
রাস্তায় ময়লা দেখলে যে কারণে সেলফি তুলতেন মেয়র আনিসুল হক
মেয়র আনিসুল হক রূপকথার জাদুর মতোই পাল্টে দিয়ে গেছেন অনেক কিছু। তাঁর হাত ধরেই ঢাকা পাল্টাতে শুরু করে। ‘মানুষ সংঘবদ্ধ হলে পৃথিবী বদলে যেতে পারে’—বিশ্বাস করতেন তিনি। ২০১৫ সালের মে মাসে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র হিসেবে শপথ নিয়ে সেই বদলে যাওয়ার পথচলা শুরু হয়েছিল। ঢাকা উত্তরের সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে আনিসুল হক ৩০ মাস সময় পেয়েছিলেন। তবে গত জুলাই মাসে ব্রিটেনের লন্ডনে অসুস্থ হওয়ার পর থেকে তিনি ছিলেন ঢাকা থেকে বিচ্ছিন্ন। এ সময়টিকে হিসাব করলে তিনি মাত্র ২৫ মাস তাঁর দায়িত্ব পালন করতে পেরেছিলেন। এই অল্প সময়েই তিনি অনেক কিছু করে গেছেন।
ফুটপাত থেকে শুরু করে সড়ক বিভাজক, গলিপথ থেকে ওভারব্রিজ সর্বত্রই রয়েছে তাঁর দায়িত্ববোধের স্বাক্ষর। নাগরিকদের স্বাচ্ছন্দ্যের পাশাপাশি নান্দনিক দিকটিতেও ছিল তাঁর শিল্পিত রুচিবোধের প্রতিফলন। তারকাখচিত দেয়ালঘেরা ঝকঝকে আধুনিক পাবলিক টয়লেটে ঢুকতে হয় জুতা খুলে।
বাথরুমে যাওয়ার আলাদা স্যান্ডেল, হাই কমোড, লো কমোড, গোসল করার সুবিধা, সুপেয় পানি, হ্যান্ড ওয়াশ, নারীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা। রয়েছে প্রতিবন্ধীদের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা। বিশুদ্ধ খাবার পানি। নিরাপত্তার জন্য রয়েছে সিসি ক্যামেরা। আনিসুল হক মেয়র হিসেবে শপথ নেওয়ার পর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় এ রকম ১০টি অত্যাধুনিক টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে। আরো ৯০টি টয়লেট স্থাপনের লক্ষ্য ছিল তাঁর।
ঢাকা শহর ছিল বিলবোর্ডের শহর। এর মধ্যে বেশির ভাগ ছিল অবৈধ। রাজধানীকে বিলবোর্ডের আবর্জনা থেকে মুক্ত করার কৃতিত্ব আনিসুল হকের। অনেক বাধা এসেছিল, আন্দোলনের হুমকি ছিল। অনড় ছিলেন মেয়র। তিনি রাত ১২টার পর নিজে দাঁড়িয়ে থেকে অপসারণের তদারকি করতেন।
আমিন বাজার থেকে শ্যামলী সড়ক পার্কিং ফ্রি ঘোষণা, হয়রানি রোধে ঠিকাদারদের বিল অফিসে পৌঁছে দেওয়া, গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন, কারওয়ান বাজার ডিএনসিসি মার্কেট থেকে ব্যবসায়ীদের মহাখালী ও যাত্রাবাড়ীতে স্থানান্তরের উদ্যোগ ছিল তাঁর। ঢাকায় নারীদের কেনাকাটা নিরাপদ করার স্বার্থে আনিসুল হক চলতি বছরের মে মাসে মহাখালীতে ‘উইমেন’স হলিডে মার্কেট উদ্বোধন করেন। গণপরিবহনে মেয়েদের হয়রানির অভিযোগ নিয়েও উৎকণ্ঠা ছিল তাঁর। উপযুক্ত গণপরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে তাঁর কর্মপরিকল্পনা ছিল।
ঢাকার রাস্তায় উপচে পড়ত ময়লা। এ পরিস্থিতি অবসানে আনিসুল হক ৭২টি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন স্থাপন করেন। তিনি ডিএনসিসি এলাকায় পাঁচ হাজার ডাস্টবিন বসানোর উদ্যোগ নেন। রাস্তায় ময়লা দেখলে তিনি সেলফি তুলতেন। কাছের মানুষদের বলতেন, ‘একদিন ঢাকার রাস্তায় ময়লা ইতিহাস হবে—সে কারণে এ ছবি তুলে রাখছি। ’
গত ২০ বছর ধরে বিভিন্ন সময় রাজধানীর শাহজাদপুর-বারিধারা লিংক রোডটি উদ্ধার করা যায়নি অবৈধ দখলদারদের প্রভাবের কারণে। গত এপ্রিলে এ সড়কটি থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে ডিএনসিসি। গুলশান লেকের পাশ দিয়ে নির্মাণাধীন সড়কটি ভারতীয় হাইকমিশনসংলগ্ন স্থানে জাতিসংঘ সড়কের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। প্রায় এক হাজার ফুট এবং প্রস্থ ৪০ ফুট সড়কটি নির্মিত হলে গুলশান এভিনিউয়ের সমান্তরালে একটি প্রশস্ত সড়ক যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হবে। সড়কটি বাড্ডা নতুনবাজার পর্যন্ত যাবে।