
প্রেমের মরা রেলে কাটে না: অলোচিত হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন
ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করে এলেও রংপুরের পীরগাছা উপজেলার কলেজছাত্র আল আমিন ওরফে নয়নকে (২২) নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। ২০১৪ সালের অলোচিত এ ঘটনার সাড়ে তিন বছর পর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) রংপুর।
শনিবার দুপুরে পিবিআই রংপুর অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পিবিআই রংপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহিদুল্লাহ কাওছার।
তিনি জানান, নয়নকে নৃশংসভাবে হত্যা করে ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে রেল লাইনে মরদেহ রেখে দিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচারণা চালানো হয়। এ ঘটনায় নিহত নয়নের বাবা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ২০১৪ সালের ১৪ এপ্রিল ছয়জনকে আসামি করে বোনারপাড়া রেলওয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি প্রথমে বোনারপাড়া রেলওয়ে পুলিশ, পরে সিআইডি এবং সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম তদন্ত করে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করে।
শহিদুল্লাহ কাওছার আরও জানান, পরবর্তীতে বাদীর নারাজীর প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত মামলাটি পিবিআই রংপুর জেলাকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। মামলাটির তদন্তভার পেয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক হোসেন আলী ঘটনার সাথে জড়িত এজাহারভুক্ত আসামি জুয়েলকে গত ২৩ নভেম্বর গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে নিজেকে ঘটনার সাথে জড়িয়ে অন্যান্য আসামিদের নাম প্রকাশসহ আদালতে দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরের দিন ২৪ নভেম্বর অপর আসামি তুষারকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত দুই আসামি হলেন- পীরগাছা থানাধীন তাম্বুলপুর গ্রামের মৃত জলিল ফকিরের ছেলে জুয়েল (২৮) এবং একই গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে তুষার (২২)।
ওই মামলার তদন্ত সূত্রে জানা যায়, নিহত নয়নের সঙ্গে একই থানার তাম্বুলপুর ফকিরপাড়া গ্রামের জলিল ফকিরের মেয়ে রুনির প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। বিষয়টি রুনির পরিবার মেনে নিতে পারেনি। এ কারণে ঘটনার বেশ কিছু দিন আগে থেকে আসামিরা নয়নকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল। ২০১৪ সালের ৬ এপ্রিল নয়ন গাইবান্ধা সরকারি কলেজ থেকে ছুটিতে বাড়িতে আসেন। ওইদিন রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে প্রেমিকা রুনি মোবাইলে নয়নকে তার বাড়িতে আসতে বললে নয়ন তার বন্ধু গ্রেপ্তারকৃত আসামি তুষারসহ তাদের বাড়িতে যায়।
সেখানে যাওয়ার পর জুয়েলসহ অন্যান্য আসামিরা তাদের দুজনকে একসাথে দেখতে পেয়ে নয়নকে আটক করে। পরে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে রুনির বাড়ি থেকে একটু দূরে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর নয়নকে গলা কেটে হত্যা করে আসামিরা। পরে ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে মরদেহ রেললাইনে ফেলে রাখে এবং ট্রেনে কাটা পড়লে সকলেই বাড়ি চলে যায়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন আছে এবং ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। তদন্তের স্বার্থে ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্য আসামিদের নাম পরিচয় প্রকাশ করেন নি তিনি।
নিহত নয়ন ওই উপজেলার সোনারায় গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে ও গাইবান্ধা সরকারি কলেজের অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।