
পিলখানা হত্যায় খালাস পাওয়া কে এই তোরাব আলী?
একসঙ্গে এতো সেনা কর্মকর্তা হত্যার ঘটনা বিশ্বের ইতিহাসে নেই। তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) সদরদফতর পিলখানা কুখ্যাত এই হত্যাযজ্ঞের সাক্ষী। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) জওয়ানদের বিদ্রোহে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন।
আলোচিত ওই ঘটনায় জওয়ানদের বাইরে অভিযোগের তীর যায় দু’জন রাজনীতিবিদের দিকেও। এর মধ্যে বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু পরিচিত হলেও একেবারে অখ্যাত ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলী। দলটির স্থানীয় পর্যায়ের ওই নেতা পিলখানা হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় রাতারাতি আলোচনায় চলে আসেন।
ওই ঘটনায় ২০০৯ সালের ১ জুন তোরাব আলী ও পিন্টুকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর বিচারিক আদালতের রায়ে দু’জনই যাবজ্জীবন সাজা পান। পরে দণ্ড মাথায় নিয়ে কারাগারেই মৃত্যুবরণ করেন পিন্টু। তবে রোববার আপিলের রায়ে খালাস পেয়েছেন তোরাব আলী।
কে এই তোরাব আলী?
পীলখানা হত্যাযজ্ঞের আগে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতা ছিলেন তোরাব আলী। সাবেক ৪৮ নং ওয়ার্ডের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
এর আগে তিনি বিডিআরে কর্মকর্তা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। অবসর নেওয়ার পর সক্রিয় হন রাজনীতিতে।
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বিদ্রোহীদের সমর্থনে মিছিল বের করেছিলেন তোরাব আলী। এসময় তার ছেলে লেদার লিটনসহ স্থানীয়রাও ওই মিছিলে অংশ নেয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পিলখানার বাইরের সেই মিছিল ও সমাবেশ বন্ধ করে দেয়। এরপর তোরাব আলী ও তার ছেলে লেদার লিটনকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
পরে ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর বিচারিক আদালতের রায়ে বিডিআর হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতার অভিযোগে ৩০২ ধারায় তোরাব আলীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি তাকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়।
পিলখানার ঘটনায় তোরাব আলীর বিরুদ্ধে বিডিআরের একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে সুপরিকল্পিত এ বিদ্রোহের কথা তিনি আগেই জানতে পারেন বলে অভিযোগ ওঠে। ঘটনা জেনেও তা কর্তৃপক্ষকে না জানানোর অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ায় ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আখতারুজ্জামান বিচারিক আদালতে তাকে দণ্ড দিয়েছিলেন।
পরে ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি থেকে বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ (বৃহত্তর) বেঞ্চে মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়। চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল ৩৭০ কার্যদিবসে সেই শুনানি শেষ হয়। আর এর আপিলের রায়েই সোমবার খালাস পেলেন তোরাব আলী।