
শিক্ষক ছেলের নির্যাতন বৃদ্ধা মাকে
টাঙ্গাইলের মধুপুরে ৭৫ বছরের বৃদ্ধা মাকে মানসিক নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন আদর্শ ফাযিল মাদরাসার বিএসসি শিক্ষক মো.নাজিম উদ্দিন। উপজেলার পোদ্দারবাড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে। ১০ মাস গর্ভে ধারণ করে যে ছেলেকে বহু কষ্টে শিক্ষক বানিয়েছেন সেই ছেলের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন মা আমিনা বেওয়া।
খোঁজ নিয়ে জানান যায়, পোদ্দারবাড়ি গ্রামের মৃত তফেজ উদ্দিনের ছয় ছেলের মধ্যে পাঁচ ছেলে মো.নাজিম উদ্দিন, শামছুল হক,দুলাল উদ্দিন,মোক্তার হোসেন ও মানিক মিয়া মিলে মা আমিনা বেওয়া ও বড় ভাই বাবুল হোসেনকে অশ্লীল গালিগালাজ করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন এমনকি মায়ের নামের জমি জাল দলিল করে দোকানঘর দখলে নিয়েছেন।
মা-বাবার ভরণ পোষণ আইন ২০১৩ এর ৩ ধারায় বলা হয়েছে মা-বাবাকে ভরণ পোষণ করতে সন্তানরা বাধ্য। অন্যথায় আইনের ৫ ধারার (১) অনুযায়ী অভিযোগ প্রমাণিত হলে সন্তাদের এক লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের কারাদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
মধুপুর শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি ও জেলা রেজিস্ট্রারের নিকট অভিযোগ করেছেন বড় ভাই বাবুল হোসেন।
গত ২৭ নবেম্বর সোমবার বাবুলের মা আমিনা বেওয়া এ প্রতিবেদকের সাথে ছেলেদের নির্যাতনের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
তিনি জানান,নাজিম মাস্টার আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মারতে আসে। আমার স্বামীর বসত ভিটা থেকে আমাকে ওরা বের করে দিয়েছে। আমি এখন বড় ছেলে বাবুলের সাথে ঢাকায় থাকি এবং মাঝে মাঝে আমার বাবার বাড়িতে থাকি। আমি ছেলেদের বিচার চাই,তানাহলে ওরা আমার বড় ছেলেকে মেরে ফেলবে।
মো.বাবুল হোসেন জানান,বৃদ্ধা মাকে দেখাশোনা করি বলে আমার ছোট ভাইয়েরা ময়মনসিংহ সড়কের আমার দোকারঘর দখল করে ভাড়াটিয়াদের বের করে দিয়েছে এবং ভূয়া দাতা সাজিয়ে গত ৩ আগস্ট ১.১১ শতাংশ জমি জাল দলিল (দলিল নং ৩১৯৬) করেও নিয়েছে। ওরা বণিক সমিতির নির্দেশও অমান্য করেছে।
মধুপুর শিল্প ও বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো.রফিকুল ইসলাম মাসুদ জানান,বাবুলের মায়ের কাছ থেকে আমি ঘর ভাড়া নিয়ে দোকান করেছি,মাকে নির্যাতনের পাশাপাশি ৫ ভাই মিলে ওর মায়ের সেই ঘরও দখল করে নিয়েছে।
মধুপুর শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতিমো.সিদ্দিক হোসেন খান জানান,নাজিম মাস্টারের নেতৃত্বে বাবুলের ৫ ভাই মা ও বড় ভাইয়ের সাথে খুবই খারাপ আচরণ করতেছে,যা সভ্য সমাজে কোন ছেলের পক্ষে করা সম্ভব না। তিনি জানান,একটি কুচক্রি মহল তাদেরকে ইন্ধন দিচ্ছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক জানান, যে শিক্ষক তার মাকে নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেয় সে শিক্ষক নামের কলঙ্ক।
মাকে নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে অভিযুক্ত মো.নাজিম উদ্দিন জানান,আমার মা বড় ভাইয়ের সাথেই থাকেন।
জাল দলি প্রসঙ্গে মধুপুর সাব-রেজিস্ট্রার রাহেনুল ইসলাম জানান,ফুফুর ওয়ারিশ দানপত্র দলিল হয়েছে। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি দলিলটি জাল নয়।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল জেলা রেজিস্ট্রার আব্দুস সালাম আজাদের মুঠোফেনে বাবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।