
যে কারণে আক্ষেপ প্রকাশ করলেন বারী সিদ্দিকীর ছেলে
‘রাজনৈতিক দলের সংস্কৃতি সংশ্লিষ্ট কিংবা সাংস্কৃতিক সংগঠন গুলোর নেতৃবৃন্দ কেউ কি তার খোঁজ নিতে এসেছিলেন?’ প্রশ্নে বারী সিদ্দিকীর বড় ছেলে সাব্বির সিদ্দিকী বলেছেন, ‘সংস্কৃতি মন্ত্রী আর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল বাবাকে দেখতে এসেছিলেন। শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী দেখে গিয়েছেন। আর জাতীয় জাদুঘরের মহা পরিচালক ফয়জুল লতিফ খান দেখেও গেছেন পাশাপাশি সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছেন। এদের বাইরে ‘জলের গান’ এর রাহুল আনন্দ এবং তার স্ত্রী, যারা আমাদের পরিবারের সদস্য বলে আমি ভাবি। কারণ রাহুল দা বাবার শিষ্য। এছাড়া আর কাউকে দেখিনি।’
সংষ্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর রাতে দেখে যান অসুস্থ শিল্পীকে। শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী মঙ্গলবার দেখে গেছেন তাকে। জাদুঘরের মহাপরিচালকও মঙ্গলবার হাসপাতালে এসে খোঁজ নেন বারী সিদ্দিকীর। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংষ্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল বুধবার সকালে এবং তার আগে দুই বার এসে দেখে গেছেন আইসিইউতে ভর্তি শিল্পীকে।
বিএনপি কিংবা বাম দলের বা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, উদীচী বা গণশিল্পী সংস্থার মত সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় বা সাংস্কৃতিক নেতৃত্ব কি তাকে দেখতে এসেছেন বা খোঁজ খবর নিতে এসেছেন? প্রশ্নে সাব্বির সিদ্দিকী আক্ষেপ মাখানো স্বরে বলেন, ‘আসলে এটা নিয়ে বলার পরিস্থিতিতে নাই। জোর করে ভালোবাসার জায়গাতো হয় না। তারা সময় পেলে হয়ত আসবেন। খোঁজখবর নেবেন। শুধু আমাদের জন্য দোয়া করেন। আপনাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ যেভাবে সারাক্ষণ পাশে থাকছেন সেজন্য।’
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘সেভাবে বলতে গেলে আমি এভবে ভাবিনি। নিজের জায়গা থেকে দেখতে এসেছিলাম তাকে। ধানমন্ডিতে থাকি দুজন। তাই।’ রাষ্ট্রীয়ভাবে কেবল অসুস্থতায় বা কোন বিশেষ কারণে শিল্পীকে সহায়তা না করে, শিল্পী কল্যাণে আলাদা রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ দরকার কিনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘হলে তো খারাপ হয় না। তবে সরকার নিশ্চয় এটি ভালো বোঝে।’ শিল্পীর পাশে দাড়াতেও মতাদর্শিক প্রশ্ন ওঠে কেন বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি হওয়া উচিত না। তবে আমাদের দেশটা এত রাজনৈতিক যে বিভাজনটা হয়ে যায়।’
জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে জড়িত ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ খ্যাত গীতিকার জাসাস নেতা গাজী মাজহারুল আনোয়ার চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আমাদের দেশে সংস্কৃতির বিশালতাকে বা সংস্কৃতিজনকে রাজনৈতিক মানদন্ডে বিচারের প্রবণতা সবসময় দুঃখজনক। মতাদের্শ থাকবেই। সে বিচারে বিচার্য করা উচিত নয় সংস্কৃতিকে। একজন বারী সিদ্দিকী যে নিজেকে নিজে তৈরী করেছে, আজকের জায়গায় উঠিয়েছে তার কাছে সবার যাওয়া উচিত। আমার নিজের শরীর খারাপ তবুও তার খোঁজ রাখছি। সশরীরে যাওয়ার চেষ্টা করব। আরেকটি বিষয় হল, রাষ্ট্রের একটি আলাদা ফান্ড থাকা উচিত শিল্পীদের জন্য। সেটা যে সরকারই থাকুক তাদের উচিত এটা তৈরী করা।
উদীচীর সহসভাপতি মাহমুদ সেলিম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘আমি যদিও গান বাংলা চ্যানেল দলের সঙ্গে গিয়েছিলাম। তবে সে পরিচয়ে নয় বরং উদীচীর পরিচয়টি আমি ধারণ করি।
‘খরচ নির্বাহ কি নিজেরা চালিয়ে নিচ্ছেন?’ প্রশ্নে সাব্বির বলেন, ‘আল্লাহ এখনও তৌফিক দিয়ে চলেছেন। তার আয় দিয়ে তিনি চলছেন। এটা যেন চলতে পারি সেই দোয়া করবেন। তারপরও কোন প্রয়োজন হলে আপনারা আছেন। সংস্কৃতি মন্ত্রী আছেন। সর্বশেষ প্রধাণমন্ত্রীতো আছেনই।’
রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে গত ১৭ নভেম্বর থেকে ভর্তি রয়েছেন ‘পূবালী বাতাসে’র শিল্পী খ্যাতিমান বংশীবাদক বারী সিদ্দিকী। তাকে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয়েছে। ওইদিন রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হন বারী সিদ্দিকী। পরে মাঝরাতে তাকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
হাসপাতালে তিনি নেফ্রোলজি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আবদুল ওহাব খানের তত্বাবধানে চিকিৎসাধীন আছেন। চিকিৎসকদের মতে, তার দুটি কিডনি অকার্যকর। বহুমূত্র রোগেও ভুগছেন তিনি।
১৯৯৯ সালে হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবিতে গান গেয়ে সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন দীর্ঘদিন ধরে বাঁশি বাজানো বারী সিদ্দিকী।তার জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘সুয়াচান পাখি আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছ নাকি’, ‘পুবালি বাতাসে’, ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’, ‘ওলো ভাবিজান নাউ বাওয়া’, ‘মানুষ ধরো মানুষ ভজো’ ইত্যাদি।