্র দেওয়া। পোলিং এজেন্টদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে দফা সংযোজন। নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ভোট নিশ্চিতে আগাম ভোটিং ব্যবস্থা। রিটার্নিং অফিসারকে আইনত প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের ব্যালট পেপার ও মালামাল সংবলিত ব্যাগ খুলে পুনঃনিরীক্ষার বাধ্যবাধকতা সংশোধন করতে হবে। লটারির পরিবর্তে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচনের বিধান সংশোধন করা। নির্বাচনী ব্যয় সীমাবদ্ধ রাখা ও অবৈধ প্রভাব রোধে মনিটরিং কমিটি গঠন। সুষ্ঠু নির্বাচনে ব্যর্থ হলে সরাসরি বদলির বিধান করে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে তা সংশোধন। নির্বাচনী অভিযোগ দাখিল ও নিষ্পত্তির জন্য অভিযোগকেন্দ্র স্থাপনের বিধান যুক্ত করারও সুপারিশ রয়েছে।
সূত্র : আমাদের সময়