182196

রংপুরকে হারিয়ে শীর্ষে খুলনা

শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১৫ রানের। উইকেটে তরুণ নাহিদুল ইসলাম ও অভিজ্ঞ রবি বোপারা। দুজনই খেলতে পছন্দ করেন দেখে শুনে। আগ্রাসী ব্যাটিং খুব কমই দেখা যায়। প্রথম বলে স্ট্রেইট ড্রাইভ করে ১ রান। দ্বিতীয় বলে একই ঢঙে খেলতে গিয়ে রান আউট নাহিদুল। উইকেটে আসেন থিসারা। ৪ বলে দরকার ১৪ রান। স্ট্রাইক প্রান্তে বোপারা। পেলেন ২ রান। পরের বলে ১। শেষ ২ বলে দরকার ১১ রান। জিততে হলে হাঁকাতে হবে ২টি বাউন্ডারি। কিন্তু পেরেরা পেলেন ১ রান। হার নিশ্চিত রংপুরের। উল্টো শেষ বলে উইকেট খুইয়ে আসেন বোপারা। ফলে ৯ রানের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে খুলনা টাইটান্স। পঞ্চম উইকেটে ১০০ রানের জুটির পরও হার দেখতে হলো রংপুরকে। এই জয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে গেলো মাহমুদউল্লাহর দল।
.
এদিন বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্ব শুরু হলো। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুক্রবারের প্রথম ম্যাচে ১৫৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারটা দেখেই খেলে রংপুর। দ্বিতীয় ওভারে হাত খুলতে গিয়েছিলেন ম্যাককালাম (২)। কিন্তু আসরের চমক আফিফ হোসেন ধ্রুবর বলে লং অনে আরিফুল হকের সহজ ক্যাচে পরিণত হন তিনি। পরের ওভারে নেই ক্রিস গেইলও। ইনফর্ম পেসার আবু জায়েদ রাহীর বলে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে আসেন গেইল। ৯ বলে করেছেন ১৬। ফলে চাপে পড়ে যায় মাশরাফির দল। এর পর সে চাপ আরও বাড়িয়ে তোলেন মিঠুন। মিড অনে ঠেলে দিয়ে কিছুটা অলস ঢঙেই দৌড়েছিলেন তিনি। তবে অলস ছিলেন না কার্লোস ব্র্যাথওয়েট। দারুণ থ্রোতে উইকেট ভাঙলে ৩ রান করে বিদায় নিতে হয় মিঠুনকে। এরপর দলকে হতাশ করেন এ ম্যাচেই সুযোগ পাওয়া ফজলে রাব্বিও (৬)।
তবে পঞ্চম উইকেটে তরুণ নাহিদুল ইসলামকে নিয়ে দারুণ এক জুটি গড়েন রবি বোপারা। নাহিদুলের এই আসরে প্রতম ম্যাচ এটি। এ দুই ব্যাটসম্যানের দায়িত্বশীল ব্যাটিং হাতাশা বাড়ায় খুলনার বোলারদের। তারা গড়েন ১০০ রানের জুটি। দারুণ এক ইনিংস খেলেন ২৪ বছরের নাহিদুল। নিজের তৃতীয় টি-টুয়েন্টি ম্যাচে খেলতে নেমে ঘরোয়া ক্রিকেটের অন্যতম এ পারফর্মার তুলে নেন ফিফটি। ৪৩ বলে ৭টি চারের সাহায্যে খেলেন ৫৮ রানের ইনিংস। হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন রবি বোপারাও। ৪৪ বলে ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় করেন ৫৯ রান। কিন্তু শেষ দিকে হাত না খুলে খেলতে পারায় হারের হতাশা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় দলটিকে। বৃথা যায় তাদের লড়াই। ৬ উইকেটে ১৪৯ রানে থামে দলটি।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নামে খুলনা। রংপুর রাইডার্স অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার করা ইনিংসের প্রথম ওভারে ১৩ রান তুলে নিয়ে তাদের শুরু। কিন্তু সোহাগ গাজীর বলে বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন রাইলি রুশো (১১)। এরপর দ্রুত ফিরে যান আফিফ হোসেন ধ্রুবও (৯)। এরপর তৃতীয় উইকেটে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে নাজমুল হোসেন শান্তর ২৫ রানের জুটি। প্রথম ওভারে ১৩ রান দেওয়ার পর ইনিংসের সপ্তম ওভারে সে জুটি ভাঙেন মাশরাফি। তৃতীয় বলেই শিকার করেন শান্তকে (২০)। চাপে পড়ে যায় খুলনা।
এরপর ক্যারিবিয়ান নিকোলাস পুরানকে নিয়ে দলের হাল ধরেন মাহমুদউল্লাহ। ৪৩ রানের জুটিও গড়েন। সে জুটি ভাঙ্গেন লাসিথ মালিঙ্গা। মোহাম্মদ মিঠুনের তালুবন্দি করে ফেরান পুরানকে (১৬)। তবে অপর প্রান্তে সাবলীল ব্যাটিং চালিয়ে যান মাহমুদউল্লাহ। এবারের আসরের চমক আরিফুল হকের সঙ্গে গড়েন ৩৮ রানের জুটি। ব্যক্তিগত ৫৯ রানে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে নাহিদুলের তালুবন্দি হন মাহমুদউল্লাহ। তবে ক্যাচটি নাহিদুলের নামের পাশে থাকলেও এর সম্পূর্ণ কৃতিত্বই ম্যাককালামের। লং অন থেকে মিড উইকেটের দিকে দৌড়ে এসে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচটি ধরে ফেলেছিলেন ম্যাককালাম। তবে শেষ মুহূর্তে শরীরের নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে ছুড়ে দেন নাহিদুলের কাছে। আর তাতেই শেষ হয় মাহমুদউল্লাহর বীরোচিত ইনিংস। ৩৬ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৫৯ রানের চোখজুড়ানো ইনিংস খেলেছেন।
মাহমুদউল্লাহর আউটের পর রুবেলের বলে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে পড়ে ফিরে যান আরিফুল হক (১৬)। বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি গত টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের বিস্ময় কার্লোস ব্র্যাথওয়েটও (১১)। ফলে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৫৮ রান করে দলটি। রংপুরের পক্ষে ৩৫ রানের খরচায় ৩টি উইকেট নিয়েছেন রুবেল। মালিঙ্গা ২টি উইকেট পান ২৭ রানের খরচায়। এছাড়া ১টি করে উইকেট পেয়েছেন মাশরাফি, গাজী ও থিসারা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
খুলনা টাইটান্স : ২০ ওভারে ১৫৮/৮ (শান্ত ২০, রুশো ১১, আফিফ ৯, মাহমুদউল্লাহ ৫৯, পুরান ১৬, আরিফুল ১৬, ব্রাথওয়েট ১১, আর্চার ১০*, জুনায়েদ ১, তানভীর ০*; মাশরাফি ১/৩২, গাজী ১/৩০, রুবেল ৩/৩৫, মালিঙ্গা ২/২৭, পেরেরা ১/৩০)।

রংপুর রাইডার্স : ২০ ওভারে ১৪৯/৬ (গেইল ১৬, ম্যাককালাম ২, মিঠুন ৩, বোপারা ৫৯, রাব্বি ৬, নাহিদুল ৫৮, পেরেরা ১*; জায়েদ ১/৪৮, আফিফ ২/৪, জুনায়েদ ১/২০, আর্চার ০/৩৩, ব্রেথওয়েট ০/৩৩, তানভীর ০/৯)।

ফলাফল : রংপুর রাইডার্স ৯ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

ad

পাঠকের মতামত