
কে হচ্ছেন পরবর্তী মেয়র?
কে হচ্ছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পরবর্তী মেয়র? এ নিয়ে শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জন। নাম শোনা যাচ্ছে অন্তত অর্ধশত ব্যক্তির। এদের মধ্যে কেউ রাজনীতিবিদ আবার কেউ ব্যবসায়ী। রাজধানীর চায়ের আড্ডা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলের অফিস পর্যন্ত চলছে এ নিয়ে আলোচনা। এর মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও অনেকে সরব হয়েছেন। কেউ নিজে আবার কেউ সমর্থকদের দিয়ে মেয়র পদে প্রার্থীর জন্য নামের প্রচারণা চালাচ্ছেন।
বিষয়টি নিয়ে এখন সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে আওয়ামী লীগের মধ্যে। দলটি থেকে অনেকে প্রার্থী হতে চান। সিনিয়র থেকে শুরু করে দলের নীতি-নির্ধারকদের কাছে অনেকে এরই মধ্যে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তাদের অনুরোধ, দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তাদের নাম প্রস্তাব করতে। তবে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা জানিয়েছেন, মেয়র পদ শূন্য ঘোষণা করায় দলের অনেক নেতা আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এটা স্বাভাবিক। তবে এখন পর্যন্ত দলীয় কোনো ফোরামে এ নিয়ে আলোচনা হয়নি। দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী এখন কম্বোডিয়া আছেন। তিনি দেশে ফিরলে হয়তো বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর ওপর।
তিনি যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই মেয়র পদে মনোনয়ন দেবেন। নেতারা জানান, আনিসুল হককে মেয়র হিসেবে পছন্দ করেছিলেন শেখ হাসিনা। তার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল এটা সবাই উপলব্ধি করেছেন। দলের সভানেত্রীর ওপর আমাদের আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। তাই তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, দলের গ্রহণযোগ্য ও পরীক্ষিত নেতাকেই মেয়র পদের জন্য মনোনয়ন দেয়া হবে। দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা সময় মতো নাম ঘোষণা করবেন। প্রার্থী ঠিক করতে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা হবে। সভায় আলোচনা সাপেক্ষে প্রার্থী চূড়ান্ত হবে।
এদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, সরকারের শেষ সময়ে এ উপনির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে তারা। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে বিভিন্ন ফোরামে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় প্রথমেই ওঠে আসছে প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হকের নাম। এ ছাড়া আনিসুল হকের ছেলে নাভিদুল হকও রয়েছেন এ আলোচনায়। তবে মেয়র পরিবারের বাইরেও কয়েকজনের নাম ঘুরেফিরে আলোচনায় আসছে। এ তালিকায় আছেন, আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি একেএম রহমতুল্লাহ, ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সভাপতি ও ঢাকা-৯ আসনের এমপি সাবের হোসেন চৌধুরী, আসাদুজ্জামান নূর প্রমুখ। আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানান, আনিসুলের হকের মতো তার স্ত্রীও মেয়র পদের জন্য যোগ্য। তা ছাড়া মেয়র নির্বাচনের প্রচারণার সময় আনিসুল হকের সঙ্গে সবসময় তার স্ত্রী রুবানা হক ছিলেন। সে হিসেবে প্রচারণার কৌশল তার কাছে অপরিচিত নয়।
এদিকে বাবার অসম্পন্ন কাজ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতে চান প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের ছেলে নাভিদুল হক। তিনি জানিয়েছেন, তার বাবা যে কাজ শুরু করেছিলেন, যে পরিকল্পনা করেছিলেন তা বাস্তবায়ন করতে যেকোনো ধরনের উদ্যোগ নিতে তাদের পরিবার ত্যাগ স্বীকার করতে চায়। প্রধানমন্ত্রী চাইলে যেকোনো ধরনের ত্যাগ স্বীকার করতে তারা সব সময় প্রস্তুত। শনিবার সন্ধ্যায় বনানী কবরস্থানে বাবার দাফন শেষে নাভিদুল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, প্রত্যেকটা অ্যাকটিভিটি নিয়ে আগে-পরে বাবা আমার সঙ্গে কথা বলতেন। আমাকে ফোন দিতেন। শহর সম্পর্কে উনার যে প্ল্যানগুলো ছিল এগুলো জানার, বোঝার এবং উনাকে অ্যাডভাইস দেয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। অনেক কাজই উনি শুরু করে গেছেন এবং অনেক কাজের প্ল্যান উনি দিয়ে গেছেন। যেগুলো সম্পন্ন করলে আধুনিক ঢাকা গড়া সম্ভব।
ঢাকা উত্তরের মেয়র পদ শূন্য হওয়ায় আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে উপনির্বাচনের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ৯০ দিনের মধ্যেই ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র পদে উপনির্বাচন আয়োজন করতে প্রস্তুত রয়েছে তারা। মেয়র পদ শূন্য ঘোষণার প্রজ্ঞাপন হাতে পেলেই নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করবে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি।
অসুস্থ হয়ে দীর্ঘদিন লন্ডনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর ৩০শে নভেম্বর রাতে মারা যান আনিসুল হক। তার মৃত্যুতে এই পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়। দুই ভাগে বিভক্ত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় গত ২০১৫ সালে। ওই নির্বাচনে উত্তর সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মেয়র নির্বাচিত হন আনিসুল হক। মানবজমিন