
‘হালদা’র টার্গেট…
“আমি চাই দর্শক ‘হালদা’ দেখুক। এ ছবির গল্পের মধ্যে আমি দেখিয়েছি নদী ও নারীর বিষয়টি। যেটি শাশ্বত একটি বিষয়। এগুলো আমাদের জীবনের উৎস-আধার। সব অভিনেতাই চমৎকার অভিনয় করেছেন। এতটুকু বলতে পারি, মোশাররফ করিম, তিশা, জাহিদ হাসান প্রত্যেককেই দর্শক ভিন্নভাবে দেখতে পাবেন। যেমন মোশাররফ করিমকে হাস্যরসাত্মক চরিত্রে দেখা যাবে না, জাহিদ হাসানকে কিছুটা নেগেটিভ চরিত্রে দেখা যাবে। হালদা পারের মানুষদের জীবন, সংস্কৃতি থাকবে। অনেক সময় হয় পোস্টার কিংবা শিল্পী দেখে অনেকে ছবি দেখেন না। আমি চাই সবাই ‘হালদা’ দেখুক। তার পর সমালোচনা করুক।”
কথাগুলো বলেছেন আগামীকাল মুক্তি পেতে যাওয়া ‘হালদা’ ছবির পরিচালক তৌকীর আহমেদ। ছবিটি সারা দেশের প্রায় ১০০টি সিনেমা হলে একযোগে মুক্তি পাবে। এটাই তৌকীর পরিচালিত কোনো ছবির সর্বাধিক হলপ্রাপ্ত ছবি। এর আগে ‘অজ্ঞাতনামা’ দেশ-বিদেশে প্রশংসা এবং পুরস্কার অর্জন করলেও সেভাবে আমাদের দেশের সিনেমা হলে মুক্তি পায়নি। এমনকি ছবির প্রচারও তেমন হয়নি।
দেশে মুক্তি পাওয়ার পর ৮ ডিসেম্বর ছবিটি মুক্তি পাবে বিশ্বের আরও ১৬টি দেশে। সম্প্রতি ফেসবুক লাইভে আসেন পরিচালক তৌকীর আহমেদ, অন্যতম প্রধান চরিত্রের অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা, রুনা খান ও শাহেদ আলী। দর্শক সরাসরি কথা বলেন হলদা টিমের সঙ্গে। নুসরাত ইমরোজ তিশা দর্শকদের উদ্দেশে বলেন, ‘তিনি অনেক নাটক-সিনেমাতে অভিনয় করলেও হালদায় তার চরিত্র একেবারেই নতুন এবং ভিন্ন। যা দর্শক আগে কখনো দেখেনি। আবার একেবারেই ভিন্ন চরিত্রে দর্শক দেখতে পাবেন জাহিদ হাসান ও মোশাররফ করিমকেও।’ শাহেদ আলী বলেন, ‘দর্শক অজ্ঞাতনামার মতোই হালদাতেও তাকে ভিন্নরূপে দেখতে পাবেন।’ তৌকীর আহমেদ বলেন, ‘হালদা দেখতে সিনেমা হলে আসুন। যদি সিনেমা দেখে ভালো লাগে তা হলে একজনকে বলুন। আমরা হালদা সিনেমা নির্মাণ করেছি বাংলাদেশের মানুষের জন্য, একটি বাংলাদেশের নদী ও নারীর গল্প নিয়ে। আশা করি দর্শকের ভালো লাগবে।’ তিনি জানান, আমরা চেষ্টা করেছি কম খরচে সুন্দরভাবে মার্কেটিং করতে। যাতে আমাদের দেশের দর্শক সিনেমা হলে এসে হতাশ না হন। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি মানুষের কাছে সিনেমাটি পৌঁছাতে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম এবং সংবাদপত্রের মাধ্যমে আমরা দর্শকদের কাছে হালদা পৌঁছানোর সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি।
চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক হালদা নদী ও সেখানকার প্রান্তিক মানুষের জীবনবৈচিত্র্যই এর বিষয়বস্তু। দেশের বৃহত্তম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র এ হালদা নদী। মা মাছেরা এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত অমাবস্যা বা পূর্ণিমার তিথিতে এখানে ডিম ছাড়ে। এ নদী ও নদীর গতি-প্রকৃতি, নদীর ক্ষয় ও নদীতীরবর্তী মানুষের জীবনপ্রবাহ ও জটিলতা তুলে ধরা হয়েছে গল্পে। ছবিতে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বার আলীর বলীখেলা থাকবে, কবির লড়াই, নৌকাবাইচ, ব্যাঙের বিয়ে, মাছের ডিম ধরা নিয়ে হালদা পারের মানুষদের উৎসব দেখানো হয়েছে। ‘হালদা’ নির্মিত হয়েছে নিজস্ব গল্প নিয়ে। কিন্তু নির্মাণে আছে নান্দনিকতা। ছবির প্রতিটি চরিত্র পরিপাটি করে তুলে ধরা হয়েছে। ছবিতে জাহিদ হাসানকে দেখা যাবে খলচরিত্রে। মোশাররফ করিম থাকছেন জেলের ভূমিকায়। আর তাদের সঙ্গে নুসরাত ইমরোজ তিশা অভিনয় করেছেন স্বপ্নবাজ এক তরুণীর ভূমিকায়। ছবির বাণিজ্যিক দিক চিন্তা করে কয়েকটি গান নেওয়া হয়েছে। এখানে মাইজ ভা-ারীর গান থাকছে, গ্রাম্য গানও থাকছে।
এ ছবির শুটিং করতে গিয়ে নানা প্রতিকূলতায় পড়তে হয়েছিল ইউনিটকে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তৌকীর আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেখানে শুটিং করেছি, এর আগে সেখানে কোনো শুটিং হয়নি। তাই সকাল থেকেই লোকজন শুটিং দেখার জন্য ভিড় জমাত। আর শুটিংয়ের বাজেট ছিল সীমিত। তাই এর মধ্যে শুটিং শেষ করা খুব কষ্টের ছিল। এ ছাড়া লোকজনের ভিড় কন্ট্রোল করাটা সহজ ছিল না। এজন্য আমরা খুব ভোরবেলা শুটিং শুরু করতাম। কারণ তখন সবাই ঘুমিয়ে থাকত। এভাবে রাত-দিন মিলে শুটিং শেষ করেছি। ইউনিটের সবাই বেশ পরিশ্রম করেছে। গত বছর এ ছবির কাজ শুরু হয়েছিল।’ অভিনয় ব্যস্ততা নিয়ে তৌকীর বলেন, ‘আমাকে তো নির্মাতারা অভিনয়ের জন্য ডাকে না! সবাই ভাবেন যে, আমি নির্মাণ নিয়ে খুব ব্যস্ত। আমি অভিনয়কে ভালোবাসি এবং ভালো চরিত্র পেলে সব সময়ই তা করতে চাই।’
আজাদ বুলবুলের গল্পে ‘হালদা’র চিত্রনাট্য লিখেছেন পরিচালক তৌকীর আহমেদ নিজেই। সংগীত পরিচালনা করেছেন পিন্টু ঘোষ।